০৪:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
খাবার ফুরিয়ে আসছে, নেই ইন্টারনেট; ইন্দোনেশিয়ায় বন্যায় ১৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত ইয়াশ রোহান: নীরবতার ভেতরে জন্ম নেওয়া নতুন প্রজন্মের তারকা তারেক রহমানের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া অব্যাহত রাখার আহ্বান খালেদা জিয়ার অবস্থার উন্নতি, চিকিৎসা সঠিকভাবে চলছে: ডা. জাহিদ মনউন্মোচনকারী উপন্যাস ‘লাইটব্রেকার্স’ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তালেবান ইস্যুতে বাড়ছে আফগান-পাকিস্তান উত্তেজনা জলব্যায়ামে প্রেম, আর শেষ পর্যন্ত পুলেই বিয়ে টেক্সাসে মুসলিম অধিকার সংস্থা ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণার জেরে তীব্র প্রতিক্রিয়া খরা কি উন্নত সিন্ধু সভ্যতার অবসান ঘটিয়েছিল? ৫.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস: শীতের কাঁপুনিতে শুরু হলো ডিসেম্বর

গুরেজে দুই সন্ত্রাসী নিহত, ভারত- পাকিস্তান সীমান্তে বাড়ছে উত্তেজনা

সর্বশেষ অভিযানের বিবরণ

জম্মু ও কাশ্মীরের বান্দিপোরা জেলার গুরেজ সেক্টরে ভারতীয় সেনা ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ যৌথ অভিযানে দুই সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে। সেনাবাহিনীর দাবি, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালিত হয়। সীমান্ত বরাবর অনুপ্রবেশের চেষ্টা চলাকালে টহলরত সেনারা সন্দেহজনক নড়াচড়া লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীদের চ্যালেঞ্জ জানায়। তখন তারা নির্বিচারে গুলি চালায়। সেনাদের পাল্টা জবাবে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হয়। চিনার কোরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযানের কার্যক্রম এখনও অব্যাহত আছে।

সাম্প্রতিক অনুপ্রবেশ রুখে দেওয়ার ঘটনা

এই মাসেই এর আগেও সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা প্রতিহত করেছে ভারতীয় সেনারা। ১৩ আগস্ট উরি সেক্টরে গোলাগুলির সময় সেনাদের একজন প্রাণ হারান। তবে চুরুন্ডা এলাকায় অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।

জুলাইয়ের ৩০ তারিখে পুঞ্চ জেলায় আরও একটি বড় সংঘর্ষ ঘটে। তখন লস্কর-ই-তইবা জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বলে ধারণা করা দুই সন্ত্রাসী নিহত হয়। ভারতীয় সেনারা ‘অপারেশন শিবশক্তি’ নামে এ অভিযানের মাধ্যমে পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসী তৎপরতার বিরুদ্ধে বড় ধাক্কা দেয়। ওই অভিযানের মাত্র দুই দিন আগে পাহালগামে সংঘটিত হামলায় জড়িত তিন সন্ত্রাসীকেও নিরাপত্তা বাহিনী হত্যা করেছিল।

পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যক্রম

কাশ্মীর সীমান্তে বারবার অনুপ্রবেশের চেষ্টা মূলত পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর কৌশলের অংশ। লস্কর-ই-তইবা, জইশ-ই-মোহাম্মদসহ বিভিন্ন সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে হামলার চেষ্টা করছে। সেনাবাহিনীর দাবি, এসব প্রচেষ্টা পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হয়, যা কাশ্মীরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে।

সেনা ও পুলিশের সমন্বিত কৌশল

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেনাবাহিনী ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের মধ্যে সমন্বয় অনেক দৃঢ় হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি, যৌথ অভিযান এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে অনুপ্রবেশ রুখে দেওয়ার সক্ষমতা বেড়েছে। প্রতিটি অভিযানে সেনারা আগেভাগেই তথ্য সংগ্রহ করে কৌশল নির্ধারণ করে থাকে। গুরেজে সাম্প্রতিক অভিযানের ক্ষেত্রেও এমন প্রস্তুতির ফলেই দ্রুত সাড়া দিয়ে দুই সন্ত্রাসীকে হত্যা করা সম্ভব হয়েছে।

