জাপানের ন্যাশনাল পুলিশ এজেন্সি (এনপিএ) ও ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) যৌথভাবে এক আন্তর্জাতিক প্রতারণা চক্রকে শনাক্ত করেছে। এ অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা দিয়েছে মাইক্রোসফট ও বেসরকারি খাতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। প্রতারণা চক্রটি ভারতের ভেতর থেকে পরিচালিত হতো এবং জাপানি নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করেছিল।
প্রতারণার ধরণ ও গ্রেপ্তার
প্রতারকরা মিথ্যা দাবি করত যে ভুক্তভোগীদের কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এরপর তারা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিত। মাইক্রোসফটের প্রতিনিধি পরিচয়ে কাজ করা এই দলটি প্রায় ২০০ জন জাপানি নাগরিকের কাছ থেকে প্রায় ১৮০ মিলিয়ন ইয়েন (প্রায় ১.২১ মিলিয়ন ডলার) আত্মসাৎ করেছে। এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

প্রথম আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক অভিযান
চলতি বছরের মে মাসে প্রথমবারের মতো জাপানি পুলিশ কোনো বিদেশভিত্তিক প্রতারণা কেন্দ্রকে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে উন্মোচন করল। এতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বাধীন অনুসন্ধান ছিল বড় সহায়ক শক্তি।
সাইবার অপরাধে তথ্য শেয়ারিং
জাপান সাইবারক্রাইম কন্ট্রোল সেন্টার (জেসি৩) সাইবারস্পেসে নিজস্ব তদন্ত চালিয়ে প্রতারণামূলক ওয়েবসাইটগুলোর আইপি ঠিকানা সংগ্রহ করে। মাইক্রোসফট, যাকে প্রায়ই এমন প্রতারণার জন্য ব্যবহার করা হয়, এ বিষয়ে বিশেষ চাপের মুখে ছিল। ভুয়া সতর্কবার্তায় ভুক্তভোগীদের প্রায়ই “উইন্ডোজ সাপোর্টে কল করুন” বলা হতো, যা কোম্পানির সুনামের ক্ষতি করছিল।
২০২৪ সালের মার্চে টোকিওতে এক আন্তর্জাতিক সাইবার অপরাধ সম্মেলনে জেসি৩ ও মাইক্রোসফটের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ হয়। এরপর দুই পক্ষ প্রতারণা সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় শুরু করে। জেসি৩ মাইক্রোসফটকে কয়েক হাজার ওয়েবসাইটের আইপি ঠিকানা ও অতিরিক্ত তথ্য দেয়।

ভারতের সিবিআই-এর ভূমিকা
মাইক্রোসফটের ডিজিটাল ক্রাইমস ইউনিট (ডিসিইউ) এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করে এবং যোগাযোগের ইতিহাস ট্রেস করে ভারতের সঙ্গে সংযোগ খুঁজে বের করে। এ সূত্র ধরে ভারতের সিবিআই প্রতারণা চক্রের অবস্থান শনাক্ত করে এবং সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করে। জাপানের এনপিএ’র ন্যাশনাল সাইবার ডিপার্টমেন্টও সহযোগিতা করে অর্থ লেনদেনের ধারা অনুসন্ধান করে আরও সদস্যদের শনাক্ত করে।
এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “বেসরকারি খাতের সহায়তা ছাড়া তাদের খুঁজে বের করা কঠিন হতো।”
জাপানে প্রতারণার ক্রমবর্ধমান সমস্যা
ব্যাংক ট্রান্সফার প্রতারণায় ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৯.৭৩ বিলিয়ন ইয়েন। এটি ২০২৪ সালের পূর্ণ বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড ৭১.৮৮ বিলিয়ন ইয়েন অতিক্রম করার পথে রয়েছে।
জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার সমস্যাকে আরও জটিল করেছে। বিদেশি অপরাধচক্র এখন সহজেই প্রাকৃতিক জাপানি ভাষায় ইমেইল ও ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারছে। ফলে ভাষাগত বাধা ভেঙে গেছে এবং বিদেশ থেকে আরও বেশি জাপানি নাগরিক প্রতারণার শিকার হচ্ছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এ অবস্থায় বিদেশি অংশীদারদের সঙ্গে, বিশেষ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তথ্য বিনিময় আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ২০২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে এনপিএ একটি নতুন পদ তৈরির পরিকল্পনা করেছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক সংগঠিত অপরাধ প্রতিরোধ কর্মকর্তা’। এর মাধ্যমে এ ধরনের সক্ষমতা আরও জোরদার করা হবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















