যুক্তরাষ্ট্রে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে জনঅসন্তোষ বাড়তে থাকায় গরুর মাংসের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে সেই ঘোষণার পর সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছেন খোদ সেই গবাদিপশু খামারিরাই, যারা দীর্ঘদিন ধরে ট্রাম্পের রাজনৈতিক সমর্থক হিসেবে পরিচিত। আইওয়া থেকে ফ্লোরিডা—দেশজুড়ে অনেক খামারি বলছেন, তারা এখনও ট্রাম্পের পাশে আছেন, কিন্তু এখন আর খুশি নন।
দামের ঘোষণায় বাজারে ধাক্কা
ট্রাম্প শরৎকালে প্রকাশ্যে বলেন, গরুর মাংসের দাম খুব বেশি এবং তা কমতে হবে। এই বক্তব্যের পরপরই গবাদিপশুর ভবিষ্যৎ বাজারে বড় ধরনের পতন দেখা দেয়। অক্টোবরে সর্বোচ্চ দামে পৌঁছানোর পর এক মাসের কিছু বেশি সময়ে গবাদিপশুর ভবিষ্যৎ দর কমে যায় প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। এর ফলে খামারিদের প্রত্যাশিত লাভ কমে যায়, অনেক ক্রেতা কেনা স্থগিত করেন এবং বাজারে অস্থিরতা বাড়ে।
খামারিদের অভিযোগ, দাম কমার এই ধাক্কা সরাসরি তাদের ওপর পড়লেও ভোক্তা পর্যায়ে তেমন প্রভাব পড়েনি। আইওয়ার খামারি গ্যারি ভেটার বলেন, প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্য না করলেই ভালো হতো। তিনি জানান, সমর্থন এখনও আছে, কিন্তু সন্তুষ্টি নেই।
আমদানি ও তদন্তে বাড়তি চাপ
ট্রাম্প প্রশাসন গরুর মাংসের দাম কমাতে একাধিক পদক্ষেপ নেয়। আর্জেন্টিনা থেকে কম শুল্কে গরুর মাংস আমদানি বাড়ানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। ব্রাজিল থেকে আমদানিতে আগের শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়। পাশাপাশি বড় মাংস প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দাম কারসাজির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। এসব সিদ্ধান্ত বাজারে গবাদিপশুর দাম নামিয়ে আনলেও দোকানে মাংসের দাম তেমন কমেনি।
খুচরা বাজারে ভোক্তার ধাক্কা
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় খুচরা বাজারে গরুর কিমার দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। অন্যান্য কাটের মাংসেও একই চিত্র। অর্থনীতিবিদদের মতে, খামারি থেকে ভোক্তার টেবিল পর্যন্ত অনেক স্তর থাকায় গবাদিপশুর দামে পরিবর্তনের প্রভাব খুচরা বাজারে পৌঁছাতে সময় লাগে এবং সেই প্রভাব তুলনামূলক কম হয়।
খামার পুনর্গঠনে অনিশ্চয়তা
দীর্ঘ খরা ও চারণভূমি সংকটে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে গবাদিপশুর সংখ্যা কমে যায়। এর ফলে দেশটি প্রথমবারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে বড় গরুর মাংস উৎপাদক দেশের অবস্থান হারায়। এখন ধীরে ধীরে পশুর সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ শুরু হলেও আমদানি নীতি ও বাজার অস্থিরতায় সেই প্রচেষ্টা ঝুঁকির মুখে পড়েছে বলে খামারিরা আশঙ্কা করছেন।
আইওয়ার এক খামারি ডিন মেয়ার জানান, অনিশ্চয়তার কারণে তিনি সাময়িকভাবে নতুন পশু কেনা বন্ধ রেখেছেন। তার মতে, স্থিতিশীলতা ছাড়া পশুর সংখ্যা বাড়ানো কঠিন। গ্যারি ভেটার বলেন, সাম্প্রতিক দরপতনে তার বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে নতুন পশু কেনার আগে তিনি আরও হিসাব করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
সমর্থন থাকলেও প্রশ্ন রয়ে গেছে
গ্রামাঞ্চলের অনেক খামারি এখনও অভিবাসনসহ অন্যান্য নীতির কারণে ট্রাম্পকে সমর্থন করেন। তবে গরুর মাংসের বাজারে হস্তক্ষেপ তাদের আস্থায় ফাটল ধরিয়েছে। মিসৌরির এক মাংস প্রক্রিয়াজাতকারী উদ্যোক্তা বলেন, খামারিরাই দোকানের দামের জন্য দায়ী নন, অথচ আঘাতটা তাদের ওপরই পড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে খামারিরা বলছেন, গরুর মাংসের দাম কমানোর লক্ষ্য অর্জন করতে হলে শুধু বক্তব্য বা হঠাৎ নীতিগত পরিবর্তন নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল নীতি প্রয়োজন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















