বাংলাদেশে বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রতি মানুষের আগ্রহ তুলনামূলকভাবে কম। এর প্রধান কারণ হলো দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাব্যবস্থায় গবেষণা ও পরীক্ষামূলক শিক্ষার যথাযথ পরিবেশ তৈরি না হওয়া। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে বিজ্ঞানের বই পড়ানো হলেও ল্যাবরেটরি ভিত্তিক শিক্ষা ও কৌতূহল জাগানো কার্যক্রম সীমিত। ফলে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানের প্রতি বাস্তবমুখী আকর্ষণ পায় না।
অর্থনৈতিক ও কর্মসংস্থানের চাপ
অর্থনৈতিক বাস্তবতাও একটি বড় কারণ। অধিকাংশ শিক্ষার্থী দ্রুত কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে পড়াশোনা করে এবং বিজ্ঞানের মৌলিক গবেষণার প্রতি দীর্ঘমেয়াদি আগ্রহ তৈরি হয় না। গবেষণায় সময়, ধৈর্য ও অর্থের প্রয়োজন হলেও সমাজে এর তাৎক্ষণিক আর্থিক মূল্যায়ন কম হওয়ায় তরুণদের কাছে এটি তেমন আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে না।
রাষ্ট্র ও নীতিগত সীমাবদ্ধতা
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল, সুযোগ এবং প্রণোদনা না থাকাও আরেকটি কারণ। গবেষকরা প্রয়োজনীয় সহায়তা পান না, ফলে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান অনেক সময় কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও গবেষণার পরিবেশ উন্নত নয়, বরং তত্ত্বনির্ভর শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়।
সামাজিক মানসিকতা ও সচেতনতার অভাব
সমাজে বিজ্ঞানচর্চাকে প্রায়শই শুধু পরীক্ষায় পাশ করার একটি বিষয় হিসেবে দেখা হয়। বিজ্ঞানকে জীবনের সাথে মিশিয়ে দেখানোর চর্চা কম, ফলে সাধারণ মানুষ বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তাভাবনা ও গবেষণাকে তেমন গুরুত্ব দেয় না। আবার অনেক সময় কুসংস্কার ও ধর্মীয় ব্যাখ্যা বিজ্ঞানের জায়গা দখল করে নেয়, যা নতুন প্রজন্মের কৌতূহল কমিয়ে দেয়।
সুতরাং, শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা, আর্থিক চাপ, নীতিগত সীমাবদ্ধতা এবং সামাজিক মানসিকতা — সব মিলিয়ে বাংলাদেশের মানুষ বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও জ্ঞানের প্রতি তুলনামূলকভাবে কম আগ্রহী। এ অবস্থার পরিবর্তনে গবেষণাভিত্তিক শিক্ষা, তহবিল বৃদ্ধি এবং সমাজে বিজ্ঞানমুখী মানসিকতা তৈরির পদক্ষেপ জরুরি।