০২:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ট্রাম্পের ১ লাখ ডলারের ভিসা ফি: ভারতীয় স্বপ্নে বড় ধাক্কা

ট্রাম্পের নতুন ঘোষণা

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ও ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন এক পদক্ষেপ নিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের ঘোষণায় জানানো হয়েছে, এখন থেকে এইচ-১বি ভিসার স্পনসরশিপের জন্য কোম্পানিগুলোকে ১ লাখ ডলার (প্রায় ১ কোটি টাকা) ফি দিতে হবে।

শুক্রবার ওভাল অফিসে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, এই সিদ্ধান্তের ফলে কোম্পানিগুলো শুধুমাত্র সেইসব কর্মীদের আনবে যারা উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন এবং যাদের সহজে মার্কিন কর্মীদের দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যাবে না।


ট্রাম্পের বক্তব্য

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “কোম্পানিগুলোর কর্মী দরকার,আর আমাদের দরকার দক্ষ কর্মী। এই ঘোষণার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ভালো কর্মী পাবে।”


এইচ-১বি ভিসার গুরুত্ব

যুক্তরাষ্ট্রে কাজের অন্যতম কাঙ্ক্ষিত ভিসা হলো এইচ-১বি। হাজার হাজার ভারতীয় এই ভিসার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। বিশেষ করে আইটি খাতের মার্কিন কোম্পানিগুলোই এ ভিসার জন্য বেশি স্পনসর করে।

হোয়াইট হাউস জানায়, এই বিধিনিষেধ মার্কিন শ্রমিকদের সুরক্ষা দেবে এবং কোম্পানিগুলোর জন্য দক্ষ কর্মী আনার “পথ” তৈরি করবে।


মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্য

মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী জিনা রাইমন্ডো বলেন, “বড় কোম্পানিগুলোকে আর বিদেশি কর্মী প্রশিক্ষণ দেওয়া অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না। ১ লাখ ডলার সরকারকে দিতে হবে, তারপর কর্মীকেও দিতে হবে। ফলে তারা নিজেদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নতুন স্নাতকদেরই প্রশিক্ষণ দেবে। এতে বিদেশি কর্মীরা মার্কিন চাকরি নেওয়া বন্ধ হবে।”

তিনি আরও জানান, “সব বড় কোম্পানি এই সিদ্ধান্তে রাজি হয়েছে।”


প্রেক্ষাপট ও ব্লুমবার্গের তথ্য

প্রথমে ব্লুমবার্গ এ বিষয়ে খবর প্রকাশ করে। তারা জানায়, ভিসার অপব্যবহার রোধের অংশ হিসেবেই ট্রাম্প প্রশাসন এই পদক্ষেপ নিচ্ছে।

বর্তমানে এইচ-১বি ভিসার জন্য লটারিতে নাম নিবন্ধনে ২১৫ ডলার এবং ফর্ম আই-১২৯ জমা দিতে ৭৮০ ডলারসহ আরও কয়েকটি ফি দিতে হয়। নতুন এই ১ লাখ ডলার ফি এর সঙ্গে যুক্ত হবে।


কংগ্রেসে নতুন বিল

এই পরিবর্তনের আগে সিনেটর জিম ব্যাংকস “আমেরিকান টেক ওয়ার্কফোর্স অ্যাক্ট” নামে একটি বিল উত্থাপন করেন। এতে এইচ-১বি কর্মীদের ন্যূনতম বেতন ৬০ হাজার ডলার থেকে বাড়িয়ে ১,৫০,০০০ ডলার করার প্রস্তাব, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য থাকা ওপিটি প্রোগ্রাম বাতিলের দাবি এবং ভিসা লটারি ব্যবস্থার পরিবর্তে সর্বোচ্চ দরদাতাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।


ভারতীয়দের প্রভাব

গত বছর অনুমোদিত এইচ-১বি ভিসাধারীদের মধ্যে ৭১ শতাংশই ছিলেন ভারতীয় নাগরিক। চীন অনেক পিছনে ছিল—মাত্র ১১.৭ শতাংশ।

