০২:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
শীতেও কমছে না দাম: খুলনার কাঁচা বাজারে নতুন করে দাম বেড়েছে মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্ট—বাংলাদেশের বিশেষ সম্মাননা চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি দখল বাড়ছে: নিয়ন্ত্রণ হারানোর শঙ্কা তীব্র যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের জন্য যে ধ্বংসাত্মক কৌশল বানিয়েছিল, এখন তার শিকার নিজেই যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি করবে: ট্রাম্প যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের ওপর কঠোরতা বাড়ছে ট্রাম্পের শুল্ক সিদ্ধান্ত ১০০ কোটি ডলারের ফিলিপাইনি কৃষিপণ্যে ‘পারস্পরিক’ শুল্ক বাদ তাইওয়ানে প্রাক্তন টিএসএমসি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তদন্ত রাশিয়ার ড্রোন-কেন্দ্রিক সামরিক নীতি: আধুনিক যুদ্ধের নতুন মানদণ্ড এসসিও বৈঠকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা’র আহ্বান ভারতের

জলবায়ু পরিবর্তনে বাড়ছে মশাবাহিত রোগের ঝুঁকি

বিশ্ব মশা দিবস ও ঐতিহাসিক আবিষ্কার
প্রতিবছর ২০ আগস্ট পালিত হয় বিশ্ব মশা দিবস। ১৮৯৭ সালের এই দিনে ব্রিটিশ চিকিৎসক স্যার রোনাল্ড রস প্রমাণ করেন যে ম্যালেরিয়ার জীবাণু প্লাজমোডিয়াম মশার মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এই আবিষ্কার মশাবাহিত রোগ নিয়ে আধুনিক গবেষণার সূচনা ঘটায় এবং রোগ নিয়ন্ত্রণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। তাঁর অবদানের জন্য ১৯০২ সালে তিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

মশা: বিশ্বের ভয়াবহতম ঘাতক
মশা মানুষের মৃত্যুর অন্যতম বড় কারণ হিসেবে বিবেচিত। প্রতিবছর কোটি কোটি মানুষ ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা, ইয়েলো ফিভার, জাপানিজ এনকেফালাইটিস, ফাইলেরিয়া ও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়াই সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর জন্য দায়ী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মশাবাহিত রোগ বিশ্ব জনস্বাস্থ্যের বড় হুমকি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর বিরাট চাপ সৃষ্টি করছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
জলবায়ু পরিবর্তন শুধু পরিবেশ নয়, মশাবাহিত রোগের বিস্তারকেও ত্বরান্বিত করছে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধি: উষ্ণ আবহাওয়ায় মশার প্রজনন দ্রুত হয় এবং ভাইরাসও দ্রুত বৃদ্ধি পায়। আগে ঠান্ডা এলাকায় মশা টিকতে পারত না, এখন সেখানে মশার জন্ম হচ্ছে।

বৃষ্টিপাতের ধরন বদল: অতিরিক্ত বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়, যা মশার প্রজননক্ষেত্র। আবার দীর্ঘ বর্ষা প্রজননের মৌসুম বাড়িয়ে দেয়। খরার সময় পানি সংরক্ষণ করলেও এডিস মশার জন্ম বেড়ে যায়।

আর্দ্রতা বৃদ্ধি: মশার ডিম ও লার্ভার বেঁচে থাকার হার বাড়ে এবং সংক্রমণের সময়কাল দীর্ঘ হয়।

অপরিকল্পিত নগরায়ণ, খারাপ ড্রেনেজ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও মশার বিস্তারে বড় ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশে পরিস্থিতি
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। উষ্ণ-আর্দ্র আবহাওয়া ও মৌসুমি বৃষ্টিপাত এমনিতেই মশার জন্য অনুকূল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অনিয়মিত বর্ষা ও চরম আবহাওয়ার ফলে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ ভয়াবহভাবে বেড়েছে।

আগে ডেঙ্গু শুধু বর্ষায় দেখা দিত, এখন সারা বছরই হচ্ছে।

ম্যালেরিয়া ও ফাইলেরিয়াও নতুন এলাকায় মাথাচাড়া দিচ্ছে।

ঢাকাসহ বড় শহরে জনসংখ্যার ঘনত্ব, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও প্লাস্টিক বর্জ্য সমস্যাকে আরও জটিল করছে।

স্বাস্থ্য খাতের চ্যালেঞ্জ
তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মশার জীবনচক্র সংক্ষিপ্ত হচ্ছে এবং ভাইরাস দ্রুত বাড়ছে। পাহাড়ি ও সীমান্ত এলাকায় আবার ম্যালেরিয়া বেড়ে চলেছে। শহরে জমে থাকা পানি, ভবনের ছাদ, ফুলের টব ও প্লাস্টিক বোতল মশার জন্মস্থল হয়ে উঠছে।

করণীয় ও সমাধান
শুধু কীটনাশক ছিটিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ—

পরিবেশবান্ধব দমনপদ্ধতি

ভেক্টর ব্যবস্থাপনা

জনসচেতনতা বৃদ্ধি

বর্জ্য ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন

শহর পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তন বিবেচনা

নাগরিক অংশগ্রহণের প্রয়োজন
মশা নিয়ন্ত্রণ কেবল সরকারের দায়িত্ব নয়। স্কুল-কলেজে সচেতনতামূলক কর্মসূচি, গণস্বাস্থ্য প্রচারণা, কমিউনিটি ক্লিন-আপ ক্যাম্পেইন এবং গবেষণা প্রচারের মাধ্যমে নাগরিকদের সম্পৃক্ত করতে হবে।


