১২:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
সপ্তাহের প্রথম দিনে পুঁজিবাজারে মিশ্র চিত্র, ডিএসইতে সূচক কমেছে, সিএসইতে বেড়েছে সোমবার মনোনয়ন জমার শেষ দিন, জমা দিয়েছে মাত্র ১ শতাংশ প্রার্থী  ঢাকা-১৭ ও বগুড়া-৬ আসনে মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর করলেন তারেক রহমান বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোটে এনসিপি: নাহিদ ইসলাম ভারতে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতায় গভীর উদ্বেগ ঢাকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য থেকে সরে গেলেও এনসিপি ছাড়ছি না: সামান্থা শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ভয়াবহ ঊর্ধ্বগতি, ৬৩ শতাংশ সংবাদ নেতিবাচক: গবেষণা জানুয়ারি ৩-এর মহাসমাবেশ স্থগিত করল জামায়াতে ইসলামী ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ–পাকিস্তান সম্পর্ক জোরদারে বাড়তি যোগাযোগ ও বিনিয়োগের আহ্বান রাজনৈতিক দলের ভেতরে ফ্যাসিবাদী সহযোগী ও সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

তিন ট্রিলিয়ন ডলারের বাজি

বিশাল বিনিয়োগের ঢেউ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আধুনিক ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ বিনিয়োগের ঢেউ সৃষ্টি করেছে। শুধু এই বছরই মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টরা প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ডলার খরচ করছে এআই মডেল চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে। ওপেনএআই ও অ্যানথ্রপিকের মতো শীর্ষ প্রতিষ্ঠান নিয়মিতভাবে বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করছে, আর তাদের সম্মিলিত বাজারমূল্য ইতিমধ্যেই অর্ধ ট্রিলিয়নের কাছাকাছি। বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৮ সালের মধ্যে শুধু ডেটা সেন্টারেই বৈশ্বিক বিনিয়োগ ছাড়িয়ে যাবে তিন ট্রিলিয়ন ডলার।

লাভ নাকি ক্ষতি?

এই বিশাল ব্যয়ের প্রশ্ন হলো—শেষ পর্যন্ত লাভজনক হবে, নাকি ভয়াবহ ক্ষতি বয়ে আনবে? প্রযুক্তি সফল হলেও সবাই লাভবান হবে না; অনেক প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়বে। আর যদি ব্যর্থ হয়, অর্থনৈতিক ধাক্কা আসবে দ্রুত ও গভীরভাবে। ইতিহাসে বিনিয়োগকারীরা সবসময় নতুন প্রযুক্তিতে ঝুঁকেছেন, কিন্তু এআই উন্মাদনা আগের যে কোনো বুমের চেয়েও বড়। সমর্থকদের দাবি, কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা (AGI)—যা মানুষের চেয়েও দক্ষ হবে অধিকাংশ মানসিক কাজে—কয়েক বছরের মধ্যেই আসতে পারে। যে প্রতিষ্ঠান এটি অর্জন করবে, তারা বিশাল মুনাফার মালিক হবে। তবে ঝুঁকিও সমান: ভুল মডেল বেছে নিলে সব বিনিয়োগ ডুবে যেতে পারে। আর খরচে দেরি করলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।

বিনিয়োগ প্রতিযোগিতা ও নতুন খেলোয়াড়

এই কারণেই চলছে এক অপ্রতিরোধ্য প্রতিযোগিতা। বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এআই-সক্ষম সুপারকম্পিউটার বানাতে বিপুল অর্থ ঢালছে। শুধু তারা নয়, জমি উন্নয়নকারী, বিদ্যুৎ কোম্পানি এমনকি ডেটা অবকাঠামো নির্মাতারাও যুক্ত হয়েছে এ প্রতিযোগিতায়। সম্প্রতি ওরাকল এআই ক্লাউড ব্যবসার উচ্চাভিলাষী পূর্বাভাস দিয়ে নিজেদের বাজারমূল্য বাড়িয়েছে। এর ফলে ল্যারি এলিসন অল্প সময়ের জন্য হলেও বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হন।

