শেনইয়াংয়ের মিশেলিন টায়ার কারখানার ভেতরে ভেড়া চরছে সবুজ ঘাসে, হাঁসেরা হাঁটছে সারি বেঁধে। ঠিক যেমনটা দেখা যায় গ্রামে। অথচ এটি একসময় ছিল উত্তর-পূর্ব চীনের ভারী শিল্পাঞ্চল। ২০২২ সালে রাসায়নিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের বদলে আনা তিনটি ভেড়া এখন ২৪টির দলে রূপ নিয়েছে। তাদের ডাকনাম দেওয়া হয়েছে কারখানার ‘ইকো স্টারস’। তারা এখানে ঘাস ছেঁটে রাখে, মাটিকে উর্বর করে এবং শিল্প ও প্রকৃতির সহাবস্থানের প্রতীক।
মিশেলিন শেনইয়াং টায়ার কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক লি ইয়ানবিং বলেন, ‘আমরা এমন এক সবুজ স্থান গড়ে তুলতে চাই, যেখানে শিল্প ও পরিবেশ ভারসাম্য বজায় রেখে বেঁচে থাকবে।’ কেবল এই কারখানাই নয়, সমগ্র চীনে এখন কারখানাগুলো ধোঁয়ায় ভরা আকাশের পরিবর্তে স্বচ্ছ বাতাস ও সবুজায়নের পথে এগোচ্ছে। তালিয়ানের ছাংসিং দ্বীপে হেংলি পেট্রোকেমিক্যাল পার্ককে আগে ‘দূষণ ও জ্বালানি-খেকো’ হিসেবে সমালোচনা করা হতো। অথচ এখন তাদের বর্জ্যপানি শোধনাগারে দেখা যায় স্বচ্ছ পানিতে ভাসমান রঙিন কই মাছ ও সবুজ উদ্যান।
শেনইয়াংয়ের তিয়েসি জেলায় একসময়কার কারখানা এখন হয়ে উঠেছে বিএমডব্লিউ ব্রিলিয়ান্স কারখানার বাগান, কৃত্রিম হ্রদে কই মাছ ও সাদা বক—শিল্প ও প্রকৃতির সুন্দর সমন্বয়ে একটি চিত্তাকর্ষক পর্যটন কেন্দ্র। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় স্তরের সবুজ কারখানার উৎপাদন চীনের মোট উৎপাদনের ২০%। লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে তা ৪০% ছাড়ানো। শেনইয়াংয়ের নর্থইস্ট ফার্ম ফার্মাসিউটিক্যালস তাদের উৎপাদন লাইনকে এমনভাবে আধুনিক করেছে, যাতে ধুলো বা ক্ষতিকর গ্যাস বাতাসে ছড়ায় না।
কারখানায় বছরে ৬২০ টন মিথানল পুনরুদ্ধার হয়, যা থেকে বছরে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন ইউয়ান সাশ্রয় হচ্ছে। কারখানার ডেপুটি ডিরেক্টর চাও চিইউয়ান বলেন, ‘আগে যা ছিল বোঝা, এখন তাই লাভের উৎস। পরিবেশ রক্ষা এখন খরচ নয়, বরং প্রতিযোগিতার শক্তি।’ শানতোং প্রদেশের সাইনোট্রাক ২০২৪ সালে ১ লাখ ৩৪ হাজার নতুন শক্তিচালিত ভারী ট্রাক রপ্তানি করেছে, যার বাজারমূল্য ৪৪.৯ বিলিয়ন ইউয়ান। আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারে ইউরোপীয় ব্র্যান্ডের চেয়ে তাদের বৈদ্যুতিক ট্রাক ১৫% বেশি জ্বালানি সাশ্রয়ী হওয়ায় ব্যাপক সাড়া পেয়েছে।
লাইউ কারখানায় ছাদের সোলার প্যানেল প্রতিদিন উৎপাদন করছে ২ লাখ ৬০ হাজার কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ, যা কারখানার দৈনিক প্রয়োজনের চেয়েও বেশি। এর মাধ্যমে প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার টন কার্বন নিঃসরণ কমছে। ২০২৪ সালে চীনের জিডিপি প্রতি ইউনিটে জ্বালানি ব্যবহার ২০২০ সালের তুলনায় ১১.৬% কমেছে—যা ১১০ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের সমান। এ ক্ষেত্রে চীন বিশ্বের দ্রুততম জ্বালানি দক্ষ দেশগুলোর একটি।
জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের উপপরিচালক চৌ হাইবিং বলেন, চীন দ্রুত সবুজ, নিম্ন-কার্বন ও পুনঃচক্র অর্থনীতি গড়ে তুলছে। ইতোমধ্যেই ৬,৪০০টির বেশি জাতীয় স্তরের সবুজ কারখানা ও ৪৯০টির বেশি সবুজ শিল্পপার্ক গড়ে উঠেছে। লিয়াওনিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বি তেলি মন্তব্য করেন, এখন চীনের কারখানাগুলো প্রমাণ করছে টেকসই উন্নয়নই হতে পারে প্রকৃত শক্তি।
সিএমজি বাংলা
Sarakhon Report 


