২০২৫ সালের প্রথমার্ধে অ্যামাজন ও এর ক্লাউড ইউনিট এডব্লিউএস ১২ হাজারের বেশি এইচ-১বি ভিসা অনুমোদন পায়। মাইক্রোসফট ও মেটা প্ল্যাটফর্মসও পেয়েছে ৫ হাজারের বেশি ভিসা।


কোম্পানি ও বাজারের প্রতিক্রিয়া

যদিও অনেক বড় মার্কিন প্রযুক্তি, ব্যাংকিং ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কোনো মন্তব্য করতে চায়নি, তবে বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। কগনিজ্যান্ট টেকনোলজি সল্যুশনসের শেয়ার প্রায় ৫ শতাংশ কমেছে। ইনফোসিস ও উইপ্রোসহ ভারতীয় প্রযুক্তি কোম্পানির শেয়ারও ২ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।


নতুন জটিলতা

২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মোট এইচ-১বি ভিসার ৭১ শতাংশ ভারতীয়রা পেয়েছিলেন। কিন্তু নতুন ফি চালুর ফলে ভারতীয়দের ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়ে যাবে।

এছাড়া ২০২৫ সালের অক্টোবর থেকে মার্কিন নাগরিকত্ব পরীক্ষাও কঠিন করা হচ্ছে। নতুন নিয়মে প্রশ্নের সংখ্যা ১২৮ করা হবে এবং ২০টির মধ্যে অন্তত ১২টির সঠিক উত্তর দিতে হবে।

ইতিমধ্যে ইউএসসিআইএস নাগরিকত্বের আবেদনকারীদের জন্য বাড়তি “নৈতিক চরিত্র” যাচাই ও “পাড়া-প্রতিবেশী সাক্ষাৎকার” চালু করেছে।

অন্যদিকে, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ৬ সেপ্টেম্বর নতুন নির্দেশ জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, ভ্রমণ (বি১/বি২), কর্মসংস্থান (এইচ-১বি ও ও-১) এবং শিক্ষার্থী (এফ১) ভিসার আবেদনকারীদের তাদের নিজ নিজ দেশ থেকেই আবেদন করতে হবে।

ট্রাম্পের ১ লাখ ডলারের ভিসা ফি: ভারতীয় স্বপ্নে বড় ধাক্কা

১১:৪৪:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ট্রাম্পের নতুন ঘোষণা

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ও ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন এক পদক্ষেপ নিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের ঘোষণায় জানানো হয়েছে, এখন থেকে এইচ-১বি ভিসার স্পনসরশিপের জন্য কোম্পানিগুলোকে ১ লাখ ডলার (প্রায় ১ কোটি টাকা) ফি দিতে হবে।

শুক্রবার ওভাল অফিসে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, এই সিদ্ধান্তের ফলে কোম্পানিগুলো শুধুমাত্র সেইসব কর্মীদের আনবে যারা উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন এবং যাদের সহজে মার্কিন কর্মীদের দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যাবে না।


ট্রাম্পের বক্তব্য

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “কোম্পানিগুলোর কর্মী দরকার,আর আমাদের দরকার দক্ষ কর্মী। এই ঘোষণার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ভালো কর্মী পাবে।”


এইচ-১বি ভিসার গুরুত্ব

যুক্তরাষ্ট্রে কাজের অন্যতম কাঙ্ক্ষিত ভিসা হলো এইচ-১বি। হাজার হাজার ভারতীয় এই ভিসার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। বিশেষ করে আইটি খাতের মার্কিন কোম্পানিগুলোই এ ভিসার জন্য বেশি স্পনসর করে।

হোয়াইট হাউস জানায়, এই বিধিনিষেধ মার্কিন শ্রমিকদের সুরক্ষা দেবে এবং কোম্পানিগুলোর জন্য দক্ষ কর্মী আনার “পথ” তৈরি করবে।


মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্য

মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী জিনা রাইমন্ডো বলেন, “বড় কোম্পানিগুলোকে আর বিদেশি কর্মী প্রশিক্ষণ দেওয়া অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না। ১ লাখ ডলার সরকারকে দিতে হবে, তারপর কর্মীকেও দিতে হবে। ফলে তারা নিজেদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নতুন স্নাতকদেরই প্রশিক্ষণ দেবে। এতে বিদেশি কর্মীরা মার্কিন চাকরি নেওয়া বন্ধ হবে।”

