এশিয়া কাপে ধারাবাহিকতা ও প্রেক্ষাপট
এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এএসি) অভিযোজন ক্ষমতার প্রমাণ হচ্ছে। এখনও এশিয়া কাপ টিকে আছে, যখন অন্য বহুজাতিক টুর্নামেন্টগুলো এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ হয়ে গেছে।
নব্বইয়ের দশক থেকে ২০০০ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা প্রায় সমান শক্তিশালী দল ছিল, মাঝে মাঝে বাংলাদেশও চমক দেখিয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে বিশ্বকাপের আগে ফরম্যাট পরিবর্তনের মাধ্যমে এশিয়া কাপ সময়োপযোগী থেকেছে। তবে প্রতিযোগিতার মান কমে যাওয়া এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে—এটি এখনও কি সমান শক্তির টুর্নামেন্ট?
ভারতের আধিপত্য
২০১০ সাল থেকে ভারত সাত আসরের মধ্যে চারবার শিরোপা জিতেছে। শ্রীলঙ্কা দুবার এবং পাকিস্তান মাত্র একবার, ২০১২ সালে। বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারত এখন আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ের শীর্ষে। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ রয়েছে ৭ থেকে ১০ নম্বরে।
এ অবস্থায় গ্রুপপর্ব ও ‘সুপার ফোর’ ধাপ রাখার তেমন যুক্তি নেই, কারণ এখানে মাত্র পাঁচটি টেস্ট খেলুড়ে দেশ অংশ নিচ্ছে। বাকি তিনটি সহযোগী সদস্য শক্তিশালী দলগুলোকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে বলে আশা নেই। তবুও তাদের খেলার অভিজ্ঞতা দেওয়ার জন্য এ ধারা বজায় রাখা হচ্ছে।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের গুরুত্ব
এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ অন্তত একবার রাখা হয়, আর সম্ভব হলে দুবার। কারণ এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক খেলা। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নতুন মাত্রা দিলেও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ফর্ম চিন্তার বিষয়। আফগানিস্তানের কাছে হারের পর ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে তারা জয় পেলেও ২০২২ বিশ্বকাপের পর থেকে পাকিস্তান ৫৭ ম্যাচে ৩০টিতেই হেরেছে।
পাকিস্তানের বর্তমান দলে বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় নেই। নতুন অধিনায়কের অধীনে দল খুঁজছে নতুন পথ। তুলনামূলকভাবে আফগানিস্তানও এখন পাকিস্তানের চেয়ে সংগঠিত মনে হচ্ছে।
আফগানিস্তানের সম্ভাবনা
সংযুক্ত আরব আমিরাতের শুকনো, সমতল উইকেটে আফগানিস্তানের মানসম্পন্ন স্পিনাররা সুবিধা নিতে পারবে। বিশ্বের সেরা টি-টোয়েন্টি স্পিনার রশিদ খান বলেন, গত আট-নয় মাসে তারা একসঙ্গে বেশি টি-টোয়েন্টি খেলেনি। তবে সাম্প্রতিক সিরিজে ইতিবাচক শক্তি পেয়েছে দল। তার মতে, এবারের এশিয়া কাপ তাদের জন্য দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ হবে।
শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ
আফগানিস্তানের মতো পূর্ণাঙ্গ বোলিং আক্রমণ নেই শ্রীলঙ্কা বা বাংলাদেশের। শ্রীলঙ্কা মূলত মাহিশ থিকশানার রহস্যময় স্পিন এবং মাথিশা পাথিরানার গতির ওপর নির্ভর করছে। তবে অন্যান্য ঘাটতি তারা পূরণ করতে পারছে না।
সম্প্রতি জিম্বাবুয়ের কাছে হার এবং নিজেদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন টি-টোয়েন্টি সংগ্রহ গড়ার পর হতাশা আরও বেড়েছে। তার আগে বাংলাদেশ ঘরের মাঠে তাদের ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছে। শ্রীলঙ্কার এখন একমাত্র আশার জায়গা হলো—এখন থেকে কেবল উন্নতির সুযোগ আছে।
গ্রুপ বিন্যাসের কৌশল
শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও হংকং এক গ্রুপে পড়েছে, ফলে তিন টেস্ট দলের মধ্যে একজন বাদ পড়বেই। তবে ভারত-পাকিস্তানের ক্ষেত্রে আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারত ও পাকিস্তান লিগ পর্ব থেকে বাদ পড়ার পর এএসি চায়নি আবার একই ঘটনা ঘটুক। তাই ভারত-পাকিস্তানকে রাখা হয়েছে ইউএই ও ওমানের সঙ্গে।
সুপার ফোরের যুক্তি ও চূড়ান্ত প্রশ্ন
সরাসরি নকআউট ব্যবস্থা নেওয়া যেত, কিন্তু এএসি কোনো ঝুঁকি নেয়নি। ‘সুপার ফোর’ রাখা হয়েছে যেন ভারত ও পাকিস্তান এক ম্যাচ হারলেও ফাইনালে ওঠার সুযোগ থাকে। বহুবার চেষ্টা করেও এশিয়া কাপে এখনও ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল হয়নি। দেখা যাক, তিন সপ্তাহ পর সেই ইতিহাস বদলায় কিনা।