দিনের শুরুতে এক কাপ কফি
ভোরে ঘুম ভাঙার পর কিংবা ব্যস্ত দিনের মাঝে অনেকেই হাতে নেন এক কাপ কালো কফি। কারও জন্য এটি দিনের শক্তি, কারও জন্য কর্মব্যস্ততার ফাঁকে একটু স্বস্তি। শরীরচর্চার আগে কিংবা অফিসে ফাইলের স্তূপ সামলানোর সময়ে কফির কাপে চুমুক অনেকের কাছে যেন ছোট্ট এক অনুপ্রেরণা। তবে শুধু চাঙা করে দেওয়াই নয়, বিজ্ঞানীরা বলছেন—পরিমিত কফি শরীরের ভেতরে বেশ কিছু উপকারী কাজও করে।
গবেষণার খোঁজে কফি
২০১৭ সালে British Medical Journal-এ প্রকাশিত এক মেটা-বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিয়মিত ৩ থেকে ৪ কাপ কফি পানকারীদের হৃদরোগ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলক কম। যদিও চিকিৎসকেরা সতর্ক করে দেন—সবাই সমানভাবে কফি পান করতে পারবেন না। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিদিন মাত্র এক কাপ কালো কফিই হয়ে উঠতে পারে স্বাস্থ্যরক্ষার অভ্যাস।
ঢাকার হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাইফুল ইসলাম বললেন,
“কফির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তনালীকে নমনীয় রাখে, রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকে। তবে যাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নেই, তাদের জন্য কফি ঝুঁকির কারণ হতে পারে।”
কখন খাবেন কফি
ডাক্তাররা বলছেন, কফি খাওয়ারও আছে সঠিক সময়—
- • সকালে ঘুম থেকে উঠে সঙ্গে সঙ্গে নয়, নাশতার কিছুক্ষণ পর খেলে ভালো।
- • ব্যায়ামের আগে প্রায় আধা ঘণ্টা আগে কফি খেলে শরীর বাড়তি উদ্যম পায়, চর্বি পোড়াতেও সাহায্য করে।
- • তবে বিকেল ৩টার পর কফি না খাওয়াই ভালো, কারণ এতে ঘুমের সমস্যা তৈরি হতে পারে।
কফি ও শরীরের ভেতরের কাজ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একাধিক গবেষণায় পাওয়া গেছে, ক্যাফেইন স্বল্পমাত্রায় রক্তচাপ কিছুটা বাড়ালেও দীর্ঘমেয়াদে কফির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে সহায়তা করে। কিডনির ক্ষেত্রেও কফি এক ধরনের প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে। এতে শরীরের বাড়তি পানি ও সোডিয়াম বের হয়ে যায়, কিডনির চাপও কমে।
তবে যাঁদের কিডনির দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা আছে, তাঁদের জন্য ঝুঁকি রয়ে গেছে। ডাক্তাররা তাই পরামর্শ দেন—ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া কফি না খাওয়াই ভালো।
কারা উপকার পাবেন
- • টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে থাকা মানুষ
- • হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখেন যারা
- • কর্মব্যস্ততায় অবসাদগ্রস্ত মানুষ, যাঁরা মানসিক সতেজতা চান
কারা সতর্ক থাকবেন
- • যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নেই
- • গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী নারী
- • যাঁরা ঘুমের সমস্যায় ভোগেন
- • দীর্ঘদিন ধরে কিডনির রোগে ভুগছেন যেসব রোগী
ঢাকা মেডিকেল কলেজের নেফ্রোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. ফারজানা হক বললেন,
“কফি ওষুধের মতো। সঠিক মাত্রায় উপকারী, কিন্তু বেশি হলে শরীরের ক্ষতি ডেকে আনে।”