০২:১৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

৯০% ক্ষেত্রে কার্যকারিতা হারাচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক—শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সবাই ঝুঁকিতে

সেমিনারের প্রেক্ষাপট

ঢাকা, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫: আইসিডিডিআর,বি-র মহাখালী ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বাংলাদেশে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) পরিস্থিতি নিয়ে চাঞ্চল্যকর গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
“বাংলাদেশে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স মোকাবেলা: আর্চ গবেষণার ফলাফল” শীর্ষক এ সেমিনারে আইসিডিডিআর,বি-র গবেষক ড. ফাহমিদা চৌধুরী আর্চ গবেষণার (Antibiotic Resistance in Communities and Hospitals) বিস্তারিত তুলে ধরেন। এই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি), দ্য টাস্ক ফোর্স ফর গ্লোবাল হেলথ (টিএফজিএইচ) এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহায়তায়।


গবেষণার বিশেষত্ব

বাংলাদেশে অনেক গবেষণা থাকলেও এটি প্রথম, যা একসঙ্গে কমিউনিটি ও হাসপাতালে মানুষের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণুর উপস্থিতি বা “কলোনাইজেশন” পদ্ধতিগতভাবে পরীক্ষা করেছে।
কলোনাইজেশন মানে হলো শরীরে ক্ষতিকর জীবাণুর উপস্থিতি, যা তখনই অসুস্থতার কারণ না হলেও পরে নিজের শরীর বা অন্যদের শরীরে ছড়িয়ে গুরুতর সংক্রমণ ঘটাতে পারে।


প্রথম পর্যায়ের ফলাফল (২০১৯)

  • সুস্থ মানুষের মধ্যে ৭৮% এবং হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৮২% ক্ষেত্রে সেফালোস্পোরিন প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়।
  • হাসপাতালে ৩৭% এবং কমিউনিটিতে ৯% মানুষের শরীরে কার্বাপেনেম-প্রতিরোধী জীবাণু (সিআরই) ছিল।
  • কমিউনিটির ১১% ও হাসপাতালের ৭% ক্ষেত্রে কলিস্টিন-প্রতিরোধী জীবাণু পাওয়া গেছে।
  • প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের শরীরে মেথিসিলিন প্রতিরোধী স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস (এমআরএসএ) ছিল।
  • ২,৬০০-র বেশি ব্যাকটেরিয়ার জিনোম বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রতিরোধী জীবাণুর মধ্যে বৈচিত্র্য অনেক বেশি। ফলে এক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক অন্য প্রজাতির বিরুদ্ধে অকার্যকর হতে পারে।

দ্বিতীয় পর্যায়ের ফলাফল (২০২৩ থেকে)

গবেষণার মূল উদ্বেগের বিষয় ছিল নবজাতক ও সংকটাপন্ন রোগী:

  • এনআইসিইউতে ভর্তি নবজাতকদের মধ্যে ৮১% (৪২৩ জনের মধ্যে ৩৪২ জন) সিআর-ক্ল্যাবসিয়েলা নিউমোনি দ্বারা আক্রান্ত ছিল।
  • হাসপাতালে ৪৮ ঘণ্টার বেশি থাকা নবজাতকদের ৭০% পরবর্তীতে এই জীবাণুতে আক্রান্ত হয়।
  • প্রাপ্তবয়স্ক আইসিইউ রোগীদের ৬০%-এর শরীরে সিআরই পাওয়া যায়।
  • এক বছরের মধ্যে প্রায় ৪০% শিশুর শরীরে সিআরই এবং ৯০% শিশুর শরীরে সেফালোস্পোরিন প্রতিরোধী জীবাণু পাওয়া গেছে।
  • ৮০% শিশুই এক বছরের মধ্যেই অন্তত একবার অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করেছে, যা তাদের স্বাভাবিক জীবাণু ভারসাম্যকে ব্যাহত করেছে।

এই তথ্য স্পষ্ট করে যে শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক—সব বয়সী মানুষই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যর্থতার ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে।


সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে করণীয়

আর্চ গবেষণা প্রমাণ করেছে যে সঠিক পদক্ষেপ নিলে ঝুঁকি কমানো সম্ভব। যেমন:

  • স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস
  • হাসপাতালের পরিবেশগত পরিচ্ছন্নতা
    এই ধরনের ব্যবস্থা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ও রক্ত সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।

নীতি-নির্ধারকদের প্রতিক্রিয়া

  • ড. মো. সায়েদুর রহমান (বিশেষ সহকারী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়): গবেষণাকে উদ্বেগজনক ও মূল্যবান উল্লেখ করে বলেন, এটি ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণে সহায়ক হবে।
  • ড. তাহমিদ আহমেদ (নির্বাহী পরিচালক, আইসিডিডিআর,বি): ঘুমের ওষুধের বিক্রির নিয়ন্ত্রণের উদাহরণ টেনে বলেন, শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রেও একই ধরনের সীমাবদ্ধতা প্রয়োজন।
  • ব্রায়ান হুইলার (ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর, সিডিসি): এটিকে কেবল বৈজ্ঞানিক নয়, বরং স্বাস্থ্য অর্থনীতি ও নীতির বিষয় বলে উল্লেখ করেন।