সীমান্তে নিরাপত্তা পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র

গত কয়েক মাসে কাশ্মীরের বিভিন্ন সেক্টরে একাধিকবার অনুপ্রবেশের চেষ্টা নস্যাৎ করা হয়েছে। প্রতিবারই সেনারা সতর্ক অবস্থান নিয়ে পাল্টা জবাব দিয়েছে। তবে এ ধরনের সংঘর্ষে সেনাদেরও প্রাণহানি ঘটছে, যা সীমান্ত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। স্থানীয়রা জানান, প্রায় প্রতিদিনই সীমান্ত এলাকায় গুলির শব্দ শোনা যায়, যা সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক বাড়িয়ে তোলে।

ভূরাজনৈতিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি কেবল ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলছে। পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মঞ্চে কাশ্মীর ইস্যুতে বারবার সরব হলেও সীমান্তে ক্রমাগত অনুপ্রবেশের চেষ্টা তাদের অবস্থানকে দুর্বল করছে। অন্যদিকে, ভারত এসব ঘটনার প্রমাণ সামনে এনে সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের ভূমিকা তুলে ধরছে।

ভবিষ্যতে সীমান্তে আরও বড় সংঘর্ষ ঘটার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টা বন্ধ হয়নি; বরং মাঝে মাঝে তা আরও তীব্র হচ্ছে। সেনা কর্মকর্তাদের মতে, প্রযুক্তি নির্ভর নজরদারি, দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান এবং স্থানীয় জনগণের সহায়তা—সব মিলিয়ে কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ প্রতিহত করার কৌশল আরও জোরদার করা হচ্ছে।

গুরেজ সেক্টরে দুই সন্ত্রাসীর মৃত্যু সাম্প্রতিক সময়ের ধারাবাহিক ঘটনারই একটি অংশ। সীমান্তে বারবার অনুপ্রবেশ প্রতিহত করার ঘটনা প্রমাণ করছে যে, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো থেমে নেই। তবে ভারতীয় সেনা ও পুলিশও সমানভাবে প্রস্তুত এবং গোয়েন্দা সমন্বয়ের কারণে তারা বারবার সাফল্য পাচ্ছে। তবু কাশ্মীর সীমান্তে উত্তেজনা এখনও প্রশমিত হয়নি, বরং ভবিষ্যতের জন্য নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

খাবার ফুরিয়ে আসছে, নেই ইন্টারনেট; ইন্দোনেশিয়ায় বন্যায় ১৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত

গুরেজে দুই সন্ত্রাসী নিহত, ভারত- পাকিস্তান সীমান্তে বাড়ছে উত্তেজনা

১১:৪৯:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫

সর্বশেষ অভিযানের বিবরণ

জম্মু ও কাশ্মীরের বান্দিপোরা জেলার গুরেজ সেক্টরে ভারতীয় সেনা ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ যৌথ অভিযানে দুই সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে। সেনাবাহিনীর দাবি, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালিত হয়। সীমান্ত বরাবর অনুপ্রবেশের চেষ্টা চলাকালে টহলরত সেনারা সন্দেহজনক নড়াচড়া লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীদের চ্যালেঞ্জ জানায়। তখন তারা নির্বিচারে গুলি চালায়। সেনাদের পাল্টা জবাবে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হয়। চিনার কোরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযানের কার্যক্রম এখনও অব্যাহত আছে।

সাম্প্রতিক অনুপ্রবেশ রুখে দেওয়ার ঘটনা

এই মাসেই এর আগেও সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা প্রতিহত করেছে ভারতীয় সেনারা। ১৩ আগস্ট উরি সেক্টরে গোলাগুলির সময় সেনাদের একজন প্রাণ হারান। তবে চুরুন্ডা এলাকায় অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।

