ঢাকায় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে শুক্রবার রাতের সহিংস ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই শনিবার সন্ধ্যার দিকে আবার সেখানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। কার্যালয়টিতে ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কার্যালয়ের সামনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন আছে। তবে কারা হামলাটি করেছে সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী অভিযোগ করেছেন, গণঅধিকার পরিষদের লোকজন এই হামলা চালিয়েছে।
এদিকে তাদের দলের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “আজ সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন লাগিয়েছে সন্ত্রাসীরা। গতকালও কয়েক দফা সন্ত্রাসী হামলা এবং মশাল মিছিল নিয়ে আগুন দিতে চেয়েছিলো তারা।”
জাতীয় পার্টির অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে গণ-অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা আমাদের বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পুরানা পল্টন, প্রেসক্লাব, মৎস্য ভবন, নয়া পল্টন হয়ে আমাদের দলীয় কার্যালয় গিয়ে শেষ করেছি। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলাম আমি। আমাদের মিছিল থেকে কোনো হামলা চালানো হয়নি।”
“এখন ছাত্র-জনতার অন্য কোনো মিছিল থেকে জাপা অফিসে হামলা চালানো হয়ে থাকতে পারে, সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারবো না-” বিবিসি বাংলাকে বলেন রাশেদ খান।
এদিকে, ঢাকার বাইরে আজ টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, রাজশাহীসহ বেশ কয়েকটি জেলায় জাতীয় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলার ঘটনাও গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।
এর আগে শুক্রবার রাতে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনাকে ঘিরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের মারধরে আহত নুরুল হক নুর। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
শনিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. জাহিদ রায়হান সাংবাদিকদের বলেন, “জ্ঞান ফিরলেও এখনো নুর শঙ্কামুক্ত নন। তার মাথার ভেতরে পানি জমাট বেঁধেছে।”
সেনাবাহিনী ও পুলিশের হামলায় নুর আহত হওয়ার পর গত রাত থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালন করতে দেখা গেছে।
এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া তৈরি হওয়ার পর শুক্রবার রাতেই আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর বা আইএসপিআর প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সেনাবাহিনীর অবস্থান জানায়। ঘটনাস্থলে ‘মব ভায়োলেন্সের’ মাধ্যমে পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা হয়েছে উল্লেখ করে আইএসপিআরের বিবৃতিতে বলা হয়, “জননিরাপত্তা রক্ষার্থে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বল প্রয়োগে বাধ্য হয়”।
তবে, সেনাবাহিনীর এই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাখ্যান করে গণঅধিকার পরিষদ বলেছে যে, জাতীয় পার্টিকে সুরক্ষা দিতেই নুরসহ গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের ওপর “সেনাবাহিনীর কতিপয় দুষ্কৃতিকারী” হামলা চালিয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসারত নুরুল হক নুরের সাথে শনিবার দুপুরে টেলিফোনে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এই ঘটনায় হাইকোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করার তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।
ওই সময়ের হামলার ভিডিওগুলো ছড়িয়ে পড়ছে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নুরের ওপর হামলা ঘিরে রাজনৈতিক সংকটের আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন কেউ কেউ।
বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর নেতারা রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বিবিসি বাংলাকে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকে ব্যহত করার জন্য রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থির করার জন্য একটা মহল কাজ করছে।”।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজনীতিতে বেশ কোণঠাসা অবস্থায় ছিল জাতীয় পার্টি। গত এক বছরে একাধিকবার জাতীয় পার্টির অফিসে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। শুক্রবার হঠাৎ পরিস্থিতি কেন এমন হলো সেই প্রশ্নও সামনে আছে।

শনিবার সকাল থেকে জাতীয় পার্টির কাকরাইল কার্যালয় ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়
রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রতিক্রিয়া
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের মারধরে আহত হওয়ার পর শনিবার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি এই ঘটনায় আইনসম্মত তদন্তের দাবি জানান সরকারের কাছে।
