এআই ও চাকরির অনিশ্চয়তা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কর্মসংস্থানের ওপর কী প্রভাব ফেলবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাকরি প্রার্থীদের প্রতিনিয়ত নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে হবে এবং বিভিন্ন ধরনের কাজে খোলা মনে আগ্রহী হতে হবে। বৈশ্বিক অনিশ্চয়তায় প্রভাবিত শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এটাই মূল চাবিকাঠি।
সিঙ্গাপুরের শ্রমবাজারের চ্যালেঞ্জ
ওয়ার্কফোর্স সিঙ্গাপুরের ট্রান্সফরমেশন সাপোর্ট গ্রুপের সহকারী প্রধান নির্বাহী ব্র্যান্ডন লি জানিয়েছেন, সিঙ্গাপুর বর্তমানে নানা সমস্যার মুখোমুখি। এর মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য শুল্ক, আন্তর্জাতিক সংঘাত, কোভিড-পরবর্তী অতিরিক্ত নিয়োগ এবং এআই নিয়ে কর্পোরেট খাতে অতিরিক্ত ব্যয়। তবে অর্থনীতি এখনো স্থিতিশীল রয়েছে এবং চাকরিও পাওয়া যাচ্ছে। তাঁর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মাইকরিয়ার্সফিউচার পোর্টালে প্রায় ৬০ হাজার চাকরির বিজ্ঞাপন রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮ হাজার এন্ট্রি-লেভেল পদ এবং ২ হাজার ৪০০টি সরকারি চাকরি।
মানবিক দক্ষতার গুরুত্ব
লি পরামর্শ দেন, চাকরিপ্রার্থীদের শুধু এআই নির্ভর না হয়ে ভিন্ন কৌশলও নিতে হবে। অনেক সময় এমন কাজ করতে হতে পারে যা অন্যরা করতে চায় না। এর মাধ্যমে ভিন্ন অভিজ্ঞতা তৈরি হবে এবং প্রতিযোগিতায় সুবিধা পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, “এআই-সম্পর্কিত ক্ষেত্রে সুযোগ খুঁজে বের করার পাশাপাশি মানবিক কাজের ক্ষেত্রেও নিজেকে প্রমাণ করা জরুরি।”
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় ৬ সেপ্টেম্বর, দ্য স্ট্রেইটস টাইমসের ১৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অংশ হিসেবে। অনুষ্ঠানে প্যানেলিস্ট ছিলেন মার্সার সিঙ্গাপুরের পার্টনার ও ক্যারিয়ার বিজনেস লিডার লুইস গ্যারাড। তিনি বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান এআই-এ সম্ভাবনা দেখলেও নিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে, বিশেষ করে জুনিয়ার পর্যায়ে। তারা চাইছে বিদ্যমান কর্মীরা এআই টুল ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতা বাড়াক। তবে এখনো প্রমাণ নেই যে এআই বাস্তবে বড় কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
গ্যারাড আরও বলেন, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ইতিহাসে দেখা গেছে, এগুলো সাধারণত নতুন চাকরি সৃষ্টি করে, ধ্বংস করে না। চাকরিপ্রার্থীদের প্রতি তাঁর পরামর্শ—যোগ্যতা, আন্তরিকতা এবং কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতা থাকতে হবে। তাঁর ভাষায়, “যদি আপনি বুদ্ধিমান হন, অন্যদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে জানেন এবং কঠিন কাজের জন্য প্রস্তুত থাকেন, তাহলে আপনার জন্য সবসময় চাকরি থাকবে।”
উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ
লি আরও বলেন, চাকরিপ্রার্থীরা চাইলে উদ্যোক্তা হিসেবেও শুরু করতে পারেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন, একবার শুরু করলে অভিজ্ঞতা জমবে, ভুল সিদ্ধান্ত নিলেও তা থেকে শিক্ষা পাওয়া যাবে। ভবিষ্যতে যখন এআই অনেক সাধারণ কাজ স্বয়ংক্রিয় করে দেবে, তখন অভিজ্ঞতা ও বিচক্ষণতাসম্পন্ন মানুষের মূল্য বাড়বে।
মানবিক সংযোগের অপরিহার্যতা
অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণকারীরাও মনে করেন, এআই উৎপাদনশীলতা বাড়ালেও মানবিক সংযোগের বিকল্প নেই। টেক কোম্পানি মেটা নেক্সটজেন-এর প্রতিষ্ঠাতা রাজ গোহর বলেন, “এআই কাজ করতে পারে, কিন্তু মানুষের সংযোগ তৈরি করতে পারে না। দ্রুত ফল দিতে পারে এমন মানুষেরই চাহিদা সবচেয়ে বেশি।” ওয়ারউইক (Warwick) বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রী নাদিন স্যাং বলেন, “এআই অবশ্যই কর্মক্ষেত্র পাল্টাবে, তবে তা আমার সুযোগকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। দক্ষতা এবং লক্ষ্য পরিষ্কার থাকলে প্রচুর সুযোগ পাওয়া যাবে।”
সারাংশে, আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা বলেছেন—কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চাকরির বাজারে নতুন বাস্তবতা তৈরি করছে। তবে টিকে থাকতে হলে দক্ষতা উন্নয়ন, নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন এবং মানবিক যোগ্যতা ধরে রাখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন–