০৫:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
সিনেমা নির্মাণের দুশ্চিন্তা ছুঁয়ে গেল জাপানি রোডমুভি ‘গুড লাক’ পেলেলিউ: স্বর্গের গুয়ের্নিকা যে আঁকিয়ে ছেলের চোখে যুদ্ধের নগ্ন সত্য মানবস্পর্শে বদলে যাচ্ছে ভবিষ্যতের ট্যাক্সি বহর: ওয়েমোর গাড়িতে শিল্পীদের রঙিন ছোঁয়া জেমস এল ব্রুকসের ‘এলা ম্যাকে’: রাজনীতিকে কেন্দ্র করে ব্যর্থ হাস্যরসের এক ক্লান্তিকর প্রত্যাবর্তন এআই–নির্ভর ভবিষ্যৎ পরিবার: ব্রডওয়েতে ‘মার্জোরি প্রাইম’ মঞ্চে আলোচনার ঝড় নিদা ইয়াসির বিতর্ক: ডেলিভারি রাইডার মন্তব্যে ক্ষমা চাইলেন টিভি উপস্থাপক ৪১৫ হাজার বছর আগেই আগুন তৈরির প্রমাণ: ইংল্যান্ডে নব্য আবিষ্কার বদলে দিচ্ছে মানব বিবর্তনের ইতিহাস জেন জেডের উৎসবপ্রীতি বদলে গেল অভিজ্ঞতায় ঢামেকে সাংবাদিকের ওপর হাদির সমর্থকদের হামলা বাড্ডায় চলন্ত বাসে আগুন

ট্রাম্পের ওপর তেলের ধনকুবেরদের বাজি সফল হচ্ছে

নির্বাচনী রাতের উল্লাস

তেলের ব্যবসায়ী হারল্ড হ্যাম ২০২৪ সালের নির্বাচনী রাতে মার-আ-লাগোতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হাত মিলিয়ে উল্লাস করেন। কন্টিনেন্টাল রিসোর্সেসের এই প্রতিষ্ঠাতা এবং অন্যান্য ধনকুবেররা কোটি কোটি ডলার দান করেছিলেন ট্রাম্পকে পুনর্নির্বাচিত করার জন্য। তাদের বিশ্বাস ছিল, ট্রাম্প জীবাশ্ম জ্বালানিকে অগ্রাধিকার দিলে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘমেয়াদে গ্যাসোলিনের ওপর নির্ভরশীল থাকবে এবং বিকল্প জ্বালানির দিকে ঝুঁকে পড়বে না।

প্রশাসনের সিদ্ধান্ত ও নীতিগত পরিবর্তন

ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যেই বন্যপ্রাণী ও ফেডারেল জমি খননের জন্য উন্মুক্ত করেছে। প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানির নতুন টার্মিনাল অনুমোদন করা হয়েছে এবং ওবামা আমলের বিদ্যুৎকেন্দ্র, যানবাহন ও তেল-গ্যাস উৎপাদন থেকে নির্গমন কমানোর নিয়ম বাতিলের প্রস্তাব আনা হয়েছে। এই নীতির ফলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার ও বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

হোয়াইট হাউসে তেল কোম্পানির প্রভাব

ট্রাম্প প্রায়ই তেল কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। জুলাই মাসে পিটসবার্গে অনুষ্ঠিত এনার্জি সামিটে EQT-এর সিইও টবি রাইস এবং এক্সন মোবিলের সিইও ড্যারেন উডস ট্রাম্পের টেবিলে বসেন। তেল কোম্পানিগুলো এখনো মুনাফা বাড়াতে পারেনি, কারণ বৈশ্বিক সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমে গেছে। তার ওপর স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপে খনন খরচও বেড়েছে।

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও শিল্পের সংকট

মার্কিন তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি প্রায় ৬২ ডলারে নেমে এসেছে, যা ছোট কোম্পানিগুলোর জন্য ক্ষতির সীমা। ট্রাম্প প্রশাসনের সমর্থন সত্ত্বেও এই পরিস্থিতি শিল্পে ছাঁটাই ও আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়েছে। তবু অনেক নির্বাহী বিশ্বাস করেন, নীতিগত সুবিধা পাওয়ার জন্য এই খরচ মেনে নেওয়া দরকার।

পরিবেশবাদীদের উদ্বেগ

পরিবেশবাদীরা বলছেন, এসব সিদ্ধান্তে ভোক্তাদের জ্বালানি ব্যয় বাড়বে, জলবায়ু পরিবর্তন ত্বরান্বিত হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে। ট্রাম্প প্রশাসন গ্রিনহাউস গ্যাসকে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসেবে ঘোষিত ২০০৯ সালের নিয়ম বাতিলের পদক্ষেপও নিয়েছে। পরিবেশবাদীরা আদালতে এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছে।

কর সুবিধা ও তেল কোম্পানির লাভ

ট্রাম্পের করনীতি বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার জন্য ৭,৫০০ ডলার পর্যন্ত ভর্তুকি বাতিল করেছে। এর বদলে তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলো বড় অংকের কর ছাড় পাচ্ছে। কনোকোফিলিপস, অক্সিডেন্টাল, ডেভন এনার্জি এবং অন্যরা জানিয়েছে, শুধু ২০২৫ সালেই তারা কর সুবিধা থেকে ১.২ বিলিয়ন ডলারের বেশি সাশ্রয় করবে।

প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক

ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের দিনেই শীর্ষ তেল কর্মকর্তারা হোটেলের ছাদ থেকে তার ভাষণ শুনে উল্লাস করেন। বাইডেন আমলে যেখানে তেল কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল উত্তেজনাপূর্ণ, সেখানে ট্রাম্প প্রশাসন শুরু থেকেই তাদের খোলা দরজা দিয়েছে। মার্চে হোয়াইট হাউসে বৈঠকে ট্রাম্প তাদের বলেন, তেল-গ্যাস তার সবচেয়ে প্রিয় শিল্প। শুল্ক ঘোষণার সময়ও জ্বালানি পণ্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

আলাস্কা ও নতুন খনন পরিকল্পনা

ট্রাম্প শপথ নেওয়ার দিন আলাস্কায় উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। জুনে ইন্টেরিয়র ডিপার্টমেন্ট বাইডেনের আরোপিত সীমাবদ্ধতা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কনোকোফিলিপস ইতিমধ্যেই আলাস্কার ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম রিজার্ভে খননের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে। পরিবেশবাদীরা এই পদক্ষেপে গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন।

নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ধাক্কা

প্রশাসন শুধু তেল শিল্পকেই এগিয়ে নিচ্ছে না, বরং সৌর ও বায়ু প্রকল্পগুলোতেও বাধা দিচ্ছে। নতুন আইন অনুযায়ী কর সুবিধা কেটে নেওয়া হয়েছে এবং ফেডারেল জমিতে সৌর ও বায়ু প্রকল্প বাস্তবায়ন কঠিন করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছে সৌর প্যানেল, ব্যাটারি ও বৈদ্যুতিক যানবাহনে পিছিয়ে পড়তে পারে।

শিল্পের ভেতরে সংকট ও ছাঁটাই

শেল তেল কোম্পানিগুলো বহু বছর লোকসানে চলেছে। বিনিয়োগকারীদের চাপে তারা এখন খরচ কমাচ্ছে। সাম্প্রতিক দাম পতনের কারণে ড্রিলিং রিগ ও শ্রমিক কমানো হয়েছে। কনোকোফিলিপস তাদের এক-চতুর্থাংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে, শেভরনও কর্মী সংখ্যা ২০ শতাংশ কমাচ্ছে।

অনেক নির্বাহী মনে করেন, এখনকার ক্ষতির মধ্যেও ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগত সহায়তা ভবিষ্যতে তাদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করবে। একজন টেক্সাস তেল কোম্পানির প্রধানের ভাষায়: “আমরা সবাই এটার জন্য ভোট দিয়েছি।”

জনপ্রিয় সংবাদ

সিনেমা নির্মাণের দুশ্চিন্তা ছুঁয়ে গেল জাপানি রোডমুভি ‘গুড লাক’

ট্রাম্পের ওপর তেলের ধনকুবেরদের বাজি সফল হচ্ছে

০৩:২৬:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নির্বাচনী রাতের উল্লাস

তেলের ব্যবসায়ী হারল্ড হ্যাম ২০২৪ সালের নির্বাচনী রাতে মার-আ-লাগোতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হাত মিলিয়ে উল্লাস করেন। কন্টিনেন্টাল রিসোর্সেসের এই প্রতিষ্ঠাতা এবং অন্যান্য ধনকুবেররা কোটি কোটি ডলার দান করেছিলেন ট্রাম্পকে পুনর্নির্বাচিত করার জন্য। তাদের বিশ্বাস ছিল, ট্রাম্প জীবাশ্ম জ্বালানিকে অগ্রাধিকার দিলে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘমেয়াদে গ্যাসোলিনের ওপর নির্ভরশীল থাকবে এবং বিকল্প জ্বালানির দিকে ঝুঁকে পড়বে না।

প্রশাসনের সিদ্ধান্ত ও নীতিগত পরিবর্তন

ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যেই বন্যপ্রাণী ও ফেডারেল জমি খননের জন্য উন্মুক্ত করেছে। প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানির নতুন টার্মিনাল অনুমোদন করা হয়েছে এবং ওবামা আমলের বিদ্যুৎকেন্দ্র, যানবাহন ও তেল-গ্যাস উৎপাদন থেকে নির্গমন কমানোর নিয়ম বাতিলের প্রস্তাব আনা হয়েছে। এই নীতির ফলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার ও বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