দুপুরে মি. নুরকে দেখতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল।
সেখান থেকে বেরিয়ে বিএনপি নেতা মি. খান সাংবাদিকদের বলেন, “এভাবে হামলার ঘটনা দেশের মানুষ মেনে নিতে পারে না, মেনে নেবে না। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই। এই অবিলম্বে এই ঘটনার তদন্ত চাই”।
নুরসহ গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের সেনাবাহিনী ও পুলিশের হামলার ঘটনায় শনিবার ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দুপুরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে এ কর্মসূচি থেকে হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান দলটির নেতারা।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এভাবে একটা দলের প্রধানকে নির্মমভাবে আঘাত করা হলো, তার সাথে ৫০ জন আহত হলো। এগুলো তো মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই”।
এর আগে শুক্রবার গভীর রাতে নুরসহ গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় বিক্ষোভ মিছিল করে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি।
এই ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বিবৃতিতে দলটির মুখপাত্র ও যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, “নুরের মতো একজন ফ্যাসিবাদ-বিরোধী নেতাকে রাস্তায় লাঠিপেটা করা স্পষ্টত জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি”।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন নুরুল হক নুর
বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুরুল হক নুরের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি টেলিফোনে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে নুরের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন এবং প্রয়োজনীয় সব ধরনের চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন।
নুরকে আহত করার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে শনিবার দুপুরে এক বিবৃতিতে অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, “কেবল নুরুল হক নূরের ওপরই নয়, এই ধরনের সহিংসতা ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের ঐতিহাসিক সংগ্রামে জাতিকে একত্রিত করা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্পিরিটের ওপরেও আঘাত বলে মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার”।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের জনগণকে আশ্বস্ত করছে যে, এই নৃশংস ঘটনার একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে সম্পন্ন করা হবে। প্রভাব বা পদমর্যাদা যাই হোক না কেন, জড়িত কোনো ব্যক্তি জবাবদিহিতা থেকে রেহাই পাবে না। স্বচ্ছতা এবং দ্রুততার সাথে এর বিচার সম্পন্ন করা হবে”।
বিবৃতিতে সরকার জানিয়েছে, নূর এবং তার দলের অন্যান্য আহত সদস্যদের চিকিৎসা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য একটি বিশেষায়িত মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে বিদেশে পাঠানো হবে।
এদিকে, এই ঘটনায় একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করার কথাও জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, “হাইকোর্টের একজন বিচারপতিকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটি ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করবে এবং দোষীদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করবে”।

শনিবার বিকেলে আবারো জাতীয় পার্টির অফিসে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে
জাপা-গণঅধিকার সংঘর্ষের নেপথ্যে কী?
শুক্রবার রাতে ঢাকার কাকরাইল এলাকায় জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে দুই দফায় সংঘর্ষ হয়।
মূলত সেই সংঘর্ষকে নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক দফায় চেষ্টা চালায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের মারধরে আহত হন নুরুল হক নুরসহ দলটির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন শুক্রবার রাতে বিবিসি বাংলাকে জানান, ওইদিন জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। “এ সময় আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা”- বলেন তিনি।
আর জাতীয় পার্টির অভিযোগ, গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা তাদের অফিসে আগুন দিতে চেয়েছিল যেখান থেকে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
আর এসময় “মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা”এবং “সংগঠিতভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ” হয়েছে বলে বিবৃতিতে বলেছে আইএসপিআর।
শনিবার জাতীয় পাটির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “কাল রাত সাড়ে সাতটার দিকে ঘোষণা দিয়ে আমাদের পার্টি অফিসের দিকে আসার চেষ্টা করা হয়। তখন পুলিশ সেটা ঠেকায়। আমাদের চোখের সামনে তাদেরকে আহত করার চেষ্টা হয়। তখন সেনাবাহিনী আসে”।
