০৪:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
মাদারল্যান্ড কখনো ভোলে না’ বীরকে —তাইওয়ানে গোপন মিশনে শহীদ উউ শিকে স্মরণ করছে চীন বার্নার্ড জুলিয়ানের করুণ জীবন— যার উত্থান ও পতন সমান নাটকীয় ১৯২৯—যে বছরে ভেঙে পড়েছিল আমেরিকার স্বপ্ন নগদহীন পেমেন্ট ভালো—কিন্তু সেটি ব্যর্থ হলে সমস্যা মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৫৭) হংকং বাজারে সানি হেভি ইন্ডাস্ট্রির শেয়ার বিক্রি শুরু বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড বাণিজ্য সহযোগিতা জোরদারে বিএফটিআই ও আইটিডি’র মধ্যে সমঝোতা স্মারক রাজনৈতিক বিভাজন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ: গণভোটের সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা- আসিফ নজরুল সৎপুত্রের হাতে আহত নারী ঢাকায় মারা গেলেন ঝিনাইদহে নবগঙ্গা নদীতে দুই শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু

চীনের পিএইচএল-১৬: যুক্তরাষ্ট্রের হিমারস সিস্টেমের জবাব

তাইওয়ান প্রণালীতে উত্তেজনা ও চীনের প্রস্তুতি
তাইওয়ান প্রণালী ঘিরে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বেইজিং সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে নতুন অস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করছে। এসবের মধ্যে অন্যতম হলো পিএইচএল-১৬ (PHL-16), একটি ট্রাক-মাউন্টেড, স্বচালিত মাল্টিপল রকেট লঞ্চার, যা মডুলার নকশা ও দীর্ঘ পাল্লার সুনির্দিষ্ট আঘাত করার ক্ষমতা বহন করে।

উন্নয়ন ও নকশা
চীনের প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান নরিনকো (Norinco) পিএইচএল-১৬ তৈরি করেছে। এটি চীনের সর্বাধুনিক এমআরএল (Multiple Rocket Launcher) সিস্টেম হিসেবে বিবেচিত। ২০১৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সামরিক কুচকাওয়াজে প্রথম প্রকাশ্যে প্রদর্শিত হয়।

এটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ মিটার, প্রস্থ ৩ মিটার এবং উচ্চতাও প্রায় ৩ মিটার। আট ব্যারেল বিশিষ্ট এ লঞ্চার তিনজন ক্রু দ্বারা পরিচালিত হয়। এটি একটি বিশেষ ভারী WS2400 8×8 ট্রাকে স্থাপিত, ফলে সহজে মোতায়েন ও পুনর্মোতায়েন করা যায় এবং শত্রুর পাল্টা আক্রমণ এড়ানো সম্ভব হয়।

মডুলার নকশার কারণে এটি বিভিন্ন ক্যালিবার ও পাল্লার রকেট নিক্ষেপ করতে সক্ষম, যা একক প্ল্যাটফর্ম থেকে নানামুখী আক্রমণ চালানোকে সহজ করে।

আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পিএইচএল-১৬ এর ১২০টিরও বেশি ইউনিট চীনের বিভিন্ন সামরিক কমান্ডে মোতায়েন রয়েছে।

প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য
পিএইচএল-১৬ তার পূর্বসূরিদের তুলনায় অনেক উন্নত। যেখানে পুরনো মডেল নির্দিষ্ট ধরনের গোলাবারুদে সীমাবদ্ধ ছিল, সেখানে পিএইচএল-১৬ স্বয়ংক্রিয়ভাবে রকেট ও মিসাইলের মধ্যে পরিবর্তন করতে পারে।

৩০০ মিমি রকেট: সর্বোচ্চ ১৩০ কিমি পাল্লা

৩৭০ মিমি রকেট: সর্বোচ্চ ৩০০ কিমি পাল্লা

৭৫০ মিমি “ফায়ার ড্রাগন ৪৮০” ট্যাকটিক্যাল ব্যালিস্টিক মিসাইল: সর্বোচ্চ ৫০০ কিমি পাল্লা

প্রয়োজন অনুযায়ী এটি হয় আটটি ৩৭০ মিমি গাইডেড রকেট অথবা দুটি ৭৫০ মিমি ব্যালিস্টিক মিসাইল বহন করতে পারে। গাইডেড রকেটগুলো শত্রুপক্ষের পদাতিক, হালকা সাঁজোয়া যান ও আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করতে কার্যকর। অপরদিকে ফায়ার ড্রাগন মিসাইল উচ্চমূল্যের লক্ষ্যবস্তু—যেমন শত্রুর কমান্ড সেন্টার ও সামরিক ঘাঁটি—ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়।

