আদালতের রায়ে হার্ভার্ডের বড় সাফল্য
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল বিচারক ঘোষণা করেছেন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা তহবিল বন্ধ করার মাধ্যমে সরকার আইন ভঙ্গ করেছে। বিচারক অ্যালিসন ডি. বারোউসের এই রায় হার্ভার্ডকে তাৎক্ষণিকভাবে এক বড় আইনি জয় এনে দিয়েছে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের উচ্চশিক্ষা খাতে প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে এক ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মামলার পটভূমি
গত এপ্রিলে হার্ভার্ড মামলা দায়ের করে। ট্রাম্প প্রশাসন অভিযোগ তোলে, বিশ্ববিদ্যালয়টি পক্ষপাত ও বৈষম্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এরপর সরকার গবেষণা তহবিল বন্ধের পদক্ষেপ নেয় এবং শর্তসাপেক্ষে পুনঃপ্রাপ্তির প্রস্তাব দেয়। শর্তগুলোর মধ্যে ছিল বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি কর্মসূচি বন্ধ করা, ভর্তি ও নিয়োগে নতুন নীতি গ্রহণ, এমনকি যেসব বিভাগে প্রশাসনের মতে ইহুদি বিদ্বেষী কর্মকাণ্ড চলছে সেগুলোর পর্যালোচনা। হার্ভার্ড এই শর্ত মানতে অস্বীকৃতি জানালে সরকার দ্রুত তহবিল কেটে দেয়।

হার্ভার্ডের যুক্তি
হার্ভার্ড দাবি করে, সরকারের এই পদক্ষেপ প্রথম সংশোধনীতে প্রদত্ত মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের অধিকার লঙ্ঘন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবীরা বলেন, সরকারের প্রস্তাব স্পষ্টভাবে একটি চাপ ছিল—নিজস্ব মত ও একাডেমিক স্বাধীনতা বিসর্জন দিতে হবে, নতুবা বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ হারাতে হবে।
আদালতের পর্যবেক্ষণ
বিচারক বারোউস তাঁর রায়ে লেখেন,
“আমাদের ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়তে হবে, তবে একইসঙ্গে বাকস্বাধীনতা ও একাডেমিক স্বাধীনতাও রক্ষা করতে হবে। একটিকে বাঁচাতে অন্যটিকে বিসর্জন দেওয়া উচিত নয়।”
তিনি আরও বলেন, সরকার ইহুদি বিদ্বেষকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। আদালতের মতে, গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বা বেআইনি প্রক্রিয়ায় বন্ধ না হয়, সেটি নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব।

সরকারের অবস্থান
হোয়াইট হাউস এই রায়ের নিন্দা জানায়। মুখপাত্র লিজ হিউস্টন বলেন, “হার্ভার্ড শিক্ষার্থীদের বৈষম্য থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের করদাতাদের অর্থ পাওয়ার কোনো সাংবিধানিক অধিকার নেই।” তিনি ঘোষণা করেন, সরকার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করবে এবং হার্ভার্ডকে জবাবদিহিতার আওতায় আনবে।
রাজনৈতিক টানাপোড়েন
ট্রাম্প প্রশাসন শুধু গবেষণা তহবিল নয়, আরও নানা মাধ্যমে হার্ভার্ডের ওপর চাপ বাড়াচ্ছিল। এর মধ্যে ছিল জটিল তদন্ত, সমন জারি, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের পেটেন্ট নিয়েও অনুসন্ধান। জুলাই মাসে জানা যায়, হার্ভার্ড সম্ভাব্য সমঝোতার জন্য ৫০ কোটি ডলার পর্যন্ত খরচ করতে রাজি, তবে তারা নিজেদের স্বাধীনতা রক্ষায় কিছু শর্ত চাইছে।
ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলেছেন, হার্ভার্ডকে এই অঙ্কের কম কিছুই দিতে হবে না। তিনি শিক্ষা মন্ত্রীকে বলেন, “তাদের সঙ্গে দরকষাকষি কোরো না।”

সমঝোতা আলোচনার প্রভাব
হার্ভার্ড কর্মকর্তারা আশা করছেন, আদালতের এই রায় তাদের আলোচনায় শক্তিশালী করবে। এটি একদিকে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করবে, অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেও প্রশাসনের অবস্থান দৃঢ় করবে। তারা এটিকে সরকারের আত্মসমর্পণ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে।
একাডেমিক মহলের প্রতিক্রিয়া
আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি প্রফেসরস সহ অন্য সংস্থার আইনজীবীরা বলেন, এই রায় একাডেমিক স্বাধীনতা ও জনস্বার্থে গবেষণার জন্য এক “নির্ণায়ক জয়।” তবে তারা সতর্ক করে দেন, হার্ভার্ড প্রশাসনের উচিত নয় এই জয়কে সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রদায়ের অধিকার বিসর্জনের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা।
রায় ঘোষণার দিন হার্ভার্ডকে কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়া গবেষণা প্রকল্পের জন্য কাগজপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা পূরণ করতে হতো। বিশ্ববিদ্যালয় সতর্ক করেছিল, আদালতের রায় না এলে সরকার দাবি করতে পারত যে তহবিল আর ফেরত দেওয়া যাবে না।
বিচারক বারোউসের রায় আপাতত হার্ভার্ডকে সেই সংকট থেকে রক্ষা করেছে এবং মার্কিন উচ্চশিক্ষায় স্বাধীনতা ও সরকারের প্রভাবের সীমা নিয়ে এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 




