তিনি বলেন, “এরপর আমি শুনেছি ওখানে সেনাবাহিনীর ওপরও তারা (গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা) আঘাত করে, সেনাবাহিনীর ওপর মশাল ছুড়ে মারে। তখন সেনাবাহিনী ও পুলিশ লাঠি চার্জ করতে করতে নুরুদের অফিসের সামনে যায়”।
তবে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের মধ্যে রাজনৈতিক এই সংকট বেশ কিছুদিন থেকেই চলছে।
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর গত বছরের অক্টোবরের শেষে জাতীয় পার্টির কাকরাইল কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয়। সে সময় গণঅধিকার পরিষদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ উঠেছিল।
এরপর এ বছরের মে মাসে রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের রংপুরের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে বরিশালে বিক্ষোভ মিছিল ডাকে জাতীয় পার্টি। ওই মিছিলে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুই দলের বেশ বেশ কয়েকজন আহতও হন।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমাদের ওপর হামলার পর দুই দল পাল্টাপাল্টি মামলা করেছিল। কিন্তু পরে আমরা দেখি, নুরদের বিরুদ্ধে যে মামলাটা সেটা স্তিমিত হয়ে যায়। প্রশাসনে সেখান থেকেও একটা আদেশ আসছে বলে আমরা শুনেছি”।
“কোনো ক্ষেত্রে আমরা আগ বাড়িয়ে আমরা কাউকে অ্যাটাক করি না। আমাদের যখন আঘাত করা হয়েছে। আমরা প্রতিরক্ষা করেছি বার বার”, বলছিলেন মি. পাটোয়ারী।
এই রাজনৈতিক বিরোধের বাইরেও মি. পাটোয়ারীর দাবি, জাতীয় পার্টির আরেক অংশের একজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতার সাথে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরের ‘সখ্য’ রয়েছে। ওই নেতার ‘উসকানিতে’ এই হামলা হয়ে থাকতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
তবে গণঅধিকার পরিষদের অভিযোগ, জাতীয় পার্টিকে আগামী নির্বাচনে বিরোধী বানাতে চেষ্টা চালাচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থা। শনিবার ঢাকা মেডিকেলের সামনে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, “এই চক্রান্ত জনগণ রুখে দেবে”।

গত বছর জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে (ফাইল ছবি)
রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কা?
শুকবার রাতে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের মধ্যে সংঘর্ষ ও নুরুল হক নুরকে মারধরের ঘটনার সময় বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যম এই ঘটনাটি সরাসরি সম্প্রচার করছিল। সেই সব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এই ঘটনা নিয়ে নানা আলোচনা তৈরি হতে থাকে। বিশেষ করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবিসি বাংলাকে বলেন, “পরিস্থিতিকে অস্থির করার জন্য একটা মহল কাজ করছে। আমি ঠিক জানি না এক্সাক্টলি কারা এটা করছে। কিন্তু করা হচ্ছে এটা। এই ব্যাপারটা নিয়ে আমরা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন”।
প্রায় একই ধরনের শঙ্কার কথা বলছে জামায়াতে ইসলামীও। এটিকে শুধু দুটি দলের মধ্যে সংঘাত বা ঘটনাক্রমে নুর আহত হয়েছে বলেও মনে করছেন না দলটি।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এটা যে এ্যাক্সিডেন্টাল ঘটনা সেটাও মনে হচ্ছে না। একটার পর একটা ঘটনা ঘটছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটের দিকে যাচ্ছে মনে হয়। কে বা কারা এর পেছনে ইন্ধন যোগাচ্ছে”।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্টে কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন থেকে। এই নির্বাচন পেছানোর জন্যও ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে এমন আশঙ্কার কথাও কেউ কেউ জানিয়েছেন।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই ঘটনায় ঠিক নির্বাচন পেছানোর মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “শুক্রবারের ঘটনায় নানা রকম উসকানি আছে। এটা নিয়ে একটা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে নির্বাচনটা সময়মতো হবে কি হবে না। পরিস্থিতি ঘোলা করে নানা রকমের সুবিধা নিয়ে যারা লাভবান হয়, তারা এগুলো করে।”
তার মতে, কিছু রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি বা গোয়েন্দা সংস্থাও মাঝে মাঝে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করে এবং কাকরাইলে গণঅধিকার ও জাতীয় পার্টির সংঘর্ষের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
তাহলে কি এমন পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন পেছানো বা নির্বাচন নিয়ে কোনো জটিল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে? এই প্রশ্নে মি. আহমদ বলছেন, এই ঘটনা রাজনীতি বা আগামী নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
শুক্রবার রাতের ওই ঘটনার পর রোববার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির সাথে বৈঠক ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
বিবিসি নিউজ বাংলা
Sarakhon Report 


















