শনিবার এশিয়া কাপ টি-টােয়েন্টি ২০২৫ তে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ছয় উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ।
এবারের এশিয়া কাপ শুরুর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমানে ক্রিকেট বিশ্লেষক আকাশ চোপড়া বলেছিলেন, বাংলাদেশের জন্য এই গ্রুপ থেকে পরের রাউন্ডে যাওয়াটা কঠিন একটা কাজ হবে।
আবার ভারতের ক্রিকেটার রাভিচান্দ্রান আশ্বিন নিজের বিশ্লেষণে বলেন, বাংলাদেশ দল নিয়ে বেশি কথা বলার কিছু নেই।
“ভারতের মতো দলকে বাংলাদেশ কখনোই হারাতে পারবে না, মানের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক দূরে।”
এসব মন্তব্য শুনে সেসময় বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।
কিন্তু এখন তাদের সুর বদলাতে হয়েছে।
ফেসবুকে কেউ কেউ লিখেছেন, ভারতের বিশ্লেষকদের সঠিক প্রমাণ করতেই বাংলাদেশ এমন ক্রিকেট খেলছে।
আবার কেউ কেউ লিখছেন, “আকাশ ও আশ্বিনের জন্য গণক্ষমা কর্মসূচি দেয়া উচিৎ?”
এখন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই হারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্য দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা অনেক কঠিন হয়ে গেল।
মঙ্গলবার ১৬ই সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে জিততেই হবে বাংলাদেশকে।
কারণ প্রথম ম্যাচে হংকং-এর বিপক্ষে জয় পেলেও তাতে নেট রান রেট খুব একটা বাড়িয়ে নিতে পারেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
হংকংয়ের দেয়া ১৪৪ রানের টার্গেট তাড়া করতে বাংলাদেশ প্রায় ১৮ ওভার সময় নিয়েছিল, তবে প্রেস কনফারেন্সে এসব প্রশ্নের উত্তরে ‘জয়টাকেই বড় করে দেখেছেন’ বলে জানিয়েছেন তাওহিদ হৃদয় এবং অধিনায়ক লিটন কুমার দাস।
যদিও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই জয়ের ধারে কাছেও ছিল না বাংলাদেশ।
কোথায় খেই হারিয়েছে বাংলাদেশ দল?
প্রথম ওভারে বাংলাদেশের স্কোরকার্ড ছিল এক উইকেট হারিয়ে শূন্য রান। দ্বিতীয় ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে শূন্য রান।
অর্থাৎ একটা টি-টােয়েন্টি ম্যাচের প্রথম ১২ বলে কোনও রান নিতে পারেনি বাংলাদেশ দল, উল্টাে খুইয়েছে দুই উইকেট।
আর এখানেই ম্যাচ হাত থেকে বেড়িয়ে যায় বাংলাদেশের। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক লিটন দাস বলেন, “আমরা পাওয়ার প্লেতেই হেরে গেছি। ব্যাটিং উইকেটে রান তুলতে না পারলে ম্যাচ জেতা যায় না।”
নুয়ান তুষারা ও দুশমন্ত চামিরার বল যেন বুঝতেই পারছিলেন না বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটাররা।
টি-টােয়েন্টি ক্রিকেটে পাওয়ারপ্লেতে যেখানে রান তুলে নেয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায় সেখানে চার ওভারে বাংলাদেশের রান ছিল সাত।
পঞ্চম ওভারে ক্যাচ তুলে দিয়ে বেঁচে গেলেও পরের বলেই তিন রান নিতে গিয়ে রান আউট হন তাওহিদ হৃদয়।
লিটন দাস পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে কিছু বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৩০ রান এনে দেন ছয় ওভার খেলে।
কিন্তু বাংলাদেশ প্রথম চার ওভারের দুর্দশা থেকে আর বের হতে পারেনি গোটা ম্যাচে।
