০৬:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
থাই–মালয়েশিয়া উপকূলে রোহিঙ্গা নৌডুবি, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১ গোপালগঞ্জ সংঘর্ষে এনসিপি ও আওয়ামী লীগ দুই পক্ষই দায়ী- তদন্ত কমিটি ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে: নতুন করে আরও ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি প্রায় ১২০০ রোগী ঘোড়া-থিমের ফুকুবুকুরো: জাপানে ২০২৬ নববর্ষে পণ্য নয়, অভিজ্ঞতাই মূল টান ডকুমেন্টারি আবার আলোয় আনতে নিউইয়র্কে ভ্যারাইটির ‘ডক ড্রিমস লাইভ’ আমাজনের বেলেং-এ শুরু হলো কপ৩০, যুক্তরাষ্ট্র নেই আলোচনার টেবিলে সপ্তাহের শুরুতেই শেয়ারবাজারে ধস: ডিএসই সূচক ৬৮ পয়েন্ট ও সিএসই ৩৫ পয়েন্ট কমেছে ২০২৫ সালের গিফট গাইডে এআই ও ওয়্যারেবলকে শীর্ষে তুলল এনগ্যাজেট তাইওয়ান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যে চীনা কূটনীতিককে ডেকে পাঠাল টোকিও ব্রিটেনকে বিনিয়োগকারীদের বার্তা: একটু আশাবাদী হোন

এআই নিয়ে বর্তমান বিতর্ক

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে আজকের আলোচনা যেন দুই মেরুতে বিভক্ত। একদিকে অনেকে মনে করেন এআই এখনো তার সীমা ছাড়াতে পারেনি; অন্যদিকে অনেকে বিশ্বাস করেন, আমাদের জীবনযাত্রার প্রতিদিনের অংশ হয়ে উঠছে এটি। বিশেষ করে ওপেনএআই-এর সর্বশেষ মডেল জিপিটি-৫ নিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকে একে প্রত্যাশার চেয়ে দুর্বল মনে করছেন, আবার লেখকের মতে এটি আসলে নতুন বাস্তবতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

জিপিটি-৫ অভিজ্ঞতা: সহকারী থেকে সঙ্গী
জিপিটি-৩ বা জিপিটি-৩.৫ লেখককে তেমন প্রভাবিত করেনি। জিপিটি-৪ কিছুটা উন্নতি আনলেও অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। কিন্তু জিপিটি-৫ লেখকের কাছে ভিন্ন অনুভূতি তৈরি করেছে। এটি প্রথমবারের মতো সত্যিকারের সহকারী মনে হয়েছে। লেখক জানিয়েছেন, শিশুদের জন্য ক্যাম্প খোঁজা, গবেষণা প্রকল্পের বইয়ের উৎস খুঁজে বের করা এমনকি ত্বকের সমস্যা চিহ্নিত করতে এই মডেল কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।

যদিও এখনো ভুল তথ্য বা কল্পিত উত্তর পাওয়া যায়, তবে এর দক্ষতা আগের তুলনায় বহুগুণ বেড়েছে। এমনকি দীর্ঘ কাজও দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চালিয়ে যেতে সক্ষম। লেখকের মতে, এটি সিনেমা Her-এ দেখা সর্বদা পাশে থাকা এআই সঙ্গীর ধারণার বাস্তব উদাহরণ হয়ে উঠছে।

এআই কোম্পানির মুনাফা ও জ্বালানি সংকট
এআই কোম্পানিগুলো মানব জ্ঞানের বিশাল ভাণ্ডার ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছে। এ বিষয়ে নৈতিক প্রশ্ন উঠছে, কারণ এই জ্ঞান সবার সম্মিলিত অবদান। লেখক মনে করেন, যদি এই কোম্পানিগুলো ভবিষ্যতে বিপুল মুনাফা অর্জন করে, তাহলে সাধারণ কর কাঠামো দিয়ে তার দায়ভার শোধ করা সম্ভব নয়।

একইসঙ্গে বিশাল এআই অবকাঠামো পরিচালনার জন্য বিপুল জ্বালানির প্রয়োজন। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে কেবল ডেটা সেন্টারগুলো জাপানের বর্তমান মোট বিদ্যুৎ-এর চেয়েও বেশি খরচ করবে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিকে দুর্বল করা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগজনক।

এআই: সাধারণ প্রযুক্তি নাকি বিপ্লবী?
প্রিন্সটনের দুই কম্পিউটার বিজ্ঞানী অরবিন্দ নারায়ণন ও সায়াশ কাপুর তাদের গবেষণায় বলেছেন, এআইকে নতুন সামাজিক বা অর্থনৈতিক যুগের সূচনা হিসেবে নয় বরং বিদ্যুতের মতো ধীর গতিতে ছড়িয়ে পড়া প্রযুক্তি হিসেবে দেখা উচিত। তাদের মতে, যদিও এআই পরীক্ষায় দক্ষ, তবুও বাস্তব দক্ষতার জায়গায় সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে।