আশার পাশাপাশি অনিশ্চয়তা

সবচেয়ে আশাবাদী ধারণা হলো, AGI এক নতুন অর্থনৈতিক যুগের সূচনা করবে, যেখানে প্রবৃদ্ধি বছরে ২০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। এতে কিছু শেয়ারহোল্ডার অগাধ সম্পদ অর্জন করবে, তবে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রযুক্তির গতিপথও অপ্রত্যাশিতভাবে বদলাতে পারে। যেমন ১৯শ শতকে যুক্তরাষ্ট্রে বিকল্প বিদ্যুৎ প্রবাহ (AC) বিজয়ী হয়েছিল, আর সরাসরি প্রবাহ (DC) ব্যবসাগুলো হেরে যায়। আজ ধারণা করা হচ্ছে বড় মডেল চালাতে সক্ষম প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকবে। কিন্তু বাস্তবে অনেক ব্যবহারকারী ছোট ও ব্যক্তিগত মডেলের দিকে ঝুঁকছে, যেখানে কম কম্পিউটিং ক্ষমতাতেই কার্যকর ফল পাওয়া যাচ্ছে।

ধীরগতি, চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি

প্রযুক্তি বিস্তারে সময়ও বেশি লাগতে পারে। বিদ্যুৎ সরবরাহের সীমাবদ্ধতা, প্রযুক্তিগত জটিলতা কিংবা ব্যবস্থাপনার ধীরগতি এআই অগ্রগতি মন্থর করে দিতে পারে। এতে বিনিয়োগকারীরা রাজস্ব প্রত্যাশা কমিয়ে দেবে, মূলধনের প্রবাহ কমবে, এবং অনেক স্টার্টআপ ধ্বংস হয়ে যাবে।

অবকাঠামো ও অস্থায়ী উত্তরাধিকার

পূর্ববর্তী বিনিয়োগ বুদবুদের মতো এআই উন্মাদনাও অনেক সম্পদকে মূল্যহীন করে ফেলতে পারে। রেলওয়ে কিংবা ডটকম বুমের সময় কিছু অবকাঠামো টিকে থেকে ভবিষ্যতে কাজে লেগেছিল। কিন্তু এআই-এ বিনিয়োগকৃত সার্ভার ও চিপ কয়েক বছরের মধ্যেই পুরোনো হয়ে যাবে এবং অচল হয়ে পড়বে।

অর্থনৈতিক ঝুঁকি ও সহনশীলতা

তবে ইতিবাচক দিক হলো, বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা এই ধাক্কা সহ্য করার মতো শক্তিশালী। বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের লাভজনক ব্যবসা ও শক্তিশালী ব্যালান্স শিট তাদের বিনিয়োগের চাপ সামলাতে সাহায্য করবে। অধিকাংশ এআই স্টার্টআপ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও সার্বভৌম তহবিল থেকে অর্থায়িত, যারা ক্ষতি মেনে নিতে সক্ষম। তবু ঝুঁকি থেকেই যায়, বিশেষ করে যদি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত ঋণ নিয়ে এই প্রতিযোগিতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সপ্তাহের প্রথম দিনে পুঁজিবাজারে মিশ্র চিত্র, ডিএসইতে সূচক কমেছে, সিএসইতে বেড়েছে

তিন ট্রিলিয়ন ডলারের বাজি

০৩:৩৬:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিশাল বিনিয়োগের ঢেউ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আধুনিক ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ বিনিয়োগের ঢেউ সৃষ্টি করেছে। শুধু এই বছরই মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টরা প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ডলার খরচ করছে এআই মডেল চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে। ওপেনএআই ও অ্যানথ্রপিকের মতো শীর্ষ প্রতিষ্ঠান নিয়মিতভাবে বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করছে, আর তাদের সম্মিলিত বাজারমূল্য ইতিমধ্যেই অর্ধ ট্রিলিয়নের কাছাকাছি। বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৮ সালের মধ্যে শুধু ডেটা সেন্টারেই বৈশ্বিক বিনিয়োগ ছাড়িয়ে যাবে তিন ট্রিলিয়ন ডলার।

লাভ নাকি ক্ষতি?

এই বিশাল ব্যয়ের প্রশ্ন হলো—শেষ পর্যন্ত লাভজনক হবে, নাকি ভয়াবহ ক্ষতি বয়ে আনবে? প্রযুক্তি সফল হলেও সবাই লাভবান হবে না; অনেক প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়বে। আর যদি ব্যর্থ হয়, অর্থনৈতিক ধাক্কা আসবে দ্রুত ও গভীরভাবে। ইতিহাসে বিনিয়োগকারীরা সবসময় নতুন প্রযুক্তিতে ঝুঁকেছেন, কিন্তু এআই উন্মাদনা আগের যে কোনো বুমের চেয়েও বড়। সমর্থকদের দাবি, কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা (AGI)—যা মানুষের চেয়েও দক্ষ হবে অধিকাংশ মানসিক কাজে—কয়েক বছরের মধ্যেই আসতে পারে। যে প্রতিষ্ঠান এটি অর্জন করবে, তারা বিশাল মুনাফার মালিক হবে। তবে ঝুঁকিও সমান: ভুল মডেল বেছে নিলে সব বিনিয়োগ ডুবে যেতে পারে। আর খরচে দেরি করলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।

