আলোচনার জরুরি প্রয়োজন

ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (IAEA) প্রধান রাফায়েল গ্রসি জানিয়েছেন, ইরানের সাথে পারমাণবিক স্থাপনায় পরিদর্শন পুনরায় শুরু নিয়ে আলোচনা অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে পারে না। তিনি চান, আসন্ন কয়েক দিনের মধ্যেই একটি সমঝোতা হোক এবং আগামী সপ্তাহের আগেই নতুন করে পরিদর্শন শুরু করা যায়।

ইরানের আইন ও নতুন বাধা

ইসরায়েল গত ১৩ জুন ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় আক্রমণ চালানোর পর থেকে IAEA কোনো তথ্য পায় নি ইরানের উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদের অবস্থা নিয়ে। এদিকে তেহরান একটি আইন পাস করেছে, যাতে IAEA-এর সাথে সহযোগিতা স্থগিত রাখা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যে কোনো পরিদর্শনের জন্য ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। এই পরিস্থিতিতে তেহরান ও IAEA এখন আলোচনা করছে কিভাবে পরিদর্শন কার্যক্রম আবার শুরু করা যায়।

সীমিত পরিদর্শন

গ্রসি জানান, প্রযুক্তিগতভাবে ইরানে কিছু পরিদর্শন শুরু হয়েছে। সম্প্রতি বুশেহরে ইরানের একমাত্র কার্যকর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে IAEA দল কাজ করেছে। তবে সেটি প্রসারণ ঝুঁকির দিক থেকে খুবই সামান্য গুরুত্ব বহন করে এবং সাধারণত সংস্থার ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে তা স্থান পায় না।

ইউরেনিয়াম মজুদের অনিশ্চয়তা

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণে ইরানের তিনটি সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। তবে ইরানের উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদের বর্তমান অবস্থা অস্পষ্ট।
গোপন একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের আক্রমণের দিন ইরানের হাতে ছিল ৪৪০.৯ কেজি ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম: যা আরও সমৃদ্ধ করলে অন্তত ১০টি পারমাণবিক বোমা তৈরির মতো যথেষ্ট। এর আগে জানা ছিল ৯টি বোমা তৈরির মতো উপাদান রয়েছে।

গ্রসি বলেন, সাধারণ ধারণা হলো মজুদ উপাদান অধিকাংশই এখনও আছে, তবে তা যাচাই করা জরুরি। কিছু হয়তো নষ্ট হয়েছে, কিন্তু বড় ধরনের সরানো হয়েছে এমন প্রমাণ নেই। চুক্তি হলে ইরানের হাতে কয়েক সপ্তাহ সময় থাকবে IAEA-কে হালনাগাদ হিসাব দেওয়ার জন্য।

ইরানের গোপনীয়তার দাবি

নতুন আইনে কীভাবে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন কার্যকর হবে তা এখনও অস্পষ্ট। ইরান বলছে, সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের অবস্থান গোপন রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তবে গ্রসি মনে করিয়ে দেন, আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা অপরিবর্তিত রয়েছে—দেশীয় আইন কেবল ইরানের জন্য প্রযোজ্য, IAEA-এর জন্য নয়।

কূটনীতির সুযোগ, তবে সময়সীমা আছে

IAEA জুলাই মাসের শেষের দিকে ইরানকে পরিদর্শনের নোটিশ দেয়। সাধারণত এক মাসের বেশি সময় যাচাই ছাড়াই রাখা যায় না। তবে সংকট না বাড়াতে সংস্থাটি এখনো আলোচনার পথেই আছে। গ্রসি বলেন, তিনি সবসময় কূটনীতির সুযোগ রাখতে চান, কিন্তু তা যুক্তিসঙ্গত সময়সীমার মধ্যেই হতে হবে।

তিনি আরও স্পষ্ট করেছেন, মার্কিন ও ইসরায়েলি হামলায় ইরানের নতুন সমৃদ্ধকরণ যন্ত্র তৈরির সক্ষমতা সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যায়নি।

আসন্ন বোর্ড বৈঠকের আগে আশা

IAEA-এর ৩৫ সদস্যের বোর্ড আগামী সপ্তাহে বৈঠক করবে। এর আগে গ্রসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দুটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন, যেখানে বলা হয়েছে দ্রুত সমঝোতা দরকার এবং ইরানের উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ আন্তর্জাতিক উদ্বেগের বিষয়।

গ্রসি জানান, তিনি এখনো আশাবাদী যে বোর্ড বৈঠকের আগে সমঝোতা সম্ভব।

গ্রসির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

গ্রসি দীর্ঘদিন ধরেই জাতিসংঘের মহাসচিব পদে প্রার্থী হওয়ার কথা বিবেচনা করছিলেন। এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত করেছেন, আগামী বছর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী হবেন।