জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি নেতার প্রশ্ন
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ শনিবার প্রশ্ন তুলেছেন—যদি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সত্যিই মনে করে তারা ক্ষমতায় যাবে, তাহলে কেন তারা বিভিন্ন কৌশলে আগামী জাতীয় নির্বাচন পেছাতে চাচ্ছে। রাজধানীতে এক যুব সংলাপে তিনি বলেন, জামায়াত নির্বাচনে অংশ না নিয়ে আন্দোলনের নামে অজুহাত দিচ্ছে।
তিনি আরও সমালোচনা করেন যে, জামায়াত এখন জাতীয় পার্টি ও ১৪-দলীয় জোটকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলছে, অথচ তারা একসঙ্গে আছে এমন এক দলের সঙ্গে, যারা শেখ হাসিনার অধীনে অনুষ্ঠিত ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।
জনগণই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে
সালাহউদ্দিন বলেন, গত শুক্রবার জামায়াতসহ কয়েকটি দলের সমাবেশ হয়েছে। পরের দিন পত্রিকায় শিরোনাম এসেছে যে জামায়াত সরকার গঠন করবে, আর বিএনপি থাকবে বিরোধী দলে। তিনি প্রশ্ন করেন, “এটা আপনারা ঠিক করবেন, নাকি জনগণ? এত আত্মবিশ্বাস থাকলে নির্বাচনমুখী হন, নির্বাচন ঠেকাতে নানা অজুহাত কেন?”
তিনি দাবি করেন, বিএনপি জানে জামায়াতের আসল উদ্দেশ্য—জাতীয় নির্বাচনকে বিপথে নেওয়া।
সংলাপ আয়োজন ও মূল বক্তব্য
‘মানবিক মূল্যবোধভিত্তিক শিক্ষা ও ক্যাম্পাস’ শীর্ষক তৃতীয় যুব সংলাপের আয়োজন করে অর্পণ অলোক সংঘ। অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশে।
জামায়াতের দ্বিমুখী আচরণের অভিযোগ
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন অভিযোগ করেন, জামায়াত দ্বিমুখী আচরণ করছে। একদিকে তারা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (PR) ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি করছে, অন্যদিকে ১৪-দল ও জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে চাইছে।
তিনি বলেন, “যে সাতটি দলকে নিয়ে জামায়াত আন্দোলন করছে, তার মধ্যে একটি দল ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। যদি তারা কেবল আপনাদের সঙ্গে থাকায় নির্দোষ হয়, তাহলে যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভোটে অংশ নিয়েছিল, তারা কি দোষী?”
পরোক্ষভাবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এ দলটিও আগের সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গী ছিল, শুধু ২০২৪ সালের ভোট ছাড়া।
ভিন্নমত ও আলোচনার জায়গা
সালাহউদ্দিন বলেন, ভিন্নমত গণতন্ত্রের অংশ। যেকোনো দল নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করতে পারে। তবে তিনি মনে করিয়ে দেন, এসব বিষয় আলোচনার টেবিলে সমাধান হওয়া উচিত।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “আপনারা কি শুধু চাপ তৈরি করতে রাজপথে নেমেছেন? তাহলে আমাদেরও তো পাল্টা রাস্তায় নামতে হবে। সেটা কি আমরা চাই? আমরা চাই আলোচনার টেবিলে সমাধান।”
গণতান্ত্রিক চর্চা ও ঐক্যের আহ্বান
সালাহউদ্দিন বলেন, গত বছরের গণআন্দোলনের পর দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন এসেছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে তা ধরে রাখতে হবে। জাতীয় স্বার্থ, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের বিষয়ে সব দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
তার মতে, গণতান্ত্রিক চর্চায় বিতর্ক, মতভেদ ও বহুমত থাকবে, তবে সমাধান আসতে হবে আলোচনার মাধ্যমেই। একই ইস্যুতে সংলাপ কিংবা আন্দোলন—এটা সাংঘর্ষিক।
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ইস্যুতে অবস্থান
বিএনপি নেতা বলেন, কিছু দল আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার কথা বলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, “কয়েক হাজার লোকের মিছিল-সমাবেশ কি জনগণের রায় ছাড়াই PR ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারে?”
তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানান, তাদের দাবিগুলো নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করতে এবং ভোটে অংশ নিতে। “জনগণ যদি আপনাদের পক্ষে রায় দেয়, তখন তা বাস্তবায়ন করবেন। এটাই গণতান্ত্রিক পথ।”