অনলাইন বৈঠক ও কূটনৈতিক চাপ
রবিবার রাতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা ইউক্রেন ইস্যুতে “ইচ্ছুকদের জোট”-এর অনলাইন বৈঠকে যোগ দেন। এই জোটে থাকা দেশগুলো রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। বৈঠকের পর টোকিও উদ্বিগ্নভাবে লক্ষ্য করছিল, কারণ সোমবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শান্তি আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন। দ্রুত কোনো সমঝোতা হলে তার বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে জাপান এবং এশিয়ার ওপর।
ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের পর নতুন পরিস্থিতি
এর আগে আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প হঠাৎ করে অবস্থান বদলান। তিনি আর শুধু যুদ্ধবিরতি চাননি, বরং জেলেনস্কিকে দ্রুত শান্তি চুক্তি করতে চাপ দেন, যাতে ইউক্রেনকে ব্যাপক ভূখণ্ড ছাড়তে হয় এবং এর বিনিময়ে একটি অস্পষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।
ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলেন, “ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট চাইলে সঙ্গে সঙ্গেই যুদ্ধ শেষ করতে পারেন। কিন্তু না চাইলে লড়াই চালিয়ে যাবেন।” তিনি আরও বলেন, “রাশিয়া একটি বিশাল শক্তি, আর ইউক্রেন সে শক্তি নয়।”

জাপানের উদ্বেগ: আঞ্চলিক প্রভাব
জাপান দীর্ঘদিন ধরে বলছে, নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা জরুরি। বলপ্রয়োগ করে সীমান্ত পরিবর্তনের যেকোনো প্রচেষ্টা তারা নিন্দা করে আসছে, যা মূলত চীনের উদ্দেশে ইঙ্গিত। ইশিবা বৈঠকে বলেন, “সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা সম্পর্কিত বিষয়গুলো অবশ্যই আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত রাখতে হবে।”
কিন্তু বৈঠকের পর প্রকাশিত বিবৃতিতে এই ভাষা বাদ দেওয়া হয়। পরিবর্তে কিয়েভের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ও সমর্থনের ওপর জোর দেওয়া হয়। এটি টোকিওর জন্য অস্বস্তির কারণ হয়।
চীন ও উত্তর কোরিয়ার প্রসঙ্গ
ইউক্রেন যুদ্ধ জাপানের মনে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তাদের আশঙ্কা, শক্তিশালী সামরিক ক্ষমতা থাকা চীন মস্কোর মতোই তাইওয়ান দখলের পথে যেতে পারে। একই সঙ্গে রাশিয়ার পক্ষে উত্তর কোরিয়ার অংশগ্রহণ এশিয়ায় আরেকটি অশান্তির যোগসূত্র তৈরি করেছে। এতে পিয়ংইয়ং উন্নত অস্ত্র এবং যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা পাচ্ছে।

ইউরোপ-ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তার সংযোগ
জাপান সরকার বারবার বলছে, ইউরোপের নিরাপত্তা ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। ইশিবার ভাষায়, “আজ ইউক্রেন, আগামীকাল হয়তো পূর্ব এশিয়া।” এজন্য জাপান অন্য দেশগুলোর সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে, যাতে এশিয়ায় নিরাপত্তার ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্র-জাপান সম্পর্কের টানাপোড়েন
তবে কূটনৈতিক অগ্রযাত্রার ভেতর আরেকটি চাপ স্পষ্ট হচ্ছে—টোকিওর সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক। জাপানের নিরাপত্তা যুক্তরাষ্ট্র-নির্ভর হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। ট্রাম্পের শুল্কের হুমকি, প্রতিরক্ষা খরচ ভাগাভাগি এবং হঠাৎ চাপ সত্ত্বেও জাপানকে সতর্কভাবে সমালোচনার ভারসাম্য রক্ষা করতে হচ্ছে, যাতে ওয়াশিংটনের ক্ষোভ না বাড়ে।
দ্রুত কোনো শান্তি চুক্তি হলে তা শুধু ইউক্রেন বা ইউরোপের নয়, বরং এশিয়ার ভূরাজনীতিতেও গভীর প্রভাব ফেলবে। জাপান এখন দ্বিধার মধ্যে — একদিকে শান্তির আশা, অন্যদিকে আশঙ্কা যে এ ধরনের সমঝোতা ভবিষ্যতে চীন বা উত্তর কোরিয়ার মতো শক্তিগুলোকে সাহসী করে তুলতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