এরপর ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা মাহেদি হাসান ও লিটনের উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে আরও চাপে ফেলেন।
খেলা দেখে শ্রীলঙ্কার সাবেক ক্রিকেটার ফারভেজ মাহারুফ জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফোতে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “একমসয় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের মতো ক্রিকেটাররা চলে যাওয়ার পরে বাংলাদেশ দল বেশ একটা খাদে পড়েছে। আর এখান থেকে এখন ম্যাচ উইনার পাওয়া কঠিন।”
এখানে মাহারুফ মূলত শ্রীলঙ্কার সাথে বাংলাদেশের তুলনা করেছেন।
শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটেও একটা বড় পরিবর্তন এসেছে ২০১৫ সালের পরে। বড় বড় নামগুলোর বিদায়ের পরে তাদের জায়গায় সম মানের ক্রিকেটার আসেনি।
বাংলাদেশকে পাত্তাই দেয়নি শ্রীলঙ্কা
দশম ওভারে বাংলাদেশ দলের সংগ্রহ ছিল মাত্র ৫৩ রানে পাঁচ উইকেট।
সেখান থেকে ষষ্ঠ উইকেটে জুটি বাঁধেন শামীম পাটোয়ারি ও জাকের আলী, এবং ইনিংসের শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন, শামীম তোলেন ৪২, জাকের ৪১।
যদিও দুজনেরই স্ট্রাইক রেট ছিল ১২০-এর উপরে, কিন্তু শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রিত বোলিং-এর মুখে দীর্ঘ সময় বাউন্ডারি খুঁজে পেতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাদের।
এক পর্যায়ে টানা ২১ বল কোনো বাউন্ডারি আসেনি।
এতে বোঝা যায় শ্রীলঙ্কার বোলারদের নিখুঁত ডিফেন্সিভ বোলিং, বিশেষ করে শেষ ওভারগুলোতে দুষ্মন্ত চামিরার নির্ভুল ইয়র্কার কতটা কার্যকর ছিল।
বাংলাদেশের ইনিংসে একমাত্র ছক্কাটি আসে শামীমের ব্যাট থেকে, ১৯তম ওভারে মাথিশা পাথিরানার বলে মিডউইকেটের ওপর দিয়ে।
পাথিরানা চার ওভারে ৪২ রান দিলেও উইকেট পাননি। তার বোলিং থেকেই বোঝা গেছে, বলের গতি কাজে লাগাতে পারলেই ব্যাটাররা রান তুলতে পারছিলেন।
টি-টােয়েন্টি তে রান তোলার ধীরগতির সমস্যায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দলই ভুগছে।
তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেই পরিসংখ্যানকে পাত্তা দেননি পাথুম নিসাঙ্কা আর কামিল মিশারা।
প্রথম ওভারে সাবধানী শুরুর পরে নিজের চতুর্থ বলেই মুস্তাফিজুর রহমানকে সামনে টেনে ছক্কা মারেন পাথুম নিসাঙ্কা, এটা ম্যাচের সেরা শটগুলোর একটি।
মুস্তাফিজ দ্বিতীয় ওভারেই কুশল মেন্ডিসকে আউট করে ফেরান, তবে এরপর নিসাঙ্কা ও মিশারা ধারাবাহিক বাউন্ডারিতে ইনিংস গড়তে থাকেন।
বাংলাদেশি বোলাররা শ্রীলঙ্কার তুলনায় অনেক বেশি শর্ট বল করায় সুবিধা পেয়েছেন মিশারা। দাঁড়িয়ে থেকেই শট খেলেছেন, যা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা খুব একটা কাজে লাগাতে পারেননি।
মিশারা যখন মাত্র এক রানে যখন খেলছিলেন, তখন শরিফুল ইসলামের বলে মিড-অনে সহজ ক্যাচ ফেলেন মাহেদি।
সেই সুযোগ মিস করার পরই বদলে যায় ম্যাচের চিত্র।
একই ওভারে মিশারা খেলেন ছক্কা, চার, চার। অন্যপ্রান্তে নিসাঙ্কা দারুণ টাইমিং আর ফুটওয়ার্কে ম্যাচের সেরা ব্যাটিং প্রদর্শন করেন।
এই দুই ব্যাটার মাত্র ৫২ বলে তোলেন ৯৫ রান।
যদিও শেষদিকে দ্রুত তিন উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা, তাতে ফলাফলে কোনো প্রভাব পড়েনি।
BBC News বাংলা