আম বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ও সুস্বাদু ফল। ইতিহাসবিদ ও উদ্ভিদবিদদের মতে, আমের উৎপত্তি প্রায় ৪,০০০ বছরেরও বেশি আগে দক্ষিণ এশিয়ায়। বিশেষত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, মিয়ানমার (বার্মা) ও বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকা আম গাছের প্রাচীনতম জন্মভূমি হিসেবে চিহ্নিত। প্রাচীন শাস্ত্র, বিশেষত উপনিষদ ও পুরাণে আমের উল্লেখ পাওয়া যায়, যা এর ঐতিহাসিক গুরুত্বকে প্রমাণ করে।
ভারতীয় উপমহাদেশে আমের আগমন ও চাষ
যদিও আমের উৎপত্তি ভারতীয় উপমহাদেশেই, তবে এর নিয়মিত চাষ শুরু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব যুগ থেকেই। মৌর্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময় আম ছিল রাজকীয় ফল। সম্রাট আকবর রাজস্থানের লখনৌতে “লাখি বাগ” নামক একটি বাগান তৈরি করেছিলেন, যেখানে এক লাখ আম গাছ লাগানো হয়েছিল বলে জানা যায়।

আমের বিস্তার সারা বিশ্বে
আম প্রথম ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে পারস্য ও আরব অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। আরব ব্যবসায়ীরা সপ্তম শতাব্দীতে আমকে মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে যান। পরবর্তীকালে পর্তুগিজরা ১৬শ শতকে আমকে আফ্রিকা, ব্রাজিল ও অন্যান্য উপনিবেশে নিয়ে যায়। এইভাবেই আম ধীরে ধীরে ইউরোপ ও আমেরিকার কিছু অংশেও পরিচিত হয়। বর্তমানে বিশ্বে ১০০টিরও বেশি দেশে আম চাষ হয়।
আমের ঋতু ও বৃদ্ধি
ভারতীয় উপমহাদেশে গ্রীষ্মকাল আমের মূল ঋতু। মার্চ থেকে জুন মাসের মধ্যে গাছে আম ফুল ফোটে এবং মে থেকে জুলাই পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা হয়। বাংলাদেশের রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, ভারতের উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মহারাষ্ট্র এবং পাকিস্তানের সিন্ধ ও পাঞ্জাব অঞ্চল আম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।

শুধু ফল নয় সংস্কৃতিরও অঙ্গ
আম শুধু একটি ফল নয়, বরং এটি ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। এর উৎপত্তি এ অঞ্চলে হলেও এখন এটি বিশ্বের মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয়। হাজার বছরের ঐতিহ্য বহনকারী এই ফল এখনও দক্ষিণ এশিয়ার গ্রীষ্মকালীন জীবনের অন্যতম প্রতীক।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