এটির ট্রাকচ্যাসিস ৮০ কিমি/ঘণ্টা গতি তুলতে সক্ষম এবং অফ-রোডেও সহজে চলতে পারে। ফলে আঘাত হানার পর দ্রুত অবস্থান পরিবর্তন করে পাল্টা আক্রমণ এড়ানো সম্ভব।

মোতায়েন ও সামরিক মহড়া
বেইজিং পিএইচএল-১৬ এর নির্দিষ্ট ঘাঁটি প্রকাশ করে না, তবে জানা গেছে এটি পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ডের ৭১তম, ৭২তম ও ৭৩তম গ্রুপ আর্মির কাছে রয়েছে। এ ইউনিটগুলো তাইওয়ান প্রণালীতে সম্ভাব্য সংঘাতের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত।

২০২৪ সালের মে মাসে তাইওয়ান প্রণালীতে দু’দিনব্যাপী ‘জয়েন্ট সোর্ড-২০২৪এ’ মহড়ায় পিএইচএল-১৬ প্রদর্শিত হয়। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ডের ৭৪তম গ্রুপ আর্মিও দক্ষিণ চীন সাগরে এই সিস্টেম ব্যবহার করছে।

হিমারসের সঙ্গে তুলনা
যুক্তরাষ্ট্রের হিমারস সিস্টেমের মতো পিএইচএল-১৬ও মডুলার নকশা বহন করে। হিমারস সর্বোচ্চ ৩০০ কিমি পাল্লার অস্ত্র চালাতে পারে, তবে নতুন জিপিএস-নির্দেশিত মিসাইল উন্নয়নাধীন রয়েছে যা ৫০০ কিমি পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হবে।

তবে চীনের পিএইচএল-১৬ ইতিমধ্যেই ৫০০ কিমি পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করতে সক্ষম। ফলে তাইওয়ান প্রণালী ও দক্ষিণ চীন সাগরে এটি বেইজিংয়ের “অ্যান্টি-অ্যাকসেস/এরিয়া ডিনায়াল” কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

কৌশলগত গুরুত্ব
পিএইচএল-১৬ শুধু দীর্ঘ-পাল্লার আক্রমণের সুযোগই দেয় না, বরং তুলনামূলক নিরাপদ দূরত্ব থেকে শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে আঘাত হানার সুযোগ সৃষ্টি করে। এর মাধ্যমে চীন একদিকে আক্রমণাত্মক সক্ষমতা বজায় রাখছে, অন্যদিকে প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রেও কৌশলগত সুবিধা পাচ্ছে।

তাইওয়ান প্রণালীতে সম্ভাব্য সংঘাতে এ ধরনের সিস্টেম দুই পক্ষের জন্যই বড় ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

মাদারল্যান্ড কখনো ভোলে না’ বীরকে —তাইওয়ানে গোপন মিশনে শহীদ উউ শিকে স্মরণ করছে চীন

চীনের পিএইচএল-১৬: যুক্তরাষ্ট্রের হিমারস সিস্টেমের জবাব

০২:৪১:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫

তাইওয়ান প্রণালীতে উত্তেজনা ও চীনের প্রস্তুতি
তাইওয়ান প্রণালী ঘিরে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বেইজিং সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে নতুন অস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করছে। এসবের মধ্যে অন্যতম হলো পিএইচএল-১৬ (PHL-16), একটি ট্রাক-মাউন্টেড, স্বচালিত মাল্টিপল রকেট লঞ্চার, যা মডুলার নকশা ও দীর্ঘ পাল্লার সুনির্দিষ্ট আঘাত করার ক্ষমতা বহন করে।

উন্নয়ন ও নকশা
চীনের প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান নরিনকো (Norinco) পিএইচএল-১৬ তৈরি করেছে। এটি চীনের সর্বাধুনিক এমআরএল (Multiple Rocket Launcher) সিস্টেম হিসেবে বিবেচিত। ২০১৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সামরিক কুচকাওয়াজে প্রথম প্রকাশ্যে প্রদর্শিত হয়।

এটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ মিটার, প্রস্থ ৩ মিটার এবং উচ্চতাও প্রায় ৩ মিটার। আট ব্যারেল বিশিষ্ট এ লঞ্চার তিনজন ক্রু দ্বারা পরিচালিত হয়। এটি একটি বিশেষ ভারী WS2400 8×8 ট্রাকে স্থাপিত, ফলে সহজে মোতায়েন ও পুনর্মোতায়েন করা যায় এবং শত্রুর পাল্টা আক্রমণ এড়ানো সম্ভব হয়।