এছাড়া আইইডিসিআর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।

৯০% ক্ষেত্রে কার্যকারিতা হারাচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক—শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সবাই ঝুঁকিতে

১১:৪৫:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সেমিনারের প্রেক্ষাপট

ঢাকা, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫: আইসিডিডিআর,বি-র মহাখালী ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বাংলাদেশে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) পরিস্থিতি নিয়ে চাঞ্চল্যকর গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
“বাংলাদেশে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স মোকাবেলা: আর্চ গবেষণার ফলাফল” শীর্ষক এ সেমিনারে আইসিডিডিআর,বি-র গবেষক ড. ফাহমিদা চৌধুরী আর্চ গবেষণার (Antibiotic Resistance in Communities and Hospitals) বিস্তারিত তুলে ধরেন। এই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি), দ্য টাস্ক ফোর্স ফর গ্লোবাল হেলথ (টিএফজিএইচ) এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহায়তায়।


গবেষণার বিশেষত্ব

বাংলাদেশে অনেক গবেষণা থাকলেও এটি প্রথম, যা একসঙ্গে কমিউনিটি ও হাসপাতালে মানুষের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণুর উপস্থিতি বা “কলোনাইজেশন” পদ্ধতিগতভাবে পরীক্ষা করেছে।
কলোনাইজেশন মানে হলো শরীরে ক্ষতিকর জীবাণুর উপস্থিতি, যা তখনই অসুস্থতার কারণ না হলেও পরে নিজের শরীর বা অন্যদের শরীরে ছড়িয়ে গুরুতর সংক্রমণ ঘটাতে পারে।


প্রথম পর্যায়ের ফলাফল (২০১৯)

  • সুস্থ মানুষের মধ্যে ৭৮% এবং হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৮২% ক্ষেত্রে সেফালোস্পোরিন প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়।
  • হাসপাতালে ৩৭% এবং কমিউনিটিতে ৯% মানুষের শরীরে কার্বাপেনেম-প্রতিরোধী জীবাণু (সিআরই) ছিল।
  • কমিউনিটির ১১% ও হাসপাতালের ৭% ক্ষেত্রে কলিস্টিন-প্রতিরোধী জীবাণু পাওয়া গেছে।
  • প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের শরীরে মেথিসিলিন প্রতিরোধী স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস (এমআরএসএ) ছিল।
  • ২,৬০০-র বেশি ব্যাকটেরিয়ার জিনোম বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রতিরোধী জীবাণুর মধ্যে বৈচিত্র্য অনেক বেশি। ফলে এক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক অন্য প্রজাতির বিরুদ্ধে অকার্যকর হতে পারে।

দ্বিতীয় পর্যায়ের ফলাফল (২০২৩ থেকে)

গবেষণার মূল উদ্বেগের বিষয় ছিল নবজাতক ও সংকটাপন্ন রোগী:

  • এনআইসিইউতে ভর্তি নবজাতকদের মধ্যে ৮১% (৪২৩ জনের মধ্যে ৩৪২ জন) সিআর-ক্ল্যাবসিয়েলা নিউমোনি দ্বারা আক্রান্ত ছিল।
  • হাসপাতালে ৪৮ ঘণ্টার বেশি থাকা নবজাতকদের ৭০% পরবর্তীতে এই জীবাণুতে আক্রান্ত হয়।
  • প্রাপ্তবয়স্ক আইসিইউ রোগীদের ৬০%-এর শরীরে সিআরই পাওয়া যায়।
  • এক বছরের মধ্যে প্রায় ৪০% শিশুর শরীরে সিআরই এবং ৯০% শিশুর শরীরে সেফালোস্পোরিন প্রতিরোধী জীবাণু পাওয়া গেছে।
  • ৮০% শিশুই এক বছরের মধ্যেই অন্তত একবার অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করেছে, যা তাদের স্বাভাবিক জীবাণু ভারসাম্যকে ব্যাহত করেছে।

এই তথ্য স্পষ্ট করে যে শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক—সব বয়সী মানুষই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যর্থতার ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে।


সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে করণীয়

আর্চ গবেষণা প্রমাণ করেছে যে সঠিক পদক্ষেপ নিলে ঝুঁকি কমানো সম্ভব। যেমন:

  • স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস
  • হাসপাতালের পরিবেশগত পরিচ্ছন্নতা
    এই ধরনের ব্যবস্থা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ও রক্ত সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।

নীতি-নির্ধারকদের প্রতিক্রিয়া

  • ড. মো. সায়েদুর রহমান (বিশেষ সহকারী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়): গবেষণাকে উদ্বেগজনক ও মূল্যবান উল্লেখ করে বলেন, এটি ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণে সহায়ক হবে।
  • ড. তাহমিদ আহমেদ (নির্বাহী পরিচালক, আইসিডিডিআর,বি): ঘুমের ওষুধের বিক্রির নিয়ন্ত্রণের উদাহরণ টেনে বলেন, শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রেও একই ধরনের সীমাবদ্ধতা প্রয়োজন।
  • ব্রায়ান হুইলার (ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর, সিডিসি): এটিকে কেবল বৈজ্ঞানিক নয়, বরং স্বাস্থ্য অর্থনীতি ও নীতির বিষয় বলে উল্লেখ করেন।

এছাড়া আইইডিসিআর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।