দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এক অজানা অস্ত্র
১৯৩৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রবেশ করে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার প্রায় আশি বছর পরও খুব কম মানুষ জানেন যে একটি ব্রিটিশ দ্বীপের বিশেষ ভাষা নাৎসি দখলদারদের বিভ্রান্ত করার জন্য গোপন সংকেত হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।
জার্সির মঞ্চে এক ভিন্ন সুর
“বঁসোয়ার! সেয়িজ লে বঁভেনুস!” মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে দর্শকদের উদ্দেশে বললেন জো থর্প। তারপরই ইংরেজিতে যোগ করলেন, “গুড ইভনিং অ্যান্ড ওয়েলকাম! আমরা খুবই আনন্দিত আপনাদের পেয়ে। আশা করি অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন।”

আলো নিভতেই তাঁর ব্যান্ড ‘সোনিউ’ বাজনা শুরু করল। ভায়োলিন, ডাবল বেস, গিটার ও রেকর্ডারের সঙ্গতে থর্প গাইলেন এক পরিচিত লোকসঙ্গীত। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় ছিল—শোনাতে ফরাসি মনে হলেও আসলে তিনি গাইছিলেন জার্সির নিজস্ব ভাষা জেরিয়াইস।
পুরনো ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ
অনুষ্ঠানের মাঝখানে বিরতিতে থর্প ব্যাখ্যা করলেন, “জার্সিতে আমরা একে ‘ভেইলিয়ে’ বলি। এটি গান, সঙ্গীত আর গল্প বলার রাত। মানুষ একত্রিত হয়ে গল্প করত, গান গাইত, স্মৃতি ভাগাভাগি করত। রেডিও-টিভির আগে এটি ছিল সামাজিক জীবনের কেন্দ্র। প্রতিটি গ্রামে এমন আয়োজন হতো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গিয়েছিল। আমরা আবার ফিরিয়ে এনেছি। আর জেরিয়াইস ছাড়া তো তা সম্ভবই নয়।”
তিনি দর্শকদের হাতে তুলে দিলেন ‘বিন ক্রোক’ নামের ঐতিহ্যবাহী এক পুষ্টিকর স্ট্যু। স্থানীয় খাবার ও ভাষা মিলিয়ে যেন অতীত জীবন্ত হয়ে উঠল।

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের অনন্য ইতিহাস
জার্সি হলো চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে বড়। ইংলিশ চ্যানেলে ছয়টি জনবসতিপূর্ণ দ্বীপ এবং আরও অনেক ছোট নির্জন দ্বীপ নিয়ে এ দ্বীপপুঞ্জ গড়ে উঠেছে। ফ্রান্সের উপকূল থেকে মাত্র ১৪ মাইল দূরত্বে অবস্থিত হলেও এটি ব্রিটিশ ক্রাউন ডিপেন্ডেন্সি। এখানকার দুটি সরকারি ভাষা ইংরেজি ও ফরাসি হলেও দ্বীপটির প্রকৃত নিজস্ব ভাষা হলো জেরিয়াইস।
এই ভাষাই একসময় নাৎসিদের চোখে ধুলো দেওয়ার গোপন হাতিয়ার হয়েছিল, আর আজ সেটিই আবার ফিরে আসছে সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক হয়ে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















