কুমিল্লা–ব্রাহ্মণবাড়িয়া আঞ্চলিক মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার বহুল প্রতীক্ষিত প্রকল্পটি মাঝপথেই থেমে আছে। ভারতীয় ঋণ ও ঠিকাদার নির্ভর এ প্রকল্পে মাঠপর্যায়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। দীর্ঘ বিলম্বে সড়কের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে, আর প্রতিদিন ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ যাত্রী ও চালকেরা।
প্রকল্প অনুমোদন ও লক্ষ্য
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল ৪ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা এবং ভারতের লাইনে অব ক্রেডিট (LoC) থেকে ২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা আসার কথা ছিল।
লক্ষ্য ছিল ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করা।
প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের উন্নতি হতো। আখাউড়া স্থলবন্দর ও আশুগঞ্জ নদীবন্দর হয়ে ভারতের সঙ্গে আঞ্চলিক বাণিজ্যে নতুন গতি সঞ্চার হওয়ার কথা ছিল।
কাজ থেমে যাওয়ার কারণ
ভারতীয় ঋণের কারণে সেখানে ভারতীয় ঠিকাদারদের অংশগ্রহণ নির্ধারিত ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনেও মাঠপর্যায়ে কোনো কাজ শুরু হয়নি। গাছ কাটা ছাড়া প্রকল্পে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।

সাম্প্রতিক আন্দোলনের পর ভারতীয় ঠিকাদাররা কার্যত সরে গেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রকল্প কার্যত ঝুলে আছে।
দুর্ঘটনা ও যানজট বাড়ছে
প্রকল্প থমকে যাওয়ার কারণে মহাসড়কের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। দুই বছরের বেশি সময় সংস্কার না হওয়ায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে খাঁদ–খাঁদুনি তৈরি হয়েছে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে।
মাত্র ৩৮ কিলোমিটার অংশেই ১০৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৯২ জন। প্রতিদিন যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকেরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকছেন। জনদুর্ভোগ এখন তীব্র আকার ধারণ করেছে।
স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
গত ২৭ আগস্ট ময়নামতি থেকে কোম্পানীগঞ্জ পর্যন্ত নয়টি স্থানে স্থানীয় বাসিন্দারা অবরোধ গড়ে তোলেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সরকার ও প্রশাসনের আশ্বাসে আন্দোলনকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন।
কর্তৃপক্ষ কী বলছে
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আপাতত স্বল্পমেয়াদি সংস্কারকাজ শুরু করা হবে, যাতে যান চলাচল নির্বিঘ্ন থাকে। তবে ভারতের অংশগ্রহণ না থাকায় প্রকল্পের মূল কাঠামোগত উন্নয়ন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, তারা এই প্রকল্পে আর ঋণ বা বিনিয়োগ করবে না। ফলে সরকার এখন বিকল্প বিনিয়োগকারীর সন্ধান করছে।
সংক্ষিপ্ত চিত্র
- • ব্যয়: ৭,১৮৮ কোটি টাকা
- • অর্থায়ন: ৪,৩৭৮ কোটি (সরকার), ২,৮১০ কোটি (ভারতীয় LoC)
- • সময়সীমা: ২০২২–২০২৬
- • অগ্রগতি: গাছ কাটা ছাড়া কোনো বাস্তব কাজ হয়নি
- • সমস্যা: ভারতীয় অংশগ্রহণ বন্ধ, প্রশাসনিক জটিলতা, আন্দোলন
- • জনদুর্ভোগ: অন্তত ৯২ মৃত্যু, শতাধিক দুর্ঘটনা, দীর্ঘ যানজট
করণীয়
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জরুরি ভিত্তিতে কিছু অংশে অস্থায়ী সংস্কার জরুরি। পাশাপাশি বিকল্প অর্থায়নসূত্র খুঁজে বের করতে হবে—আন্তর্জাতিক সংস্থা, পাবলিক–প্রাইভেট পার্টনারশিপ (PPP) বা অভ্যন্তরীণ বাজেট।
এ ছাড়া স্থানীয় জনগণ, প্রশাসন ও সওজের মধ্যে সরাসরি তথ্যপ্রবাহ জোরদার করা এবং দুর্ঘটনা কমাতে নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















