০৪:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
আদানিকে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের সিদ্ধান্ত ইসলামাবাদ আদালতের বাইরে আত্মঘাতী হামলায় নিহত ১২, আহত ২৭ গ্লোবাল ফাইন্যান্সের মূল্যায়নে ‘সি’ গ্রেড পেলেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর পাকিস্তান ২৭তম সংশোধনী বিল অনুমোদিত, বাড়বে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতাও বিচার বিভাগে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ মোহাম্মদপুরে ছাত্রদল নেতার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার বাংলাদেশে আসছেন পাকিস্তানের জামিয়াতে উলেমা-ই-ইসলাম প্রধান মৌলানা ফজলুর রহমান মুদ্রাস্ফীতির সময় টিআইপিএস বন্ডের সীমাবদ্ধতা  আফগান-পাকিস্তান আলোচনায় অচলাবস্থা: সীমান্তে আবারও সংঘাতের আশঙ্কা দুবাই মেট্রোর ব্লু লাইন নির্মাণে নতুন ১০টির বেশি সড়ক পরিবর্তন ‘ঠান্ডায় খাও, জ্বরে উপোস’—প্রচলিত ধারণার পেছনের আসল সত্য

পাকিস্তানের তিন কিংবদন্তি ক্রিকেটার: ওয়াসিম আকরাম, ইমরান খান ও জাভেদ মিয়াঁদাদ

পাকিস্তান ক্রিকেট ইতিহাসে এমন অনেক নক্ষত্র রয়েছেন, যারা নিজেদের অসাধারণ প্রতিভা, নেতৃত্বগুণ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে দাগ কেটেছেন। তাঁদের মধ্যে ওয়াসিম আকরাম, ইমরান খান এবং জাভেদ মিয়াঁদাদকে সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারদের তালিকায় রাখা হয়। এ তিনজন শুধু পাকিস্তান নয়, বিশ্ব ক্রিকেটকেও সমৃদ্ধ করেছেন তাঁদের অনন্য দক্ষতা ও অবদানে।

ওয়াসিম আকরাম: সুইংয়ের জাদুকর

ওয়াসিম আকরামকে ক্রিকেট বিশ্বে বলা হয় “সুইংয়ের সুলতান”। বাঁ-হাতি ফাস্ট বোলার হিসেবে তিনি ছিলেন একেবারেই ভিন্ন মাত্রার। নতুন বল যেমন দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে পারতেন, তেমনি রিভার্স সুইং দিয়েও ভয় ধরাতেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের মনে।

তিনি পাকিস্তানের হয়ে ১৯৮৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক করেন এবং দ্রুতই বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর বোলার হিসেবে পরিচিতি পান। ওডিআই ও টেস্ট ক্রিকেট মিলিয়ে তিনি ৯০০-এর বেশি আন্তর্জাতিক উইকেট নিয়েছেন। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ জয়ে তাঁর অবদান ছিল অসাধারণ। বিশেষ করে ফাইনালে তাঁর করা দুটি দ্রুত উইকেট পাকিস্তানকে শিরোপার পথে নিয়ে গিয়েছিল।

ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যান ও রেকর্ড

  • টেস্ট: ১০৪ ম্যাচ, ৪১৪ উইকেট, সেরা বোলিং ৭/১১৯, ৩ সেঞ্চুরি
  • ওডিআই: ৩৫৬ ম্যাচ, ৫০২ উইকেট (প্রথম বোলার হিসেবে ৫০০ উইকেট), সেরা বোলিং ৫/১৫
  • বিশ্বকাপ: ৩৮ ম্যাচ, ৫৫ উইকেট (১৯৯২ ফাইনালে ম্যান অব দ্য ম্যাচ)
  • প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে ১০০০-এর বেশি উইকেট

ইমরান খান: নেতা ও অনুপ্রেরণা

ইমরান খান পাকিস্তান ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক হিসেবে বিবেচিত। তিনি শুধু অসাধারণ অলরাউন্ডারই ছিলেন না, মাঠে নেতৃত্ব দিয়ে পুরো দলকে একত্রিত করার ক্ষমতা রাখতেন। ১৯৭১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর ধীরে ধীরে তিনি পাকিস্তান দলের নির্ভরযোগ্য বোলার, ব্যাটার ও পরে অধিনায়ক হয়ে ওঠেন।

১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে প্রথমবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করে তিনি চিরকালীন নায়কে পরিণত হন। “করো বা মরো” মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করে তিনি তরুণ খেলোয়াড়দের লড়াইয়ের মানসিকতা গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর সময়ে ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, ইনজামাম-উল-হক প্রমুখ কিংবদন্তিরা গড়ে ওঠেন। ইমরান খানের অবদান শুধু মাঠেই সীমাবদ্ধ নয়—তিনি পাকিস্তানে ক্রিকেটকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান।

ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যান ও রেকর্ড

  • টেস্ট: ৮৮ ম্যাচ, ৩৬২ উইকেট, ৬ সেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ রান ১৩৬*
  • ওডিআই: ১৭৫ ম্যাচ, ১৮২ উইকেট, ১ সেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ রান ১০২*
  • বিশ্বকাপ ১৯৯২: ৮ ম্যাচে ১৮৫ রান ও ৭ উইকেট, দলকে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা উপহার
  • ক্যারিয়ারে ৩৬০০+ টেস্ট রান ও ৫০০০+ আন্তর্জাতিক রান

জাভেদ মিয়াঁদাদ: পাকিস্তানের ভরসা

জাভেদ মিয়াঁদাদ পাকিস্তান ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। তাঁর ব্যাটিং স্টাইল ছিল স্বতন্ত্র, ঠাণ্ডা মাথার খেলা এবং পরিস্থিতি বুঝে ম্যাচ শেষ করার দক্ষতা তাঁকে বিশেষ উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। ১৯৭৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক করা এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান পাকিস্তানের ব্যাটিং ভরসা হিসেবে দুই দশক দাপটের সঙ্গে খেলেছেন।

মিয়াঁদাদের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত আসে ১৯৮৬ সালে, যখন তিনি ভারতের বিপক্ষে শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে পাকিস্তানকে জয় এনে দেন। এই ইনিংস তাঁকে পাকিস্তানি সমর্থকদের হৃদয়ে স্থায়ীভাবে স্থান দিয়েছে। টেস্টে তাঁর ব্যাটিং গড় দীর্ঘ সময় ধরে ৫০-এর আশেপাশে ছিল, যা তাঁর ধারাবাহিকতার প্রমাণ।

ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যান ও রেকর্ড

  • টেস্ট: ১২৪ ম্যাচ, ৮,৮৩২ রান, ২৩ সেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ ইনিংস ২৮০*
  • ওডিআই: ২৩৩ ম্যাচ, ৭,৩৮১ রান, ৮ সেঞ্চুরি, ৫০ হাফ-সেঞ্চুরি
  • ৬টি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ (১৯৭৫–১৯৯৬), বিশ্বকাপে ১,০৮৩ রান
  • ১৯৮৬ সালের শারজাহ ফাইনালে শেষ বলে ছক্কা—ক্যারিয়ারের অন্যতম আইকনিক মুহূর্ত

ওয়াসিম আকরাম, ইমরান খান ও জাভেদ মিয়াঁদাদ—এঁরা তিনজন পাকিস্তান ক্রিকেটকে বিশ্বমঞ্চে সম্মানের আসনে বসিয়েছেন। তাঁদের নেতৃত্ব, ব্যাটিং ও বোলিং দক্ষতা শুধু পাকিস্তান নয়, সমগ্র ক্রিকেট বিশ্বকে সমৃদ্ধ করেছে। একে অপরের ভিন্ন ভূমিকায় হলেও তাঁরা একসঙ্গে পাকিস্তানের সোনালি যুগের প্রতীক। আজও তাঁদের স্মৃতি ক্রিকেটপ্রেমীদের অনুপ্রেরণা জোগায়।

জনপ্রিয় সংবাদ

আদানিকে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের সিদ্ধান্ত

পাকিস্তানের তিন কিংবদন্তি ক্রিকেটার: ওয়াসিম আকরাম, ইমরান খান ও জাভেদ মিয়াঁদাদ

১২:০০:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পাকিস্তান ক্রিকেট ইতিহাসে এমন অনেক নক্ষত্র রয়েছেন, যারা নিজেদের অসাধারণ প্রতিভা, নেতৃত্বগুণ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে দাগ কেটেছেন। তাঁদের মধ্যে ওয়াসিম আকরাম, ইমরান খান এবং জাভেদ মিয়াঁদাদকে সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারদের তালিকায় রাখা হয়। এ তিনজন শুধু পাকিস্তান নয়, বিশ্ব ক্রিকেটকেও সমৃদ্ধ করেছেন তাঁদের অনন্য দক্ষতা ও অবদানে।

ওয়াসিম আকরাম: সুইংয়ের জাদুকর

ওয়াসিম আকরামকে ক্রিকেট বিশ্বে বলা হয় “সুইংয়ের সুলতান”। বাঁ-হাতি ফাস্ট বোলার হিসেবে তিনি ছিলেন একেবারেই ভিন্ন মাত্রার। নতুন বল যেমন দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে পারতেন, তেমনি রিভার্স সুইং দিয়েও ভয় ধরাতেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের মনে।

তিনি পাকিস্তানের হয়ে ১৯৮৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক করেন এবং দ্রুতই বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর বোলার হিসেবে পরিচিতি পান। ওডিআই ও টেস্ট ক্রিকেট মিলিয়ে তিনি ৯০০-এর বেশি আন্তর্জাতিক উইকেট নিয়েছেন। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ জয়ে তাঁর অবদান ছিল অসাধারণ। বিশেষ করে ফাইনালে তাঁর করা দুটি দ্রুত উইকেট পাকিস্তানকে শিরোপার পথে নিয়ে গিয়েছিল।

ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যান ও রেকর্ড

  • টেস্ট: ১০৪ ম্যাচ, ৪১৪ উইকেট, সেরা বোলিং ৭/১১৯, ৩ সেঞ্চুরি
  • ওডিআই: ৩৫৬ ম্যাচ, ৫০২ উইকেট (প্রথম বোলার হিসেবে ৫০০ উইকেট), সেরা বোলিং ৫/১৫
  • বিশ্বকাপ: ৩৮ ম্যাচ, ৫৫ উইকেট (১৯৯২ ফাইনালে ম্যান অব দ্য ম্যাচ)
  • প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে ১০০০-এর বেশি উইকেট

ইমরান খান: নেতা ও অনুপ্রেরণা

ইমরান খান পাকিস্তান ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক হিসেবে বিবেচিত। তিনি শুধু অসাধারণ অলরাউন্ডারই ছিলেন না, মাঠে নেতৃত্ব দিয়ে পুরো দলকে একত্রিত করার ক্ষমতা রাখতেন। ১৯৭১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর ধীরে ধীরে তিনি পাকিস্তান দলের নির্ভরযোগ্য বোলার, ব্যাটার ও পরে অধিনায়ক হয়ে ওঠেন।

১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে প্রথমবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করে তিনি চিরকালীন নায়কে পরিণত হন। “করো বা মরো” মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করে তিনি তরুণ খেলোয়াড়দের লড়াইয়ের মানসিকতা গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর সময়ে ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, ইনজামাম-উল-হক প্রমুখ কিংবদন্তিরা গড়ে ওঠেন। ইমরান খানের অবদান শুধু মাঠেই সীমাবদ্ধ নয়—তিনি পাকিস্তানে ক্রিকেটকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান।

ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যান ও রেকর্ড

  • টেস্ট: ৮৮ ম্যাচ, ৩৬২ উইকেট, ৬ সেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ রান ১৩৬*
  • ওডিআই: ১৭৫ ম্যাচ, ১৮২ উইকেট, ১ সেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ রান ১০২*
  • বিশ্বকাপ ১৯৯২: ৮ ম্যাচে ১৮৫ রান ও ৭ উইকেট, দলকে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা উপহার
  • ক্যারিয়ারে ৩৬০০+ টেস্ট রান ও ৫০০০+ আন্তর্জাতিক রান

জাভেদ মিয়াঁদাদ: পাকিস্তানের ভরসা

জাভেদ মিয়াঁদাদ পাকিস্তান ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। তাঁর ব্যাটিং স্টাইল ছিল স্বতন্ত্র, ঠাণ্ডা মাথার খেলা এবং পরিস্থিতি বুঝে ম্যাচ শেষ করার দক্ষতা তাঁকে বিশেষ উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। ১৯৭৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক করা এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান পাকিস্তানের ব্যাটিং ভরসা হিসেবে দুই দশক দাপটের সঙ্গে খেলেছেন।

মিয়াঁদাদের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত আসে ১৯৮৬ সালে, যখন তিনি ভারতের বিপক্ষে শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে পাকিস্তানকে জয় এনে দেন। এই ইনিংস তাঁকে পাকিস্তানি সমর্থকদের হৃদয়ে স্থায়ীভাবে স্থান দিয়েছে। টেস্টে তাঁর ব্যাটিং গড় দীর্ঘ সময় ধরে ৫০-এর আশেপাশে ছিল, যা তাঁর ধারাবাহিকতার প্রমাণ।

ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যান ও রেকর্ড

  • টেস্ট: ১২৪ ম্যাচ, ৮,৮৩২ রান, ২৩ সেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ ইনিংস ২৮০*
  • ওডিআই: ২৩৩ ম্যাচ, ৭,৩৮১ রান, ৮ সেঞ্চুরি, ৫০ হাফ-সেঞ্চুরি
  • ৬টি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ (১৯৭৫–১৯৯৬), বিশ্বকাপে ১,০৮৩ রান
  • ১৯৮৬ সালের শারজাহ ফাইনালে শেষ বলে ছক্কা—ক্যারিয়ারের অন্যতম আইকনিক মুহূর্ত

ওয়াসিম আকরাম, ইমরান খান ও জাভেদ মিয়াঁদাদ—এঁরা তিনজন পাকিস্তান ক্রিকেটকে বিশ্বমঞ্চে সম্মানের আসনে বসিয়েছেন। তাঁদের নেতৃত্ব, ব্যাটিং ও বোলিং দক্ষতা শুধু পাকিস্তান নয়, সমগ্র ক্রিকেট বিশ্বকে সমৃদ্ধ করেছে। একে অপরের ভিন্ন ভূমিকায় হলেও তাঁরা একসঙ্গে পাকিস্তানের সোনালি যুগের প্রতীক। আজও তাঁদের স্মৃতি ক্রিকেটপ্রেমীদের অনুপ্রেরণা জোগায়।