০১:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
বিপিএল শুরুর আগের দিনই চট্টগ্রাম রয়্যালসের মালিকানা ছাড়লেন মালিক পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ায় পুলিশে হামলার নিন্দা সৌদি আরবের বড়দিনের আগের রাতে শিশুদের ঘুম নিশ্চিত করবেন যেভাবে, আনন্দও থাকবে অটুট দুর্ঘটনায় দরজা নিয়ে প্রশ্নে টেসলা মডেল থ্রি তদন্তে যুক্তরাষ্ট্র অ্যাপলের প্রধানের বিনিয়োগে নাইকের ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা বছরের শেষ দিন পর্যন্ত সৌদির নানা অঞ্চলে বৃষ্টির পূর্বাভাস শীতের আকাশে তারা কেন বেশি উজ্জ্বল দেখায়, জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা জ্বলন্ত বাস থেকে ছয় শিক্ষিকাকে টেনে বের করলেন সৌদি তরুণ, অল্পের জন্য প্রাণরক্ষা গরুর মাংসের দাম কমানোর চাপ ট্রাম্পের, ক্ষুব্ধ খামারিরা বলছেন সমর্থন আছে কিন্তু আনন্দ নেই রাজধানী হাই স্কুলে নগর কৃষি মেলা

চীনের পিএইচএল-১৬: যুক্তরাষ্ট্রের হিমারস সিস্টেমের জবাব

তাইওয়ান প্রণালীতে উত্তেজনা ও চীনের প্রস্তুতি
তাইওয়ান প্রণালী ঘিরে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বেইজিং সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে নতুন অস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করছে। এসবের মধ্যে অন্যতম হলো পিএইচএল-১৬ (PHL-16), একটি ট্রাক-মাউন্টেড, স্বচালিত মাল্টিপল রকেট লঞ্চার, যা মডুলার নকশা ও দীর্ঘ পাল্লার সুনির্দিষ্ট আঘাত করার ক্ষমতা বহন করে।

উন্নয়ন ও নকশা
চীনের প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান নরিনকো (Norinco) পিএইচএল-১৬ তৈরি করেছে। এটি চীনের সর্বাধুনিক এমআরএল (Multiple Rocket Launcher) সিস্টেম হিসেবে বিবেচিত। ২০১৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সামরিক কুচকাওয়াজে প্রথম প্রকাশ্যে প্রদর্শিত হয়।

এটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ মিটার, প্রস্থ ৩ মিটার এবং উচ্চতাও প্রায় ৩ মিটার। আট ব্যারেল বিশিষ্ট এ লঞ্চার তিনজন ক্রু দ্বারা পরিচালিত হয়। এটি একটি বিশেষ ভারী WS2400 8×8 ট্রাকে স্থাপিত, ফলে সহজে মোতায়েন ও পুনর্মোতায়েন করা যায় এবং শত্রুর পাল্টা আক্রমণ এড়ানো সম্ভব হয়।

মডুলার নকশার কারণে এটি বিভিন্ন ক্যালিবার ও পাল্লার রকেট নিক্ষেপ করতে সক্ষম, যা একক প্ল্যাটফর্ম থেকে নানামুখী আক্রমণ চালানোকে সহজ করে।

আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পিএইচএল-১৬ এর ১২০টিরও বেশি ইউনিট চীনের বিভিন্ন সামরিক কমান্ডে মোতায়েন রয়েছে।

প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য
পিএইচএল-১৬ তার পূর্বসূরিদের তুলনায় অনেক উন্নত। যেখানে পুরনো মডেল নির্দিষ্ট ধরনের গোলাবারুদে সীমাবদ্ধ ছিল, সেখানে পিএইচএল-১৬ স্বয়ংক্রিয়ভাবে রকেট ও মিসাইলের মধ্যে পরিবর্তন করতে পারে।

৩০০ মিমি রকেট: সর্বোচ্চ ১৩০ কিমি পাল্লা

৩৭০ মিমি রকেট: সর্বোচ্চ ৩০০ কিমি পাল্লা

৭৫০ মিমি “ফায়ার ড্রাগন ৪৮০” ট্যাকটিক্যাল ব্যালিস্টিক মিসাইল: সর্বোচ্চ ৫০০ কিমি পাল্লা

প্রয়োজন অনুযায়ী এটি হয় আটটি ৩৭০ মিমি গাইডেড রকেট অথবা দুটি ৭৫০ মিমি ব্যালিস্টিক মিসাইল বহন করতে পারে। গাইডেড রকেটগুলো শত্রুপক্ষের পদাতিক, হালকা সাঁজোয়া যান ও আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করতে কার্যকর। অপরদিকে ফায়ার ড্রাগন মিসাইল উচ্চমূল্যের লক্ষ্যবস্তু—যেমন শত্রুর কমান্ড সেন্টার ও সামরিক ঘাঁটি—ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়।