বিনিয়োগ প্রতিযোগিতা ও নতুন খেলোয়াড়

এই কারণেই চলছে এক অপ্রতিরোধ্য প্রতিযোগিতা। বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এআই-সক্ষম সুপারকম্পিউটার বানাতে বিপুল অর্থ ঢালছে। শুধু তারা নয়, জমি উন্নয়নকারী, বিদ্যুৎ কোম্পানি এমনকি ডেটা অবকাঠামো নির্মাতারাও যুক্ত হয়েছে এ প্রতিযোগিতায়। সম্প্রতি ওরাকল এআই ক্লাউড ব্যবসার উচ্চাভিলাষী পূর্বাভাস দিয়ে নিজেদের বাজারমূল্য বাড়িয়েছে। এর ফলে ল্যারি এলিসন অল্প সময়ের জন্য হলেও বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হন।

আশার পাশাপাশি অনিশ্চয়তা

সবচেয়ে আশাবাদী ধারণা হলো, AGI এক নতুন অর্থনৈতিক যুগের সূচনা করবে, যেখানে প্রবৃদ্ধি বছরে ২০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। এতে কিছু শেয়ারহোল্ডার অগাধ সম্পদ অর্জন করবে, তবে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রযুক্তির গতিপথও অপ্রত্যাশিতভাবে বদলাতে পারে। যেমন ১৯শ শতকে যুক্তরাষ্ট্রে বিকল্প বিদ্যুৎ প্রবাহ (AC) বিজয়ী হয়েছিল, আর সরাসরি প্রবাহ (DC) ব্যবসাগুলো হেরে যায়। আজ ধারণা করা হচ্ছে বড় মডেল চালাতে সক্ষম প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকবে। কিন্তু বাস্তবে অনেক ব্যবহারকারী ছোট ও ব্যক্তিগত মডেলের দিকে ঝুঁকছে, যেখানে কম কম্পিউটিং ক্ষমতাতেই কার্যকর ফল পাওয়া যাচ্ছে।

ধীরগতি, চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি

প্রযুক্তি বিস্তারে সময়ও বেশি লাগতে পারে। বিদ্যুৎ সরবরাহের সীমাবদ্ধতা, প্রযুক্তিগত জটিলতা কিংবা ব্যবস্থাপনার ধীরগতি এআই অগ্রগতি মন্থর করে দিতে পারে। এতে বিনিয়োগকারীরা রাজস্ব প্রত্যাশা কমিয়ে দেবে, মূলধনের প্রবাহ কমবে, এবং অনেক স্টার্টআপ ধ্বংস হয়ে যাবে।

অবকাঠামো ও অস্থায়ী উত্তরাধিকার

পূর্ববর্তী বিনিয়োগ বুদবুদের মতো এআই উন্মাদনাও অনেক সম্পদকে মূল্যহীন করে ফেলতে পারে। রেলওয়ে কিংবা ডটকম বুমের সময় কিছু অবকাঠামো টিকে থেকে ভবিষ্যতে কাজে লেগেছিল। কিন্তু এআই-এ বিনিয়োগকৃত সার্ভার ও চিপ কয়েক বছরের মধ্যেই পুরোনো হয়ে যাবে এবং অচল হয়ে পড়বে।

অর্থনৈতিক ঝুঁকি ও সহনশীলতা

তবে ইতিবাচক দিক হলো, বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা এই ধাক্কা সহ্য করার মতো শক্তিশালী। বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের লাভজনক ব্যবসা ও শক্তিশালী ব্যালান্স শিট তাদের বিনিয়োগের চাপ সামলাতে সাহায্য করবে। অধিকাংশ এআই স্টার্টআপ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও সার্বভৌম তহবিল থেকে অর্থায়িত, যারা ক্ষতি মেনে নিতে সক্ষম। তবু ঝুঁকি থেকেই যায়, বিশেষ করে যদি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত ঋণ নিয়ে এই প্রতিযোগিতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে।