০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫
১৫শ শতকের চিত্রশিল্পী কীভাবে এক সংশয়ীকে বিশ্বাস খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারেন? জাপানে সিচুয়ান ক্লাসিকের উমামি স্বাদ তেরো ভাষায় রোসালিয়ার ‘লাক্স’: নারীত্ব, বিশ্বাস ও প্রেমের নির্মমতার এক সঙ্গীতযাত্রা সিওরাক পর্বতের পাদদেশে ৫০০ বছরের পুরনো সাঙডোমুন গ্রাম , ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যের মিলনস্থল ডোপামিন ডিটক্স: অতিরিক্ত চিন্তা থামানোর এক বিজ্ঞানভিত্তিক উপায় এরি ক্যানাল: একটি মানবসৃষ্ট জলপথ যা আমেরিকাকে রূপান্তরিত করেছে বিএনপি প্রার্থী গুলিবিদ্ধ: নির্বাচন ঘিরে কোন অশনি সংকেত? দুর্যোগ পরবর্তী সহায়তা: একত্রিত হয়ে নতুন জীবন গড়ার সংগ্রাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জকসু নির্বাচন নিয়ে তীব্র বিতর্ক মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬৩)

থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়া সীমান্ত সংকটে ল্যান্ডমাইন বিতর্ক

থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়া সীমান্তে জুলাইয়ের শেষের দিকে সংঘর্ষ থেমে গেলেও ফু মাখুয়া অঞ্চল এখন নতুন করে আলোচনায়। থাই সরকার দাবি করছে, কাম্বোডিয়ান সেনারা এখানে নতুন ল্যান্ডমাইন পুঁতে রেখেছে। এই অভিযোগকে কেন্দ্র করেই থাইল্যান্ড আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রচারণা শুরু করেছে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে থাইল্যান্ডের অবস্থান পরিবর্তন

থাইল্যান্ড দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত বা নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যাগুলো দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধানের পক্ষে ছিল। কিন্তু এবার তারা বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে নিয়ে গেছে। সমালোচকদের মতে, এই অবস্থান পরিবর্তন আসলে “চেরি-পিকিং” – অর্থাৎ সুবিধাজনক সময়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা খোঁজা, আবার কখনো তা এড়িয়ে চলা।

ল্যান্ডমাইন আবিষ্কার ও অভিযোগ

থাই সেনারা সীমান্তের সিসাকেত প্রদেশের দুর্গম বনাঞ্চলে নতুন ল্যান্ডমাইন খুঁজে পেয়েছে বলে দাবি করছে। এগুলো মূলত সোভিয়েত নির্মিত PMN-2 ধরনের মাইন। থাই বাহিনীর অভিযোগ, এগুলো কাম্বোডিয়ান সেনারা নতুন করে পুঁতেছে।

Landmines highlight Thai 'cherry-picking' in Cambodian border crisis -  Nikkei Asia

থাইল্যান্ড বলছে, এভাবে মাইন বসানো ‘অটোয়া কনভেনশন’ তথা মাইন নিষিদ্ধকরণ চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন। থাই সেনাদের দাবি, ইতোমধ্যে যেসব এলাকা তারা মাইনমুক্ত ঘোষণা করেছিল, সেখানে আবার নতুন মাইন পাওয়া গেছে।

জেনেভায় থাইল্যান্ডের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা

এই সপ্তাহে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সাংগিয়ামপংসা জেনেভায় গিয়ে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের কাছে অভিযোগ তুলেছেন। তিনি জাতিসংঘের অটোয়া কনভেনশন বাস্তবায়ন কমিটির সঙ্গেও আলোচনা করেছেন।

তবে মানবাধিকার কর্মী এবং কূটনীতিকরা বলছেন, থাইল্যান্ড অতীতে সবসময় আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ এড়াতে চাইত, যেমনটি তারা দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্রোহ দমন বা সাম্প্রতিক সীমান্ত যুদ্ধের সময় করেছে। অথচ এবার তারা সুবিধাজনক মনে করায় আন্তর্জাতিক মহলে গিয়েছে। সমালোচকরা একে দ্বিচারিতা বা “চেরি-পিকিং” বলছেন।

মানবাধিকার সংস্থার সমালোচনা

Thai Soldiers Injured in Landmine Blast Near Cambodia Border - Bloomberg

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক সুনাই ফাসুক বলেছেন, থাইল্যান্ড আসলে নীতির প্রশ্নে নয়, বরং পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেদের স্বার্থে যে পথ বেশি লাভজনক, সেটিই বেছে নিচ্ছে। তিনি এটিকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রতি বেছে বেছে দৃষ্টিভঙ্গি বলেই আখ্যা দেন।

কাম্বোডিয়ার অস্বীকার

কাম্বোডিয়া সরকার এই অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, তাদের সেনারা নতুন কোনো মাইন পুঁতে রাখেনি এবং ভবিষ্যতেও তা করবে না। তারা অটোয়া কনভেনশন এবং যুদ্ধবিরতির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ বলে পুনর্ব্যক্ত করেছে।

দীর্ঘমেয়াদি সংকট ও মাইনের বোঝা

কাম্বোডিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বেশি ল্যান্ডমাইন আক্রান্ত দেশ। ‘ল্যান্ডমাইন মনিটর’ প্রতিবেদনের মতে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানে এখনো ৪২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা মাইনমুক্ত হয়নি। এসব মাইন মূলত ভিয়েতনাম যুদ্ধ এবং গৃহযুদ্ধের সময় পুঁতে রাখা হয়েছিল।

Thai soldiers salute with their weapons as then-prime minister Paetongtarn Shinawatra visits the Thailand-Cambodia border town of Aranyaprathet district on June 26. Photo: Reuters

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ড যে মাইনগুলো গণমাধ্যমে দেখিয়েছে সেগুলো ১৯৮০-এর দশকে তৈরি। কিছু মাইন আবার নিষ্ক্রিয় অবস্থায় বস্তার ভেতর পাওয়া গেছে। গবেষকদের মতে, এসব মাইনের অস্তিত্ব থাকারই কথা নয়।

সেনাদের হতাহতের ঘটনা

জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত থাই সেনাদের মধ্যে ১৩ জন মাইন বিস্ফোরণে আহত হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ছয়জনের একটি করে পা কেটে ফেলতে হয়েছে। এসব ঘটনার কারণে জনমনে ক্ষোভও বেড়েছে।

সীমান্ত যুদ্ধ ও ক্ষয়ক্ষতি

২৪ থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার মধ্যে টানা পাঁচ দিন তীব্র লড়াই চলে। এতে প্রায় ৪০ জন নিহত হয় এবং উভয় দেশে প্রায় ৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় মালয়েশিয়ায় শান্তি আলোচনার মাধ্যমে একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি হয়।

থাইল্যান্ডের অভিযোগ ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ এই সীমান্ত সংকটকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। তবে কাম্বোডিয়ার অস্বীকার, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার সমালোচনা এবং সীমান্ত অঞ্চলে চলমান ক্ষয়ক্ষতি—সব মিলিয়ে এই ইস্যুটি এখন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

১৫শ শতকের চিত্রশিল্পী কীভাবে এক সংশয়ীকে বিশ্বাস খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারেন?

থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়া সীমান্ত সংকটে ল্যান্ডমাইন বিতর্ক

০৭:২৩:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫

থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়া সীমান্তে জুলাইয়ের শেষের দিকে সংঘর্ষ থেমে গেলেও ফু মাখুয়া অঞ্চল এখন নতুন করে আলোচনায়। থাই সরকার দাবি করছে, কাম্বোডিয়ান সেনারা এখানে নতুন ল্যান্ডমাইন পুঁতে রেখেছে। এই অভিযোগকে কেন্দ্র করেই থাইল্যান্ড আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রচারণা শুরু করেছে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে থাইল্যান্ডের অবস্থান পরিবর্তন

থাইল্যান্ড দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত বা নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যাগুলো দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধানের পক্ষে ছিল। কিন্তু এবার তারা বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে নিয়ে গেছে। সমালোচকদের মতে, এই অবস্থান পরিবর্তন আসলে “চেরি-পিকিং” – অর্থাৎ সুবিধাজনক সময়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা খোঁজা, আবার কখনো তা এড়িয়ে চলা।

ল্যান্ডমাইন আবিষ্কার ও অভিযোগ

থাই সেনারা সীমান্তের সিসাকেত প্রদেশের দুর্গম বনাঞ্চলে নতুন ল্যান্ডমাইন খুঁজে পেয়েছে বলে দাবি করছে। এগুলো মূলত সোভিয়েত নির্মিত PMN-2 ধরনের মাইন। থাই বাহিনীর অভিযোগ, এগুলো কাম্বোডিয়ান সেনারা নতুন করে পুঁতেছে।

