নগরকেন্দ্রে ভাড়া বৃদ্ধির ধাক্কা
জাপানের বড় শহরগুলো—বিশেষত টোকিও ও ওসাকা—আবারও মানুষের ভিড়ে ভরতে শুরু করেছে। কর্মসংস্থান ও অফিসে ফেরা শহরমুখী প্রবণতা ভাড়া বাড়িয়েছে, যা পরিবারগুলোর বাজেটে চাপ তৈরি করছে এবং ভবিষ্যতে বাড়ি কেনার জন্য সঞ্চয়ের সুযোগ সীমিত করছে।
আয়ের তুলনায় ভাড়ার অংশ
২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ভাড়ার খরচ গড় আয়ের তুলনায় ১ থেকে ৫ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ থেকে ৩৪ শতাংশে। টোকিওর ২৩টি কেন্দ্রীয় ওয়ার্ডে এ হার ৩০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। কনডোমিনিয়ামের দাম বেড়ে যাওয়ায় আরও বেশি মানুষ ভাড়ায় থাকতে বাধ্য হচ্ছে, ফলে দাম আরও বাড়ছে।

পরিবারের বাস্তব সংকট
কানাগাওয়া প্রিফেকচারে বসবাসরত পঞ্চাশোর্ধ্ব এক দম্পতি পাঁচ বছর আগে শহর ছেড়ে বাইরে চলে গেলেও আবার টোকিওতে ফিরতে চান। তাদের সন্তানের জন্য অন্তত ৭০ বর্গমিটার ফ্ল্যাট প্রয়োজন। কিন্তু ভালো স্থানে এ আকারের ফ্ল্যাটের ভাড়া মাসে ৩ লাখ ইয়েন (প্রায় ২ হাজার ডলার) ছাড়িয়ে যায়। বার্ষিক আয় ১ কোটি ইয়েনের বেশি হলেও সন্তান পালনের শিক্ষাখরচ বিবেচনায় তারা এমন ভাড়া বহন করতে অক্ষম মনে করছেন।
ভাড়ার হার ও শহরভিত্তিক চিত্র
রিয়েল এস্টেট সেবা প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাট হোম’-এর হিসাব অনুযায়ী, টোকিও, ওসাকা, নাগোয়া, সাপ্পোরো ও ফুকুওকায় ৫০ থেকে ৭০ বর্গমিটারের পারিবারিক অ্যাপার্টমেন্টের গড় ভাড়া আয়ের তুলনায় বেড়েছে। ২০২০ সালে মহামারির সময় দূরবর্তী কাজের কারণে শহরতলিতে চাহিদা বাড়লেও মহামারি শেষে অফিসে ফেরা শুরু হওয়ায় শহরের কেন্দ্রে ভাড়া দ্রুত বাড়ছে।
টোকিওর ২৩ ওয়ার্ডে পরিবারের জন্য অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া মাসে ২ লাখ ১০ হাজার ইয়েন ছাড়িয়েছে, যা আয়ের প্রায় ৩৪ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
অর্থ পরিকল্পনাকারী হিরোকাজু ফুচিনোয়ে বলেন, পরিবারের আয়ের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের বেশি ভাড়া হওয়া উচিত নয়। এর বেশি হলে আর্থিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়। বাড়ির মালিক না হলে উচ্চ ভাড়া ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ সঞ্চয় কমে যায় এবং হঠাৎ চিকিৎসা, বেকারত্ব বা শিক্ষার খরচ সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
শহরভিত্তিক অবস্থা
ওসাকায় ভাড়া আয়ের ২৯ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। ফুকুওকায় সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি হয়েছে—২০২০ সালের তুলনায় ৫.৪ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে ২৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
দ্বৈত আয় পরিবার ও ভাড়ার চাহিদা
‘অ্যাট হোম’-এর জুনকো ইওয়াসাকি জানান, এখন অনেক দ্বৈত আয় দম্পতি বাড়ি কেনার বদলে শহরের কেন্দ্রে ভাড়া নিতে আগ্রহী। দুজনেরই চাকরি থাকায় তারা যাতায়াত সুবিধা অগ্রাধিকার দেন। আগে এসব দম্পতি মালিকানা পছন্দ করলেও সম্পত্তির দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় এখন তারা ভাড়ার দিকে ঝুঁকছেন তারা।
২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে টোকিওর ২৩ ওয়ার্ডে পরিবারের জন্য ফ্ল্যাটের ভাড়া প্রায় ১৭ শতাংশ বেড়েছে, অথচ একই সময়ে নতুন কনডোমিনিয়ামের দাম ৪৫ শতাংশ লাফিয়ে উঠেছে। ফলে অনেক সচ্ছল পরিবারও বাড়ি কেনার বদলে ভাড়ায় থাকতে বাধ্য হচ্ছে, যা ভাড়ার বাজারে আরও চাপ তৈরি করছে।

ভাড়া বৃদ্ধির চক্র ও ভবিষ্যত অনিশ্চয়তা
বিদ্যুৎ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বাড়ায় অনেক বাড়ির মালিক ভাড়া আরও বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অথচ পরিবারগুলো একই সময়ে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি ও স্থবির মজুরির চাপও সহ্য করছে।
ফুচিনোয়ে বলেন, শহরের কেন্দ্রে ভাড়া বৃদ্ধি আপাতত চলবেই। ফলে পরিবারগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কি ভবিষ্যতের আয়ের ভিত্তিতে সুবিধাজনক স্থানে থাকতে চায়, নাকি শহরের বাইরে গিয়ে সঞ্চয়ের সুযোগ তৈরি করবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