মডুলার নকশার কারণে এটি বিভিন্ন ক্যালিবার ও পাল্লার রকেট নিক্ষেপ করতে সক্ষম, যা একক প্ল্যাটফর্ম থেকে নানামুখী আক্রমণ চালানোকে সহজ করে।

আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পিএইচএল-১৬ এর ১২০টিরও বেশি ইউনিট চীনের বিভিন্ন সামরিক কমান্ডে মোতায়েন রয়েছে।

প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য
পিএইচএল-১৬ তার পূর্বসূরিদের তুলনায় অনেক উন্নত। যেখানে পুরনো মডেল নির্দিষ্ট ধরনের গোলাবারুদে সীমাবদ্ধ ছিল, সেখানে পিএইচএল-১৬ স্বয়ংক্রিয়ভাবে রকেট ও মিসাইলের মধ্যে পরিবর্তন করতে পারে।

৩০০ মিমি রকেট: সর্বোচ্চ ১৩০ কিমি পাল্লা

৩৭০ মিমি রকেট: সর্বোচ্চ ৩০০ কিমি পাল্লা

৭৫০ মিমি “ফায়ার ড্রাগন ৪৮০” ট্যাকটিক্যাল ব্যালিস্টিক মিসাইল: সর্বোচ্চ ৫০০ কিমি পাল্লা

প্রয়োজন অনুযায়ী এটি হয় আটটি ৩৭০ মিমি গাইডেড রকেট অথবা দুটি ৭৫০ মিমি ব্যালিস্টিক মিসাইল বহন করতে পারে। গাইডেড রকেটগুলো শত্রুপক্ষের পদাতিক, হালকা সাঁজোয়া যান ও আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করতে কার্যকর। অপরদিকে ফায়ার ড্রাগন মিসাইল উচ্চমূল্যের লক্ষ্যবস্তু—যেমন শত্রুর কমান্ড সেন্টার ও সামরিক ঘাঁটি—ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়।

এটির ট্রাকচ্যাসিস ৮০ কিমি/ঘণ্টা গতি তুলতে সক্ষম এবং অফ-রোডেও সহজে চলতে পারে। ফলে আঘাত হানার পর দ্রুত অবস্থান পরিবর্তন করে পাল্টা আক্রমণ এড়ানো সম্ভব।

মোতায়েন ও সামরিক মহড়া
বেইজিং পিএইচএল-১৬ এর নির্দিষ্ট ঘাঁটি প্রকাশ করে না, তবে জানা গেছে এটি পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ডের ৭১তম, ৭২তম ও ৭৩তম গ্রুপ আর্মির কাছে রয়েছে। এ ইউনিটগুলো তাইওয়ান প্রণালীতে সম্ভাব্য সংঘাতের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত।

২০২৪ সালের মে মাসে তাইওয়ান প্রণালীতে দু’দিনব্যাপী ‘জয়েন্ট সোর্ড-২০২৪এ’ মহড়ায় পিএইচএল-১৬ প্রদর্শিত হয়। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ডের ৭৪তম গ্রুপ আর্মিও দক্ষিণ চীন সাগরে এই সিস্টেম ব্যবহার করছে।

হিমারসের সঙ্গে তুলনা
যুক্তরাষ্ট্রের হিমারস সিস্টেমের মতো পিএইচএল-১৬ও মডুলার নকশা বহন করে। হিমারস সর্বোচ্চ ৩০০ কিমি পাল্লার অস্ত্র চালাতে পারে, তবে নতুন জিপিএস-নির্দেশিত মিসাইল উন্নয়নাধীন রয়েছে যা ৫০০ কিমি পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হবে।

তবে চীনের পিএইচএল-১৬ ইতিমধ্যেই ৫০০ কিমি পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করতে সক্ষম। ফলে তাইওয়ান প্রণালী ও দক্ষিণ চীন সাগরে এটি বেইজিংয়ের “অ্যান্টি-অ্যাকসেস/এরিয়া ডিনায়াল” কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

কৌশলগত গুরুত্ব
পিএইচএল-১৬ শুধু দীর্ঘ-পাল্লার আক্রমণের সুযোগই দেয় না, বরং তুলনামূলক নিরাপদ দূরত্ব থেকে শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে আঘাত হানার সুযোগ সৃষ্টি করে। এর মাধ্যমে চীন একদিকে আক্রমণাত্মক সক্ষমতা বজায় রাখছে, অন্যদিকে প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রেও কৌশলগত সুবিধা পাচ্ছে।

তাইওয়ান প্রণালীতে সম্ভাব্য সংঘাতে এ ধরনের সিস্টেম দুই পক্ষের জন্যই বড় ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।