এটির ট্রাকচ্যাসিস ৮০ কিমি/ঘণ্টা গতি তুলতে সক্ষম এবং অফ-রোডেও সহজে চলতে পারে। ফলে আঘাত হানার পর দ্রুত অবস্থান পরিবর্তন করে পাল্টা আক্রমণ এড়ানো সম্ভব।

মোতায়েন ও সামরিক মহড়া
বেইজিং পিএইচএল-১৬ এর নির্দিষ্ট ঘাঁটি প্রকাশ করে না, তবে জানা গেছে এটি পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ডের ৭১তম, ৭২তম ও ৭৩তম গ্রুপ আর্মির কাছে রয়েছে। এ ইউনিটগুলো তাইওয়ান প্রণালীতে সম্ভাব্য সংঘাতের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত।

২০২৪ সালের মে মাসে তাইওয়ান প্রণালীতে দু’দিনব্যাপী ‘জয়েন্ট সোর্ড-২০২৪এ’ মহড়ায় পিএইচএল-১৬ প্রদর্শিত হয়। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ডের ৭৪তম গ্রুপ আর্মিও দক্ষিণ চীন সাগরে এই সিস্টেম ব্যবহার করছে।

হিমারসের সঙ্গে তুলনা
যুক্তরাষ্ট্রের হিমারস সিস্টেমের মতো পিএইচএল-১৬ও মডুলার নকশা বহন করে। হিমারস সর্বোচ্চ ৩০০ কিমি পাল্লার অস্ত্র চালাতে পারে, তবে নতুন জিপিএস-নির্দেশিত মিসাইল উন্নয়নাধীন রয়েছে যা ৫০০ কিমি পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হবে।

তবে চীনের পিএইচএল-১৬ ইতিমধ্যেই ৫০০ কিমি পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করতে সক্ষম। ফলে তাইওয়ান প্রণালী ও দক্ষিণ চীন সাগরে এটি বেইজিংয়ের “অ্যান্টি-অ্যাকসেস/এরিয়া ডিনায়াল” কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

কৌশলগত গুরুত্ব
পিএইচএল-১৬ শুধু দীর্ঘ-পাল্লার আক্রমণের সুযোগই দেয় না, বরং তুলনামূলক নিরাপদ দূরত্ব থেকে শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে আঘাত হানার সুযোগ সৃষ্টি করে। এর মাধ্যমে চীন একদিকে আক্রমণাত্মক সক্ষমতা বজায় রাখছে, অন্যদিকে প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রেও কৌশলগত সুবিধা পাচ্ছে।

তাইওয়ান প্রণালীতে সম্ভাব্য সংঘাতে এ ধরনের সিস্টেম দুই পক্ষের জন্যই বড় ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

বিপিএল শুরুর আগের দিনই চট্টগ্রাম রয়্যালসের মালিকানা ছাড়লেন মালিক

চীনের পিএইচএল-১৬: যুক্তরাষ্ট্রের হিমারস সিস্টেমের জবাব

০২:৪১:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫

তাইওয়ান প্রণালীতে উত্তেজনা ও চীনের প্রস্তুতি
তাইওয়ান প্রণালী ঘিরে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বেইজিং সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে নতুন অস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করছে। এসবের মধ্যে অন্যতম হলো পিএইচএল-১৬ (PHL-16), একটি ট্রাক-মাউন্টেড, স্বচালিত মাল্টিপল রকেট লঞ্চার, যা মডুলার নকশা ও দীর্ঘ পাল্লার সুনির্দিষ্ট আঘাত করার ক্ষমতা বহন করে।

উন্নয়ন ও নকশা
চীনের প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান নরিনকো (Norinco) পিএইচএল-১৬ তৈরি করেছে। এটি চীনের সর্বাধুনিক এমআরএল (Multiple Rocket Launcher) সিস্টেম হিসেবে বিবেচিত। ২০১৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সামরিক কুচকাওয়াজে প্রথম প্রকাশ্যে প্রদর্শিত হয়।

এটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ মিটার, প্রস্থ ৩ মিটার এবং উচ্চতাও প্রায় ৩ মিটার। আট ব্যারেল বিশিষ্ট এ লঞ্চার তিনজন ক্রু দ্বারা পরিচালিত হয়। এটি একটি বিশেষ ভারী WS2400 8×8 ট্রাকে স্থাপিত, ফলে সহজে মোতায়েন ও পুনর্মোতায়েন করা যায় এবং শত্রুর পাল্টা আক্রমণ এড়ানো সম্ভব হয়।

