প্রাচীন মূর্তির হঠাৎ রূপান্তর
স্পেনের সেভিয়ার বিখ্যাত বাসিলিকা দে লা মাকারেনায় রাখা ভার্জিন মেরির কাঠের মূর্তিটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ভক্তির প্রতীক। স্থানীয়ভাবে এটি শুধু ‘মাকারেনা’ নামেই পরিচিত। সম্প্রতি এই মূর্তির পুনর্নির্মাণ বা হালকা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সংস্কারের পর মূর্তির চেহারায় বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা গেলে তা নিয়ে সেভিয়ায় তীব্র বিতর্ক শুরু হয়।
নতুন রূপ ও সমালোচনা
সংস্কারের পর মাকারেনার চোখে দেখা যায় লম্বা পাপড়ি, ধোঁয়াটে দৃষ্টি, এবং ত্বক ও নাকের গঠনে পরিবর্তন। ভক্তরা বলছেন, মূর্তিটি যেন মেকআপ করা হয়েছে। দীর্ঘদিনের ভক্ত সালভাদর ফের্নান্দেজ আক্ষেপ করে বলেন, “এটি ভালো কাজ হয়নি।” তার স্ত্রী কনসুয়েলো মুর্গা আরও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “মাকারেনাকে সাজানো যায় না!”

ভক্ত ও স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাব
এই ঘটনাটি কেবল একটি “অসফল মেকওভার” নয়, বরং সেভিয়ার গ্রীষ্মকালীন বড় কেলেঙ্কারিতে পরিণত হয়েছে। ১৮ হাজার সদস্যবিশিষ্ট ধর্মীয় ভ্রাতৃত্ব সংগঠনের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে। উত্তর স্পেনের মানুষ এ নিয়ে সেভিয়ার সংস্কৃতি নিয়ে বিদ্রূপ করায় স্থানীয় ক্ষোভ আরও বেড়েছে। উল্লেখযোগ্য হলো, ডানপন্থী রাজনীতির সমর্থক থেকে শুরু করে ড্র্যাগ কুইন সংস্কৃতির অনুরাগী পর্যন্ত—সবাই মাকারেনার মর্যাদা রক্ষায় একজোট হয়েছেন।
সংস্কারের পরিকল্পনা ও বিপত্তি
প্রথমে ভ্রাতৃত্ব সংগঠন সেভিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ অধ্যাপক ফ্রান্সিসকো আর্কিয়োকে হালকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব দেয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই মূর্তিতে কাজ করায় তাকে “ভার্জিনের ডাক্তার” বলা হয়। তিনি হালকা দাগ মোছা, চোখের পানি ও পাপড়ির পরিদর্শন এবং ত্বক পরিষ্কারের প্রস্তাব দেন। তার ছেলে ডেভিড আর্কিয়ো, যিনি নিজেও পুনর্নির্মাণের অধ্যাপক, সহযোগিতা করেন।
কিন্তু মূর্তি পুনঃস্থাপনের পর দেখা যায় চোখের পাপড়ি ও অভিব্যক্তিতে অস্বাভাবিক পরিবর্তন। এরপর ভ্রাতৃত্ব সংগঠন তড়িঘড়ি করে গির্জা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, যা আরও বড় বিপত্তি ডেকে আনে।

ভক্তদের প্রতিক্রিয়া ও জরুরি পদক্ষেপ
২১ জুলাই মূর্তিটি জনসম্মুখে আনার পর ভক্তরা বিস্মিত হয়ে প্রতিক্রিয়া জানান। অনেকেই গির্জায় ভিড় জমায়। এক তরুণ ভক্ত জর্জে পুলগার বলেন, “মা, তোমার কী হলো?” তৎক্ষণাৎ গির্জা বন্ধ করে বিশেষজ্ঞদের ডাকা হয়—চোখের পাপড়ি বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে কৃত্রিম চুল বসানোর কারিগর পর্যন্ত। কিন্তু পরিবর্তনের পরও ভক্তরা অসন্তুষ্ট ছিলেন।
সংঘর্ষ ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব
পরবর্তী বৈঠকগুলোতে অনেক সদস্য অভিযোগ তোলেন, হয়তো নির্বাচনী সুবিধা নেওয়ার জন্য ভ্রাতৃত্ব সংগঠনের নেতারা দ্রুত সংস্কার শেষ করতে চেয়েছিলেন। এর ফলে ভেতরে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়ে। ২৯ জুলাইয়ের বৈঠকে ১,৮০০-রও বেশি সদস্য উপস্থিত ছিলেন। প্রবীণ নেতা ফের্নান্দেজ কাব্রেরো অনুতাপ প্রকাশ করলেও অনেক সদস্য তার পদত্যাগ দাবি করেন।
বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন
সভায় সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ পেদ্রো মানসানো বেলত্রান এক্স-রে ছবির মাধ্যমে দেখান, মূর্তির চেহারায় রং ও পাপড়ি বসানোর ক্ষেত্রে ভুল করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গভীর সমস্যা থাকতে পারে, এমনকি পোকামাকড়ের ক্ষতিও দেখা গেছে। অধ্যাপক আর্কিয়ো ও তার ছেলে অবশ্য তাদের কাজের পক্ষে যুক্তি দেন।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
শেষ পর্যন্ত সদস্যরা আরেক দফা পুনর্নির্মাণের পক্ষে ভোট দেন, যা শিগগিরই শুরু হওয়ার কথা। এদিকে সেভিয়ায় ভক্তরা আবারও মাকারেনাকে দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন। স্থানীয় এক বারমালিক সার্জিও বারমুদেস বলেন, “এখন দরকার মাকারেনার মুখ ঠিক করা, অপরাধী খোঁজা নয়।”
ভবিষ্যতের আশা
গির্জার পুরোহিত আমাদোর দোমিনগেজ আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, “যেভাবে চিকিৎসকরা মুখের অস্ত্রোপচার করেন, পুনর্নির্মাণকারীরাও তেমন দক্ষভাবে মূর্তিকে আগের রূপে ফিরিয়ে দিতে পারবেন।”
এই ঘটনা শুধু একটি শিল্পকর্মের নয়, বরং সেভিয়ার সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় আবেগের গভীরতা কতটা প্রবল তা আবারও প্রমাণ করেছে।


সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