তিনি আরও জানান, “সব বড় কোম্পানি এই সিদ্ধান্তে রাজি হয়েছে।”


প্রেক্ষাপট ও ব্লুমবার্গের তথ্য

প্রথমে ব্লুমবার্গ এ বিষয়ে খবর প্রকাশ করে। তারা জানায়, ভিসার অপব্যবহার রোধের অংশ হিসেবেই ট্রাম্প প্রশাসন এই পদক্ষেপ নিচ্ছে।

বর্তমানে এইচ-১বি ভিসার জন্য লটারিতে নাম নিবন্ধনে ২১৫ ডলার এবং ফর্ম আই-১২৯ জমা দিতে ৭৮০ ডলারসহ আরও কয়েকটি ফি দিতে হয়। নতুন এই ১ লাখ ডলার ফি এর সঙ্গে যুক্ত হবে।


কংগ্রেসে নতুন বিল

এই পরিবর্তনের আগে সিনেটর জিম ব্যাংকস “আমেরিকান টেক ওয়ার্কফোর্স অ্যাক্ট” নামে একটি বিল উত্থাপন করেন। এতে এইচ-১বি কর্মীদের ন্যূনতম বেতন ৬০ হাজার ডলার থেকে বাড়িয়ে ১,৫০,০০০ ডলার করার প্রস্তাব, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য থাকা ওপিটি প্রোগ্রাম বাতিলের দাবি এবং ভিসা লটারি ব্যবস্থার পরিবর্তে সর্বোচ্চ দরদাতাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।


ভারতীয়দের প্রভাব

গত বছর অনুমোদিত এইচ-১বি ভিসাধারীদের মধ্যে ৭১ শতাংশই ছিলেন ভারতীয় নাগরিক। চীন অনেক পিছনে ছিল—মাত্র ১১.৭ শতাংশ।

২০২৫ সালের প্রথমার্ধে অ্যামাজন ও এর ক্লাউড ইউনিট এডব্লিউএস ১২ হাজারের বেশি এইচ-১বি ভিসা অনুমোদন পায়। মাইক্রোসফট ও মেটা প্ল্যাটফর্মসও পেয়েছে ৫ হাজারের বেশি ভিসা।


কোম্পানি ও বাজারের প্রতিক্রিয়া

যদিও অনেক বড় মার্কিন প্রযুক্তি, ব্যাংকিং ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কোনো মন্তব্য করতে চায়নি, তবে বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। কগনিজ্যান্ট টেকনোলজি সল্যুশনসের শেয়ার প্রায় ৫ শতাংশ কমেছে। ইনফোসিস ও উইপ্রোসহ ভারতীয় প্রযুক্তি কোম্পানির শেয়ারও ২ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।


নতুন জটিলতা

২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মোট এইচ-১বি ভিসার ৭১ শতাংশ ভারতীয়রা পেয়েছিলেন। কিন্তু নতুন ফি চালুর ফলে ভারতীয়দের ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়ে যাবে।

এছাড়া ২০২৫ সালের অক্টোবর থেকে মার্কিন নাগরিকত্ব পরীক্ষাও কঠিন করা হচ্ছে। নতুন নিয়মে প্রশ্নের সংখ্যা ১২৮ করা হবে এবং ২০টির মধ্যে অন্তত ১২টির সঠিক উত্তর দিতে হবে।

ইতিমধ্যে ইউএসসিআইএস নাগরিকত্বের আবেদনকারীদের জন্য বাড়তি “নৈতিক চরিত্র” যাচাই ও “পাড়া-প্রতিবেশী সাক্ষাৎকার” চালু করেছে।

অন্যদিকে, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ৬ সেপ্টেম্বর নতুন নির্দেশ জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, ভ্রমণ (বি১/বি২), কর্মসংস্থান (এইচ-১বি ও ও-১) এবং শিক্ষার্থী (এফ১) ভিসার আবেদনকারীদের তাদের নিজ নিজ দেশ থেকেই আবেদন করতে হবে।