মডুলার নকশার কারণে এটি বিভিন্ন ক্যালিবার ও পাল্লার রকেট নিক্ষেপ করতে সক্ষম, যা একক প্ল্যাটফর্ম থেকে নানামুখী আক্রমণ চালানোকে সহজ করে।

আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পিএইচএল-১৬ এর ১২০টিরও বেশি ইউনিট চীনের বিভিন্ন সামরিক কমান্ডে মোতায়েন রয়েছে।

প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য
পিএইচএল-১৬ তার পূর্বসূরিদের তুলনায় অনেক উন্নত। যেখানে পুরনো মডেল নির্দিষ্ট ধরনের গোলাবারুদে সীমাবদ্ধ ছিল, সেখানে পিএইচএল-১৬ স্বয়ংক্রিয়ভাবে রকেট ও মিসাইলের মধ্যে পরিবর্তন করতে পারে।

৩০০ মিমি রকেট: সর্বোচ্চ ১৩০ কিমি পাল্লা

৩৭০ মিমি রকেট: সর্বোচ্চ ৩০০ কিমি পাল্লা

৭৫০ মিমি “ফায়ার ড্রাগন ৪৮০” ট্যাকটিক্যাল ব্যালিস্টিক মিসাইল: সর্বোচ্চ ৫০০ কিমি পাল্লা

প্রয়োজন অনুযায়ী এটি হয় আটটি ৩৭০ মিমি গাইডেড রকেট অথবা দুটি ৭৫০ মিমি ব্যালিস্টিক মিসাইল বহন করতে পারে। গাইডেড রকেটগুলো শত্রুপক্ষের পদাতিক, হালকা সাঁজোয়া যান ও আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করতে কার্যকর। অপরদিকে ফায়ার ড্রাগন মিসাইল উচ্চমূল্যের লক্ষ্যবস্তু—যেমন শত্রুর কমান্ড সেন্টার ও সামরিক ঘাঁটি—ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়।

এটির ট্রাকচ্যাসিস ৮০ কিমি/ঘণ্টা গতি তুলতে সক্ষম এবং অফ-রোডেও সহজে চলতে পারে। ফলে আঘাত হানার পর দ্রুত অবস্থান পরিবর্তন করে পাল্টা আক্রমণ এড়ানো সম্ভব।

মোতায়েন ও সামরিক মহড়া
বেইজিং পিএইচএল-১৬ এর নির্দিষ্ট ঘাঁটি প্রকাশ করে না, তবে জানা গেছে এটি পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ডের ৭১তম, ৭২তম ও ৭৩তম গ্রুপ আর্মির কাছে রয়েছে। এ ইউনিটগুলো তাইওয়ান প্রণালীতে সম্ভাব্য সংঘাতের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত।

২০২৪ সালের মে মাসে তাইওয়ান প্রণালীতে দু’দিনব্যাপী ‘জয়েন্ট সোর্ড-২০২৪এ’ মহড়ায় পিএইচএল-১৬ প্রদর্শিত হয়। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ডের ৭৪তম গ্রুপ আর্মিও দক্ষিণ চীন সাগরে এই সিস্টেম ব্যবহার করছে।

হিমারসের সঙ্গে তুলনা
যুক্তরাষ্ট্রের হিমারস সিস্টেমের মতো পিএইচএল-১৬ও মডুলার নকশা বহন করে। হিমারস সর্বোচ্চ ৩০০ কিমি পাল্লার অস্ত্র চালাতে পারে, তবে নতুন জিপিএস-নির্দেশিত মিসাইল উন্নয়নাধীন রয়েছে যা ৫০০ কিমি পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হবে।

তবে চীনের পিএইচএল-১৬ ইতিমধ্যেই ৫০০ কিমি পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করতে সক্ষম। ফলে তাইওয়ান প্রণালী ও দক্ষিণ চীন সাগরে এটি বেইজিংয়ের “অ্যান্টি-অ্যাকসেস/এরিয়া ডিনায়াল” কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

কৌশলগত গুরুত্ব
পিএইচএল-১৬ শুধু দীর্ঘ-পাল্লার আক্রমণের সুযোগই দেয় না, বরং তুলনামূলক নিরাপদ দূরত্ব থেকে শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে আঘাত হানার সুযোগ সৃষ্টি করে। এর মাধ্যমে চীন একদিকে আক্রমণাত্মক সক্ষমতা বজায় রাখছে, অন্যদিকে প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রেও কৌশলগত সুবিধা পাচ্ছে।

তাইওয়ান প্রণালীতে সম্ভাব্য সংঘাতে এ ধরনের সিস্টেম দুই পক্ষের জন্যই বড় ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।