জুলাইয়ের ৩০ তারিখে পুঞ্চ জেলায় আরও একটি বড় সংঘর্ষ ঘটে। তখন লস্কর-ই-তইবা জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বলে ধারণা করা দুই সন্ত্রাসী নিহত হয়। ভারতীয় সেনারা ‘অপারেশন শিবশক্তি’ নামে এ অভিযানের মাধ্যমে পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসী তৎপরতার বিরুদ্ধে বড় ধাক্কা দেয়। ওই অভিযানের মাত্র দুই দিন আগে পাহালগামে সংঘটিত হামলায় জড়িত তিন সন্ত্রাসীকেও নিরাপত্তা বাহিনী হত্যা করেছিল।

পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যক্রম

কাশ্মীর সীমান্তে বারবার অনুপ্রবেশের চেষ্টা মূলত পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর কৌশলের অংশ। লস্কর-ই-তইবা, জইশ-ই-মোহাম্মদসহ বিভিন্ন সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে হামলার চেষ্টা করছে। সেনাবাহিনীর দাবি, এসব প্রচেষ্টা পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হয়, যা কাশ্মীরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে।

সেনা ও পুলিশের সমন্বিত কৌশল

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেনাবাহিনী ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের মধ্যে সমন্বয় অনেক দৃঢ় হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি, যৌথ অভিযান এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে অনুপ্রবেশ রুখে দেওয়ার সক্ষমতা বেড়েছে। প্রতিটি অভিযানে সেনারা আগেভাগেই তথ্য সংগ্রহ করে কৌশল নির্ধারণ করে থাকে। গুরেজে সাম্প্রতিক অভিযানের ক্ষেত্রেও এমন প্রস্তুতির ফলেই দ্রুত সাড়া দিয়ে দুই সন্ত্রাসীকে হত্যা করা সম্ভব হয়েছে।

সীমান্তে নিরাপত্তা পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র

গত কয়েক মাসে কাশ্মীরের বিভিন্ন সেক্টরে একাধিকবার অনুপ্রবেশের চেষ্টা নস্যাৎ করা হয়েছে। প্রতিবারই সেনারা সতর্ক অবস্থান নিয়ে পাল্টা জবাব দিয়েছে। তবে এ ধরনের সংঘর্ষে সেনাদেরও প্রাণহানি ঘটছে, যা সীমান্ত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। স্থানীয়রা জানান, প্রায় প্রতিদিনই সীমান্ত এলাকায় গুলির শব্দ শোনা যায়, যা সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক বাড়িয়ে তোলে।

ভূরাজনৈতিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি কেবল ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলছে। পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মঞ্চে কাশ্মীর ইস্যুতে বারবার সরব হলেও সীমান্তে ক্রমাগত অনুপ্রবেশের চেষ্টা তাদের অবস্থানকে দুর্বল করছে। অন্যদিকে, ভারত এসব ঘটনার প্রমাণ সামনে এনে সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের ভূমিকা তুলে ধরছে।

ভবিষ্যতে সীমান্তে আরও বড় সংঘর্ষ ঘটার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টা বন্ধ হয়নি; বরং মাঝে মাঝে তা আরও তীব্র হচ্ছে। সেনা কর্মকর্তাদের মতে, প্রযুক্তি নির্ভর নজরদারি, দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান এবং স্থানীয় জনগণের সহায়তা—সব মিলিয়ে কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ প্রতিহত করার কৌশল আরও জোরদার করা হচ্ছে।

গুরেজ সেক্টরে দুই সন্ত্রাসীর মৃত্যু সাম্প্রতিক সময়ের ধারাবাহিক ঘটনারই একটি অংশ। সীমান্তে বারবার অনুপ্রবেশ প্রতিহত করার ঘটনা প্রমাণ করছে যে, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো থেমে নেই। তবে ভারতীয় সেনা ও পুলিশও সমানভাবে প্রস্তুত এবং গোয়েন্দা সমন্বয়ের কারণে তারা বারবার সাফল্য পাচ্ছে। তবু কাশ্মীর সীমান্তে উত্তেজনা এখনও প্রশমিত হয়নি, বরং ভবিষ্যতের জন্য নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।