বিশ্ব মশা দিবস কেবল ইতিহাস স্মরণ নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তা। মশার বিরুদ্ধে লড়াই মানে মানবস্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশের সুরক্ষা। বৈজ্ঞানিক গবেষণা, নীতি গ্রহণ ও জনসম্পৃক্ততার সমন্বিত প্রয়াস ছাড়া এ সংকট মোকাবেলা সম্ভব নয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

শীতেও কমছে না দাম: খুলনার কাঁচা বাজারে নতুন করে দাম বেড়েছে

জলবায়ু পরিবর্তনে বাড়ছে মশাবাহিত রোগের ঝুঁকি

১২:৪৮:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

বিশ্ব মশা দিবস ও ঐতিহাসিক আবিষ্কার
প্রতিবছর ২০ আগস্ট পালিত হয় বিশ্ব মশা দিবস। ১৮৯৭ সালের এই দিনে ব্রিটিশ চিকিৎসক স্যার রোনাল্ড রস প্রমাণ করেন যে ম্যালেরিয়ার জীবাণু প্লাজমোডিয়াম মশার মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এই আবিষ্কার মশাবাহিত রোগ নিয়ে আধুনিক গবেষণার সূচনা ঘটায় এবং রোগ নিয়ন্ত্রণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। তাঁর অবদানের জন্য ১৯০২ সালে তিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

মশা: বিশ্বের ভয়াবহতম ঘাতক
মশা মানুষের মৃত্যুর অন্যতম বড় কারণ হিসেবে বিবেচিত। প্রতিবছর কোটি কোটি মানুষ ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা, ইয়েলো ফিভার, জাপানিজ এনকেফালাইটিস, ফাইলেরিয়া ও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়াই সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর জন্য দায়ী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মশাবাহিত রোগ বিশ্ব জনস্বাস্থ্যের বড় হুমকি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর বিরাট চাপ সৃষ্টি করছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
জলবায়ু পরিবর্তন শুধু পরিবেশ নয়, মশাবাহিত রোগের বিস্তারকেও ত্বরান্বিত করছে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধি: উষ্ণ আবহাওয়ায় মশার প্রজনন দ্রুত হয় এবং ভাইরাসও দ্রুত বৃদ্ধি পায়। আগে ঠান্ডা এলাকায় মশা টিকতে পারত না, এখন সেখানে মশার জন্ম হচ্ছে।

বৃষ্টিপাতের ধরন বদল: অতিরিক্ত বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়, যা মশার প্রজননক্ষেত্র। আবার দীর্ঘ বর্ষা প্রজননের মৌসুম বাড়িয়ে দেয়। খরার সময় পানি সংরক্ষণ করলেও এডিস মশার জন্ম বেড়ে যায়।

আর্দ্রতা বৃদ্ধি: মশার ডিম ও লার্ভার বেঁচে থাকার হার বাড়ে এবং সংক্রমণের সময়কাল দীর্ঘ হয়।

অপরিকল্পিত নগরায়ণ, খারাপ ড্রেনেজ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও মশার বিস্তারে বড় ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশে পরিস্থিতি
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। উষ্ণ-আর্দ্র আবহাওয়া ও মৌসুমি বৃষ্টিপাত এমনিতেই মশার জন্য অনুকূল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অনিয়মিত বর্ষা ও চরম আবহাওয়ার ফলে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ ভয়াবহভাবে বেড়েছে।

আগে ডেঙ্গু শুধু বর্ষায় দেখা দিত, এখন সারা বছরই হচ্ছে।

ম্যালেরিয়া ও ফাইলেরিয়াও নতুন এলাকায় মাথাচাড়া দিচ্ছে।

ঢাকাসহ বড় শহরে জনসংখ্যার ঘনত্ব, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও প্লাস্টিক বর্জ্য সমস্যাকে আরও জটিল করছে।

স্বাস্থ্য খাতের চ্যালেঞ্জ
তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মশার জীবনচক্র সংক্ষিপ্ত হচ্ছে এবং ভাইরাস দ্রুত বাড়ছে। পাহাড়ি ও সীমান্ত এলাকায় আবার ম্যালেরিয়া বেড়ে চলেছে। শহরে জমে থাকা পানি, ভবনের ছাদ, ফুলের টব ও প্লাস্টিক বোতল মশার জন্মস্থল হয়ে উঠছে।

করণীয় ও সমাধান
শুধু কীটনাশক ছিটিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ—

পরিবেশবান্ধব দমনপদ্ধতি

ভেক্টর ব্যবস্থাপনা

জনসচেতনতা বৃদ্ধি

বর্জ্য ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন

শহর পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তন বিবেচনা

নাগরিক অংশগ্রহণের প্রয়োজন
মশা নিয়ন্ত্রণ কেবল সরকারের দায়িত্ব নয়। স্কুল-কলেজে সচেতনতামূলক কর্মসূচি, গণস্বাস্থ্য প্রচারণা, কমিউনিটি ক্লিন-আপ ক্যাম্পেইন এবং গবেষণা প্রচারের মাধ্যমে নাগরিকদের সম্পৃক্ত করতে হবে।


বিশ্ব মশা দিবস কেবল ইতিহাস স্মরণ নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তা। মশার বিরুদ্ধে লড়াই মানে মানবস্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশের সুরক্ষা। বৈজ্ঞানিক গবেষণা, নীতি গ্রহণ ও জনসম্পৃক্ততার সমন্বিত প্রয়াস ছাড়া এ সংকট মোকাবেলা সম্ভব নয়।