চার মাসের প্রতিশ্রুতি, দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তা
থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী আনুতিন চার্নভিরাকুল কতদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন—এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আগের দুই প্রধানমন্ত্রী মাত্র এক বছরের মধ্যেই পদ হারিয়েছিলেন। আনুতিন দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ঘোষণা করেছেন, চার মাসের মধ্যে নির্বাচন দেবেন। তবে অনেকের ধারণা, তিনি হয়তো আরও দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে পারবেন।
সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা
আনুতিন তার সহজ-সরল আচরণ এবং প্রাণবন্ত ব্যক্তিত্ব দিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দরিদ্র কৃষকদের মন জয় করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে কারাওকে গাইতে, স্যাক্সোফোন বাজাতে এবং রান্না করতে দেখা যায়—যা থাই সংস্কৃতিতে বিশেষভাবে প্রশংসিত। এমনকি এক পোস্টে দেখা যায়, তিনি নিজের বিমানে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের রোগীদের জন্য অঙ্গ নিয়ে যাচ্ছেন।
ডাকনাম “নু”
আনুতিনের রাজনৈতিক দর্শন পরিষ্কার নয়। অনেকে তাকে ডাকেন “নু”—বন্ধুদের কাছে “ইঁদুর”, আর প্রতিপক্ষদের কাছে “চতুর ইঁদুর”। কয়েক বছর আগে প্রকাশিত তার জীবনী বইয়ের নাম ছিল—“যেখানে গর্ত, সেখানেই নু”—যা তার জটিল পরিস্থিতি সামলানোর দক্ষতার প্রতীক।
রাজা ও সেনাবাহিনীর সমর্থন
৭ সেপ্টেম্বর থাইল্যান্ডের রাজা তাকে সরকার গঠনের দায়িত্ব দেন, যদিও তার দল সংসদের মাত্র এক-সপ্তমাংশ আসন পেয়েছে। আদালতের রায়ে বড় দুই দলের অনেক নেতা অযোগ্য ঘোষিত হওয়ায় তার উত্থান সহজ হয়েছে। ২০১৭ সালের সংবিধান আদালতকে সরকার সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপক ক্ষমতা দিয়েছে। আগের দুই প্রধানমন্ত্রীও এর আওতায় পদ হারান।
তবুও আনুতিন সেনা ও রাজপরিবারের আস্থা অর্জন করেছেন এবং সংসদেও সমর্থন জোগাড় করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজপরিবারের সমর্থন পাওয়ার ধারণাটিই তাকে ক্ষমতায় এনেছে।
অবাক করা জোট
সবচেয়ে বড় চমক ছিল পিপলস পার্টির সমর্থন। তারা বাইরে থেকে আনুতিনের সংখ্যালঘু সরকারকে টিকিয়ে রাখতে রাজি হয়েছে। বিনিময়ে তারা দুটি শর্ত আদায় করেছে—আগামী বছরের শুরুতে নির্বাচন এবং সংবিধান সংস্কারের জন্য গণভোট। এসব দাবি তরুণ সমর্থকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আনুতিনের কৌশল
আনুতিনের লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক জনতাবাদী ও রাজতান্ত্রিক রক্ষণশীলদের একত্রিত করে তরুণ উদারপন্থীদের মোকাবিলা করা। দরিদ্র কৃষকদের খুশি করতে তার সরকার পুনরায় চালু করেছে মহামারিকালীন কর্মসূচি “লেটস গো হ্যাল্ভস”। অপরদিকে, রক্ষণশীলদের সন্তুষ্ট করতে তিনি রাজতন্ত্রের প্রতি আনুগত্য এবং প্রতিবেশী কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছেন।
যদি এই ভিন্নমুখী শক্তিগুলোকে একত্রিত করতে পারেন, তবে তিনি নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে পুরো চার বছরের মেয়াদ নিশ্চিত করতে পারবেন।
থাইল্যান্ডের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
তবে প্রশ্ন হলো, এতে থাইল্যান্ডের কী হবে? দেশটি এখন দ্বৈত সংকটে রয়েছে—অকাল শিল্পহ্রাস এবং পরিবারের ঋণের ভার। জনতাবাদী ভর্তুকি দিয়ে এই সংকটের সমাধান সম্ভব নয়। তরুণ উদারপন্থীরা চায় গভীর অর্থনৈতিক সংস্কার এবং সেনা ও রাজপরিবারের রাজনীতি থেকে সরে আসা।
থাইল্যান্ডের এই জটিল বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে আসা সহজ হবে না। হয়তো এবার সেই চতুর “নু”-ও কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়বেন।