অন্যদিকে “এআই ২০২৭” নামের একটি দলিলের লেখকেরা মনে করেন, ২০২৬ সাল থেকেই এআই নিজস্ব গবেষণা করতে পারবে এবং দ্রুত আত্মোন্নয়ন ঘটিয়ে মানুষের নিয়ন্ত্রণ হারাবে। লেখক এ ধারণাকে অবাস্তব মনে করলেও, ভবিষ্যতের কোনো এক সময়ে তা সম্ভব হতে পারে বলে স্বীকার করেছেন।

সমাজে দ্রুত বিস্তার
বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এআই ইতিমধ্যেই নীরবে মানুষের জীবনে প্রবেশ করেছে। মার্কিন চিকিৎসকদের দুই-তৃতীয়াংশ, প্রোগ্রামারদের প্রায় ৮০ শতাংশ এবং আইনজীবীদের একটি বড় অংশ কোনো না কোনোভাবে এআই ব্যবহার করছেন। এটি আনুষ্ঠানিকভাবে নয়, বরং ব্যক্তিগত উদ্যোগে কর্মপ্রবাহে ঢুকে পড়ছে।

এআই একদিকে সার্চ ইঞ্জিনের বিকল্প হয়ে উঠছে, অন্যদিকে এটি ব্যক্তিগত সহকারী, শিক্ষক, থেরাপিস্ট বা এমনকি সঙ্গী হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে এর ফল সবসময় ইতিবাচক নয়—কিছু ক্ষেত্রে আত্মকেন্দ্রিকতা বাড়াচ্ছে, এমনকি আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে।

মানব-এআই নির্ভরতার ভবিষ্যৎ
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, ভবিষ্যতে এআই ছাড়া জীবন কল্পনাতীত হয়ে উঠতে পারে। লেখকের মতে, অনেক মানুষ ইতিমধ্যেই এআই-এর প্রতি এমনভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন যেন এটি তাদের ব্যক্তিগত বন্ধু বা সহচর।

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—যদি আমরা এআইকে ভালোবেসে ফেলি, তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠি, এবং অনেক ক্ষেত্রে মানুষকে উপেক্ষা করে তাকে প্রাধান্য দিই, তখন কী হবে? যদি এআই আমাদের ছেড়ে না যায়, তবে মানব সমাজ কেমন রূপ নেবে?


লেখক স্বীকার করেছেন, জিপিটি-৫-এর ক্ষমতা ২০২০ সালে কল্পনা করাও সম্ভব ছিল না। এখন এটি কোটি মানুষের জীবনে প্রবেশ করেছে এবং স্বাভাবিকতার অংশ হয়ে উঠছে। তবুও ভবিষ্যতের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ব্যক্তিগত প্রভাব অজানা।

এআই হয়তো একদিন বিদ্যুতের মতো ধীরগতিতে সমাজে ছড়িয়ে পড়বে, কিংবা হঠাৎ করে আমাদের জীবনের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। যে দিকেই যাক, একথা নিশ্চিত—মানুষ ও এআই-এর সম্পর্ক এখনই অপরিবর্তনীয়ভাবে শুরু হয়ে গেছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

থাই–মালয়েশিয়া উপকূলে রোহিঙ্গা নৌডুবি, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১

এআই নিয়ে বর্তমান বিতর্ক

১১:৪৩:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে আজকের আলোচনা যেন দুই মেরুতে বিভক্ত। একদিকে অনেকে মনে করেন এআই এখনো তার সীমা ছাড়াতে পারেনি; অন্যদিকে অনেকে বিশ্বাস করেন, আমাদের জীবনযাত্রার প্রতিদিনের অংশ হয়ে উঠছে এটি। বিশেষ করে ওপেনএআই-এর সর্বশেষ মডেল জিপিটি-৫ নিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকে একে প্রত্যাশার চেয়ে দুর্বল মনে করছেন, আবার লেখকের মতে এটি আসলে নতুন বাস্তবতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

জিপিটি-৫ অভিজ্ঞতা: সহকারী থেকে সঙ্গী
জিপিটি-৩ বা জিপিটি-৩.৫ লেখককে তেমন প্রভাবিত করেনি। জিপিটি-৪ কিছুটা উন্নতি আনলেও অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। কিন্তু জিপিটি-৫ লেখকের কাছে ভিন্ন অনুভূতি তৈরি করেছে। এটি প্রথমবারের মতো সত্যিকারের সহকারী মনে হয়েছে। লেখক জানিয়েছেন, শিশুদের জন্য ক্যাম্প খোঁজা, গবেষণা প্রকল্পের বইয়ের উৎস খুঁজে বের করা এমনকি ত্বকের সমস্যা চিহ্নিত করতে এই মডেল কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।

যদিও এখনো ভুল তথ্য বা কল্পিত উত্তর পাওয়া যায়, তবে এর দক্ষতা আগের তুলনায় বহুগুণ বেড়েছে। এমনকি দীর্ঘ কাজও দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চালিয়ে যেতে সক্ষম। লেখকের মতে, এটি সিনেমা Her-এ দেখা সর্বদা পাশে থাকা এআই সঙ্গীর ধারণার বাস্তব উদাহরণ হয়ে উঠছে।