হোয়াইট হাউসে তেল কোম্পানির প্রভাব

ট্রাম্প প্রায়ই তেল কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। জুলাই মাসে পিটসবার্গে অনুষ্ঠিত এনার্জি সামিটে EQT-এর সিইও টবি রাইস এবং এক্সন মোবিলের সিইও ড্যারেন উডস ট্রাম্পের টেবিলে বসেন। তেল কোম্পানিগুলো এখনো মুনাফা বাড়াতে পারেনি, কারণ বৈশ্বিক সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমে গেছে। তার ওপর স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপে খনন খরচও বেড়েছে।

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও শিল্পের সংকট

মার্কিন তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি প্রায় ৬২ ডলারে নেমে এসেছে, যা ছোট কোম্পানিগুলোর জন্য ক্ষতির সীমা। ট্রাম্প প্রশাসনের সমর্থন সত্ত্বেও এই পরিস্থিতি শিল্পে ছাঁটাই ও আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়েছে। তবু অনেক নির্বাহী বিশ্বাস করেন, নীতিগত সুবিধা পাওয়ার জন্য এই খরচ মেনে নেওয়া দরকার।

পরিবেশবাদীদের উদ্বেগ

পরিবেশবাদীরা বলছেন, এসব সিদ্ধান্তে ভোক্তাদের জ্বালানি ব্যয় বাড়বে, জলবায়ু পরিবর্তন ত্বরান্বিত হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে। ট্রাম্প প্রশাসন গ্রিনহাউস গ্যাসকে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসেবে ঘোষিত ২০০৯ সালের নিয়ম বাতিলের পদক্ষেপও নিয়েছে। পরিবেশবাদীরা আদালতে এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছে।

কর সুবিধা ও তেল কোম্পানির লাভ

ট্রাম্পের করনীতি বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার জন্য ৭,৫০০ ডলার পর্যন্ত ভর্তুকি বাতিল করেছে। এর বদলে তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলো বড় অংকের কর ছাড় পাচ্ছে। কনোকোফিলিপস, অক্সিডেন্টাল, ডেভন এনার্জি এবং অন্যরা জানিয়েছে, শুধু ২০২৫ সালেই তারা কর সুবিধা থেকে ১.২ বিলিয়ন ডলারের বেশি সাশ্রয় করবে।

প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক

ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের দিনেই শীর্ষ তেল কর্মকর্তারা হোটেলের ছাদ থেকে তার ভাষণ শুনে উল্লাস করেন। বাইডেন আমলে যেখানে তেল কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল উত্তেজনাপূর্ণ, সেখানে ট্রাম্প প্রশাসন শুরু থেকেই তাদের খোলা দরজা দিয়েছে। মার্চে হোয়াইট হাউসে বৈঠকে ট্রাম্প তাদের বলেন, তেল-গ্যাস তার সবচেয়ে প্রিয় শিল্প। শুল্ক ঘোষণার সময়ও জ্বালানি পণ্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

আলাস্কা ও নতুন খনন পরিকল্পনা

ট্রাম্প শপথ নেওয়ার দিন আলাস্কায় উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। জুনে ইন্টেরিয়র ডিপার্টমেন্ট বাইডেনের আরোপিত সীমাবদ্ধতা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কনোকোফিলিপস ইতিমধ্যেই আলাস্কার ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম রিজার্ভে খননের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে। পরিবেশবাদীরা এই পদক্ষেপে গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন।

নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ধাক্কা

প্রশাসন শুধু তেল শিল্পকেই এগিয়ে নিচ্ছে না, বরং সৌর ও বায়ু প্রকল্পগুলোতেও বাধা দিচ্ছে। নতুন আইন অনুযায়ী কর সুবিধা কেটে নেওয়া হয়েছে এবং ফেডারেল জমিতে সৌর ও বায়ু প্রকল্প বাস্তবায়ন কঠিন করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছে সৌর প্যানেল, ব্যাটারি ও বৈদ্যুতিক যানবাহনে পিছিয়ে পড়তে পারে।

শিল্পের ভেতরে সংকট ও ছাঁটাই

শেল তেল কোম্পানিগুলো বহু বছর লোকসানে চলেছে। বিনিয়োগকারীদের চাপে তারা এখন খরচ কমাচ্ছে। সাম্প্রতিক দাম পতনের কারণে ড্রিলিং রিগ ও শ্রমিক কমানো হয়েছে। কনোকোফিলিপস তাদের এক-চতুর্থাংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে, শেভরনও কর্মী সংখ্যা ২০ শতাংশ কমাচ্ছে।

অনেক নির্বাহী মনে করেন, এখনকার ক্ষতির মধ্যেও ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগত সহায়তা ভবিষ্যতে তাদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করবে। একজন টেক্সাস তেল কোম্পানির প্রধানের ভাষায়: “আমরা সবাই এটার জন্য ভোট দিয়েছি।”