হঠাৎ পদচ্যুতি
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) পরিচালক সুসান মোনারেজকে মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পদ থেকে বরখাস্ত করেছে হোয়াইট হাউস। তার বিদায়ের পরপরই সংস্থাটির চারজন শীর্ষ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। মূলত ভ্যাকসিন নীতি ও জনস্বাস্থ্য নির্দেশনা নিয়ে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার প্রেক্ষাপটেই এই পদক্ষেপ।
কেন সংকট তৈরি হলো
স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিষয়ক মন্ত্রী রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র ভ্যাকসিন নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনেন। তিনি গর্ভবতী নারী ও সুস্থ শিশুদের জন্য কোভিড টিকার ফেডারেল সুপারিশ প্রত্যাহার করেন এবং সিডিসির বিশেষজ্ঞ ভ্যাকসিন উপদেষ্টা প্যানেলের সব সদস্যকে সরিয়ে দিয়ে তার নিজস্ব বাছাই করা উপদেষ্টাদের নিয়োগ দেন, যাদের মধ্যে টিকা-বিরোধী কর্মীও রয়েছেন।
এতে সিডিসির অভ্যন্তরে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, এই নীতি গর্ভবতী নারী ও তরুণ প্রজন্মকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।
মোনারেজের অবস্থান
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জানান, মোনারেজ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাস্থ্যনীতি এজেন্ডার সঙ্গে “সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিলেন না”। তাই তাকে পদচ্যুত করা হয়েছে। তবে মোনারেজের আইনজীবীরা জানান, তিনি না পদত্যাগ করেছেন, না বরখাস্ত হয়েছেন—বরং বিজ্ঞান ও সততার পক্ষে থেকে “অবৈজ্ঞানিক নির্দেশনা” মানতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
পদত্যাগ করা কর্মকর্তারা
সিডিসির প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডেবরা হাওরি এবং জাতীয় ইমিউনাইজেশন ও শ্বাসযন্ত্র রোগ কেন্দ্রের পরিচালক ডেমেট্রে দাসকালাকিস পদত্যাগপত্রে লিখেছেন—ভ্যাকসিন নিয়ে ভুল তথ্য, বিজ্ঞানের ওপর হামলা, জনস্বাস্থ্যের রাজনৈতিক ব্যবহার এবং বাজেট কমিয়ে দেওয়ার কারণে তারা দায়িত্ব চালিয়ে যেতে পারছেন না।
এছাড়া সংক্রামক রোগ কেন্দ্রের পরিচালক ড্যানিয়েল জার্নিগান এবং জনস্বাস্থ্য তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তরের পরিচালক জেন লেইডেনও পদত্যাগ করেছেন। এনবিসি নিউজ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হামের সংক্রমণ এবং সিডিসি সদর দপ্তরে সহিংস হামলার ঘটনাও কর্মকর্তাদের ক্ষুব্ধ করেছে।
বাজেট সংকোচন ও পুনর্গঠন
ট্রাম্প প্রশাসন সিডিসির বাজেট প্রায় ৩.৬ বিলিয়ন ডলার কমিয়ে দিয়েছে, ফলে ২০২৬ সালের বাজেট দাঁড়াবে মাত্র ৪ বিলিয়ন ডলারে। কেনেডি ইতোমধ্যে ২,৪০০ কর্মী ছাঁটাই করেছেন, যদিও এর মধ্যে ৭০০ জনকে পরে আবার নিয়োগ দেওয়া হয়। কর্মকর্তাদের অভিযোগ, এসব পদক্ষেপ সিডিসির কার্যক্রমকে অকার্যকর করে তুলছে।
বিজ্ঞান বনাম রাজনীতি
দাসকালাকিস তার পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, “জনস্বাস্থ্যের রাজনৈতিক ব্যবহার এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে আর কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।” তিনি সতর্ক করেন, এভাবে নীতি পরিবর্তন হলে যুক্তরাষ্ট্র আবার ভ্যাকসিন-পূর্ব যুগে ফিরে যাবে, যেখানে শুধু শক্তিশালী লোকেরা টিকে থাকবে।
সিডিসির অভ্যন্তরীণ চাপ
সাম্প্রতিক সময়ে আটলান্টায় সিডিসির সদর দপ্তরে গুলিবর্ষণ ঘটনার পর কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কর্মী ইউনিয়নের ভাষায়, “এটি দীর্ঘদিনের অবহেলা, অবমূল্যায়ন ও দমননীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে কর্মীদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে।”
মোনারেজ ও কেনেডির সংঘাত
মোনারেজকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনোনীত করেন এবং জুলাই ২০২৫ সালে তিনি সিনেটের অনুমোদন পান। কিন্তু তিনি শুনানিতে স্পষ্ট বলেন যে টিকা ও অটিজমের মধ্যে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। এ বক্তব্য কেনেডির অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, কারণ কেনেডি দীর্ঘদিন ধরে এ দাবিকে প্রচার করে আসছেন।
কেনেডি ইতোমধ্যেই সারা বিভাগজুড়ে অটিজমের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু করেছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, সেপ্টেম্বরে অটিজম নিয়ে বড় ধরনের নীতি পরিবর্তনের ঘোষণা আসবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি প্রধান পদচ্যুত: ভ্যাকসিন নীতিকে ঘিরে বড় সংকট, চার কর্মকর্তার পদত্যাগ
-
Sarakhon Report - ০১:০৪:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
- 39
জনপ্রিয় সংবাদ




