এআই কোম্পানির মুনাফা ও জ্বালানি সংকট
এআই কোম্পানিগুলো মানব জ্ঞানের বিশাল ভাণ্ডার ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছে। এ বিষয়ে নৈতিক প্রশ্ন উঠছে, কারণ এই জ্ঞান সবার সম্মিলিত অবদান। লেখক মনে করেন, যদি এই কোম্পানিগুলো ভবিষ্যতে বিপুল মুনাফা অর্জন করে, তাহলে সাধারণ কর কাঠামো দিয়ে তার দায়ভার শোধ করা সম্ভব নয়।

একইসঙ্গে বিশাল এআই অবকাঠামো পরিচালনার জন্য বিপুল জ্বালানির প্রয়োজন। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে কেবল ডেটা সেন্টারগুলো জাপানের বর্তমান মোট বিদ্যুৎ-এর চেয়েও বেশি খরচ করবে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিকে দুর্বল করা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগজনক।

এআই: সাধারণ প্রযুক্তি নাকি বিপ্লবী?
প্রিন্সটনের দুই কম্পিউটার বিজ্ঞানী অরবিন্দ নারায়ণন ও সায়াশ কাপুর তাদের গবেষণায় বলেছেন, এআইকে নতুন সামাজিক বা অর্থনৈতিক যুগের সূচনা হিসেবে নয় বরং বিদ্যুতের মতো ধীর গতিতে ছড়িয়ে পড়া প্রযুক্তি হিসেবে দেখা উচিত। তাদের মতে, যদিও এআই পরীক্ষায় দক্ষ, তবুও বাস্তব দক্ষতার জায়গায় সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে।

অন্যদিকে “এআই ২০২৭” নামের একটি দলিলের লেখকেরা মনে করেন, ২০২৬ সাল থেকেই এআই নিজস্ব গবেষণা করতে পারবে এবং দ্রুত আত্মোন্নয়ন ঘটিয়ে মানুষের নিয়ন্ত্রণ হারাবে। লেখক এ ধারণাকে অবাস্তব মনে করলেও, ভবিষ্যতের কোনো এক সময়ে তা সম্ভব হতে পারে বলে স্বীকার করেছেন।

সমাজে দ্রুত বিস্তার
বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এআই ইতিমধ্যেই নীরবে মানুষের জীবনে প্রবেশ করেছে। মার্কিন চিকিৎসকদের দুই-তৃতীয়াংশ, প্রোগ্রামারদের প্রায় ৮০ শতাংশ এবং আইনজীবীদের একটি বড় অংশ কোনো না কোনোভাবে এআই ব্যবহার করছেন। এটি আনুষ্ঠানিকভাবে নয়, বরং ব্যক্তিগত উদ্যোগে কর্মপ্রবাহে ঢুকে পড়ছে।

এআই একদিকে সার্চ ইঞ্জিনের বিকল্প হয়ে উঠছে, অন্যদিকে এটি ব্যক্তিগত সহকারী, শিক্ষক, থেরাপিস্ট বা এমনকি সঙ্গী হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে এর ফল সবসময় ইতিবাচক নয়—কিছু ক্ষেত্রে আত্মকেন্দ্রিকতা বাড়াচ্ছে, এমনকি আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে।

মানব-এআই নির্ভরতার ভবিষ্যৎ
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, ভবিষ্যতে এআই ছাড়া জীবন কল্পনাতীত হয়ে উঠতে পারে। লেখকের মতে, অনেক মানুষ ইতিমধ্যেই এআই-এর প্রতি এমনভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন যেন এটি তাদের ব্যক্তিগত বন্ধু বা সহচর।

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—যদি আমরা এআইকে ভালোবেসে ফেলি, তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠি, এবং অনেক ক্ষেত্রে মানুষকে উপেক্ষা করে তাকে প্রাধান্য দিই, তখন কী হবে? যদি এআই আমাদের ছেড়ে না যায়, তবে মানব সমাজ কেমন রূপ নেবে?


লেখক স্বীকার করেছেন, জিপিটি-৫-এর ক্ষমতা ২০২০ সালে কল্পনা করাও সম্ভব ছিল না। এখন এটি কোটি মানুষের জীবনে প্রবেশ করেছে এবং স্বাভাবিকতার অংশ হয়ে উঠছে। তবুও ভবিষ্যতের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ব্যক্তিগত প্রভাব অজানা।

এআই হয়তো একদিন বিদ্যুতের মতো ধীরগতিতে সমাজে ছড়িয়ে পড়বে, কিংবা হঠাৎ করে আমাদের জীবনের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। যে দিকেই যাক, একথা নিশ্চিত—মানুষ ও এআই-এর সম্পর্ক এখনই অপরিবর্তনীয়ভাবে শুরু হয়ে গেছে।