বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন শুধু বিনোদন নয়, বরং যোগাযোগ, ব্যবসা ও পারিবারিক সংযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হ্যাকার ও প্রতারক চক্র বারবার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর হ্যাক করছে এবং ভুক্তভোগীর পরিচিতদের কাছে টাকা দাবি করছে। বিশেষ করে “জরুরি ভিত্তিতে ১৫ হাজার টাকা পাঠান”—এই ধরনের বার্তা এখন প্রতারণার অন্যতম প্রচলিত কৌশল।
প্রতারণার ধরণ
হ্যাকিংয়ের পর ভুক্তভোগীর হোয়াটসঅ্যাপে প্রবেশ করে প্রতারকরা এক ধরনের জরুরি বার্তা পাঠায়। বার্তাগুলোতে সাধারণত বলা হয়, ভুক্তভোগী বিপদে আছেন, এখনই আর্থিক সাহায্য দরকার। যেহেতু বার্তাটি পরিচিত নাম্বার থেকেই আসে, প্রাপকরা সন্দেহ না করে দ্রুত টাকা পাঠিয়ে দেন। প্রতারকরা মোবাইল ব্যাংকিং বা নগদ, বিকাশ, রকেটের মাধ্যমে টাকা নেয়।
বাস্তব উদাহরণ
ঢাকার গুলশানের এক ব্যবসায়ী জানান, তার এক বন্ধুর নম্বর হ্যাক হওয়ার পর তিনি রাত ১০টার দিকে বার্তা পান—“আমি খুব বিপদে আছি, দয়া করে ১৫ হাজার টাকা পাঠান।” পরিচিতজন ভেবে তিনি টাকা পাঠিয়ে দেন। পরে ফোন করে বুঝতে পারেন এটি প্রতারণা। একইভাবে, চট্টগ্রামের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীও হ্যাকারদের ফাঁদে পড়ে বিকাশে ৮ হাজার টাকা পাঠান।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
আইটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখতে দুই-স্তরের ভেরিফিকেশন (two-step verification) বাধ্যতামূলক করা উচিত। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের এক কর্মকর্তা বলেন, “মানুষ সচেতন হলে এ ধরনের প্রতারণা অনেকাংশে কমে যাবে। প্রতারকরা মূলত মানুষের আতঙ্ক ও বিশ্বাসকে কাজে লাগায়।”
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরাও সতর্ক করছেন, হ্যাকাররা এখন শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নয়, ব্যাংকিং তথ্য বা ব্যক্তিগত ডকুমেন্ট হাতিয়ে নিতেও সক্রিয় হয়েছে। তাই সাধারণ মানুষকে আরও সতর্ক হতে হবে।
কেন বাংলাদেশে বাড়ছে
প্রচুর মোবাইল ব্যবহারকারী ও সহজ লক্ষ্য
অনেকেই শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন না
টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করেন না
অনেকে অচেনা লিঙ্কে ক্লিক করেন
প্রতারণা ধরা পড়লেও খুব কম ক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়
প্রতিরোধের উপায়
- • হোয়াটসঅ্যাপের টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করা
- • অচেনা লিঙ্ক বা ফাইল কখনোই না খোলা
- • টাকা পাঠানোর আগে ভুক্তভোগীর সঙ্গে সরাসরি ফোনে কথা বলা
- • পাসওয়ার্ড নিয়মিত পরিবর্তন করা
- • পরিবারের বয়স্ক বা প্রযুক্তি-অসচেতন সদস্যদের সচেতন করা
হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাকিং এখন বাংলাদেশের একটি বড় সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতারকরা একদিকে মানুষের আস্থা ভেঙে দিচ্ছে, অন্যদিকে অনেককে আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলছে। তবে সচেতনতা বাড়ানো এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিরাপত্তা জোরদার করলে এই প্রতারণা রোধ করা সম্ভব।