এফবিআই-এর গোপন এক সূত্রের সহায়তায় রেকর্ড করা এনক্রিপ্টেড ফোন কল থেকেই মিশিগানে আইএসআইএস-এর পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনার তথ্য ফাঁস হয়। সোমবার প্রকাশিত ফেডারেল আদালতের এক অভিযোগপত্রে জানানো হয়েছে, এই কলগুলোর মাধ্যমেই তদন্তকারীরা ষড়যন্ত্রের মূল সূত্র ধরতে সক্ষম হন।
২০ বছর বয়সী মোহাম্মদ আলি ও মাজেদ মাহমুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে তারা “ফেডারেল সন্ত্রাসী অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি সংগ্রহ, স্থানান্তর এবং ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করেছেন।”
অভিযোগে আরও উল্লেখ আছে এক অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি, যাকে ‘পার্সন ১’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে, যদিও তাকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা হয়নি।
দুই মাস ধরে গোপনে নজরদারি
এফবিআই জানিয়েছে, দুই মাস ধরে সংস্থাটি আলি, মাহমুদ ও তাদের সহযোগীদের নজরদারিতে রেখেছিল। এই সময় তারা একাধিকবার শ্যুটিং রেঞ্জে অনুশীলন করে এবং রাতের বেলায় পার্কে গোপন বৈঠক করত।
তদন্তকারীরা ধারণা করেন, এই বৈঠকগুলোই ছিল হামলার প্রস্তুতি পর্ব। হ্যালোউইনের রাতে হামলার সম্ভাব্য ইঙ্গিত পাওয়ার পর, ৩১ অক্টোবর ভোররাতে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র জব্দ ও দুই তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তদন্তের সূচনা ও প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ
এফবিআই-এর হলফনামা অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ‘সহ–ষড়যন্ত্রী–১’ নামে পরিচিত এক ব্যক্তিকে নজরদারিতে আনা হয়, যিনি যুক্তরাষ্ট্র ও বিদেশে যাতায়াত করছিলেন। জুন মাসে তার ফোন সিগন্যাল মিশিগানের ডিয়ারবর্ন এলাকায় শনাক্ত হলে, কর্মকর্তারা শারীরিকভাবে নজরদারি শুরু করেন এবং দেখেন ওই ব্যক্তি আলির বাড়িতে দুই রাত অবস্থান করেন।
পরবর্তী মাসে তিনি বিদেশ থেকে পাঁচজনের সঙ্গে এক গ্রুপ কলে অংশ নেন, যেখানে এফবিআই-এর গোপন সূত্রও ছিলেন। আলোচনায় উঠে আসে, তারা একসঙ্গে সিরিয়ায় গিয়ে আইএসআইএস-এ যোগ দিতে চায়। কথোপকথনে “প্যারিস ২০১৫”–এর উল্লেখ ছিল, যা এফবিআই-এর বিশ্লেষণে ২০১৫ সালের প্যারিস হামলার ইঙ্গিত হিসেবে ধরা হয়।
অস্ত্র কেনা ও শ্যুটিং রেঞ্জে মহড়া
এফবিআই জানায়, জুনের পরবর্তী কয়েক মাসে আলি একটি বারেটা এ ৩০০ শটগান, একটি “সাব্রে” ১৬ ইঞ্চি রাইফেল এবং একটি হোলোগ্রাফিক সাইট ক্রয় করেন। মাহমুদও একটি রাইফেল ও ৮০০ রাউন্ডের বেশি গুলি ক্রয় করেন। অক্টোবর মাসে তিনি “রেড ডট সাইট” কেনেন, যা কাছ থেকে লক্ষ্যভেদে ব্যবহৃত হয়।
সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে তারা একাধিকবার স্থানীয় শ্যুটিং রেঞ্জে অনুশীলন করে। এফবিআই-এর কর্মকর্তারা গোপনে উপস্থিত থেকে তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন।
লক্ষ্যস্থল নির্বাচন: ক্লাব ও বার এলাকা
তদন্তপত্রে বলা হয়েছে, ২১ বছরের নিচে হওয়া সত্ত্বেও তিনজন সেপ্টেম্বর মাসে মিশিগানের ফার্নডেল এলাকায় যাওয়া শুরু করে—যা স্থানীয় বার ও ক্লাবের জন্য পরিচিত এবং যেখানে এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের উপস্থিতি বেশি।
পরের মাসে কর্মকর্তারা দেখেন, আলি, মাহমুদ ও পার্সন ১ রাতে ডিয়ারবর্নের এক পার্কে গোপনে মিলিত হয় এবং পরের সপ্তাহেও একইভাবে বৈঠক করে। যেহেতু তারা সবাই পরিবারের সঙ্গে বাস করত, এফবিআই মনে করে, অজান্তে পরিকল্পনা গোপন রাখতেই তারা পার্কে বৈঠক করত।
কোডওয়ার্ড ‘Pumpkin’: হামলার তারিখের ইঙ্গিত
আদালত অনুমোদিত নজরদারির মাধ্যমে এফবিআই তিনজনের ফোনালাপ রেকর্ড করে। সেখানে বারবার “Pumpkin” শব্দটি ব্যবহৃত হয়, যা কর্মকর্তাদের মতে “Halloween”–এর কোডওয়ার্ড ছিল।
২৪ অক্টোবর পার্সন ১ আলিকে বলে, “আমার ভাইদের সঙ্গে কথা হয়েছে, আমরা ‘Pumpkin’ করব।” এফবিআই মনে করে “ভাই” শব্দটি আইএসআইএস-এর সমর্থকদের ইঙ্গিত করে।
হ্যালোউইনের ভোরে অভিযান
অক্টোবরের শেষ দিকে আদালতের অনুমতি নিয়ে এফবিআই তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ৩১ অক্টোবর ভোরে ডেট্রয়েট উপশহরে অভিযান চালিয়ে ধোঁয়া বোমা ব্যবহার করে দুইজনকে আটক করা হয়।
এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল এক্স (টুইটার)-এ পোস্ট করে জানান, এই অভিযান একটি বড় সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে। তবে কিছু স্থানীয় বাসিন্দা এই গ্রেপ্তার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং দাবি করেন, এটি শহরের আরব বংশোদ্ভূত নাগরিকদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক হতে পারে।
আদালতে হাজিরা ও সম্ভাব্য শাস্তি
গ্রেপ্তারের পর সোমবার আলি ও মাহমুদ হাতকড়া পরা অবস্থায় আদালতে হাজির হন। দুজনই অভিযোগপত্র পড়েছেন এবং তা বুঝেছেন বলে জানান। তাদের আইনজীবীরা সাংবাদিকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্তভাবে কথা বললেও বিস্তারিত মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সহ–ষড়যন্ত্রী–১–এর বিরুদ্ধে এখনো মামলা দায়ের হয়নি।
যদি দোষী সাব্যস্ত হয়, আলি ও মাহমুদকে সর্বোচ্চ ১৫ বছর ফেডারেল কারাদণ্ড এবং ২,৫০,০০০ ডলার পর্যন্ত জরিমানার মুখোমুখি হতে হতে পারে।
#মিশিগান_সন্ত্রাস_ষড়যন্ত্র #এফবিআই_অভিযান #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