Landmines highlight Thai 'cherry-picking' in Cambodian border crisis -  Nikkei Asia

থাইল্যান্ড বলছে, এভাবে মাইন বসানো ‘অটোয়া কনভেনশন’ তথা মাইন নিষিদ্ধকরণ চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন। থাই সেনাদের দাবি, ইতোমধ্যে যেসব এলাকা তারা মাইনমুক্ত ঘোষণা করেছিল, সেখানে আবার নতুন মাইন পাওয়া গেছে।

জেনেভায় থাইল্যান্ডের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা

এই সপ্তাহে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সাংগিয়ামপংসা জেনেভায় গিয়ে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের কাছে অভিযোগ তুলেছেন। তিনি জাতিসংঘের অটোয়া কনভেনশন বাস্তবায়ন কমিটির সঙ্গেও আলোচনা করেছেন।

তবে মানবাধিকার কর্মী এবং কূটনীতিকরা বলছেন, থাইল্যান্ড অতীতে সবসময় আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ এড়াতে চাইত, যেমনটি তারা দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্রোহ দমন বা সাম্প্রতিক সীমান্ত যুদ্ধের সময় করেছে। অথচ এবার তারা সুবিধাজনক মনে করায় আন্তর্জাতিক মহলে গিয়েছে। সমালোচকরা একে দ্বিচারিতা বা “চেরি-পিকিং” বলছেন।

মানবাধিকার সংস্থার সমালোচনা

Thai Soldiers Injured in Landmine Blast Near Cambodia Border - Bloomberg

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক সুনাই ফাসুক বলেছেন, থাইল্যান্ড আসলে নীতির প্রশ্নে নয়, বরং পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেদের স্বার্থে যে পথ বেশি লাভজনক, সেটিই বেছে নিচ্ছে। তিনি এটিকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রতি বেছে বেছে দৃষ্টিভঙ্গি বলেই আখ্যা দেন।

কাম্বোডিয়ার অস্বীকার

কাম্বোডিয়া সরকার এই অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, তাদের সেনারা নতুন কোনো মাইন পুঁতে রাখেনি এবং ভবিষ্যতেও তা করবে না। তারা অটোয়া কনভেনশন এবং যুদ্ধবিরতির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ বলে পুনর্ব্যক্ত করেছে।

দীর্ঘমেয়াদি সংকট ও মাইনের বোঝা

কাম্বোডিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বেশি ল্যান্ডমাইন আক্রান্ত দেশ। ‘ল্যান্ডমাইন মনিটর’ প্রতিবেদনের মতে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানে এখনো ৪২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা মাইনমুক্ত হয়নি। এসব মাইন মূলত ভিয়েতনাম যুদ্ধ এবং গৃহযুদ্ধের সময় পুঁতে রাখা হয়েছিল।

Thai soldiers salute with their weapons as then-prime minister Paetongtarn Shinawatra visits the Thailand-Cambodia border town of Aranyaprathet district on June 26. Photo: Reuters

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ড যে মাইনগুলো গণমাধ্যমে দেখিয়েছে সেগুলো ১৯৮০-এর দশকে তৈরি। কিছু মাইন আবার নিষ্ক্রিয় অবস্থায় বস্তার ভেতর পাওয়া গেছে। গবেষকদের মতে, এসব মাইনের অস্তিত্ব থাকারই কথা নয়।

সেনাদের হতাহতের ঘটনা

জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত থাই সেনাদের মধ্যে ১৩ জন মাইন বিস্ফোরণে আহত হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ছয়জনের একটি করে পা কেটে ফেলতে হয়েছে। এসব ঘটনার কারণে জনমনে ক্ষোভও বেড়েছে।

সীমান্ত যুদ্ধ ও ক্ষয়ক্ষতি

২৪ থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার মধ্যে টানা পাঁচ দিন তীব্র লড়াই চলে। এতে প্রায় ৪০ জন নিহত হয় এবং উভয় দেশে প্রায় ৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় মালয়েশিয়ায় শান্তি আলোচনার মাধ্যমে একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি হয়।

থাইল্যান্ডের অভিযোগ ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ এই সীমান্ত সংকটকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। তবে কাম্বোডিয়ার অস্বীকার, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার সমালোচনা এবং সীমান্ত অঞ্চলে চলমান ক্ষয়ক্ষতি—সব মিলিয়ে এই ইস্যুটি এখন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।