০৭:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সৌদি-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তি: ভারতের জন্য কতটা উদ্বেগের কারণ?

নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তি

পাকিস্তান ও সৌদি আরব গত বুধবার রিয়াদে একটি কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সফরের সময় এ চুক্তি হয়। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যে কোনো এক দেশের ওপর হামলা হলে সেটি উভয় দেশের ওপর আগ্রাসন হিসেবে বিবেচিত হবে।

চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি। তবে এক সৌদি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এতে সামরিক শক্তির সব মাধ্যম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা থাকলেও এর কোনো সুনির্দিষ্ট উল্লেখ করা হয়নি।

চুক্তির সময়কাল ও প্রেক্ষাপট

চুক্তিটি এমন সময়ে স্বাক্ষরিত হলো, যখন ইসরায়েল কাতারে অভূতপূর্ব বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে সৌদি আরবের সতর্কতা আরও বেড়েছে। আগে সৌদি-পাকিস্তান সম্পর্ক ছিল ধর্মীয় বন্ধন, অর্থনৈতিক সহায়তা ও পাকিস্তানি সামরিক উপস্থিতির ওপর নির্ভরশীল।

  • ২০১৫ সালে পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ ইসলামিক মিলিটারি কাউন্টারটেররিজম কোয়ালিশনের নেতৃত্ব দেন।
  • ২০১৮ সালে পাকিস্তান সৌদি আরবে সেনা পাঠিয়ে ইয়েমেন যুদ্ধে সহায়তা করে।

বর্তমানে জঙ্গিবাদ ও আইএস-সংকট তুলনামূলকভাবে কমেছে। সৌদি আরবও ইয়েমেন যুদ্ধ থেকে সরে আসতে চায়। এখন মূল উদ্বেগ ইসরায়েলের আঞ্চলিক প্রভাব ঠেকানো। ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলাই এই চুক্তির অন্যতম প্রেরণা।

পাকিস্তানের লক্ষ্য

পাকিস্তান এ চুক্তি থেকে সরাসরি কয়েকটি লাভের আশায় রয়েছে।

  • ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরবদের অবস্থান ব্যবহার করে ভারতবিরোধী সুবিধা নেওয়া।
  • সৌদি আরবে বর্তমানে ১,২০০ থেকে ২,০০০ পাকিস্তানি সেনা মোতায়েন রয়েছে।
  • এর বিনিময়ে সৌদি আরব থেকে অর্থনৈতিক সহায়তা পাওয়ার আশা করছে ইসলামাবাদ।

ফলে, ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাতে সৌদি আরবের কূটনৈতিক সমর্থন পাওয়ার সুযোগ পাকিস্তান দেখছে।

ভারতের অবস্থান

ভারতের সঙ্গে সৌদি প্রতিরক্ষা সম্পর্ক তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিক।

  • ২০২৫ সালের আগস্টে সপ্তম ভারত-সৌদি প্রতিরক্ষা বৈঠকে ভারত সৌদি সেনাদের প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেয়।
  • এ বছরের এপ্রিলে একটি যৌথ প্রতিরক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
  • ভারত ও সৌদি সেনাদের যৌথ মহড়াও শুরু হয়েছে।

তবে ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বে আরব দেশগুলো সাধারণত নিরপেক্ষ থাকে। ২০২৫ সালের মে মাসে পাহালগাঁও হামলার পর সৌদি আরব ঘটনাটি নিন্দা করলেও ভারতের পাল্টা অভিযান নিয়ে সমালোচনা করেনি।

ভারতের জন্য ঝুঁকি কতটা?

যৌথ বিবৃতিতে পারমাণবিক সহযোগিতা বা সরাসরি সামরিক প্রতিশ্রুতির উল্লেখ নেই।

  • পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝাচ্ছে যে তাদের পারমাণবিক অস্ত্র শুধু ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্য।
  • ইসলামাবাদ কখনোই “ইসলামিক বোমা” ধারণাকে মেনে নেয়নি।
  • সৌদি আরবও ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক, বিশেষ করে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে গুরুত্ব দিচ্ছে।

তাই এই চুক্তি দক্ষিণ এশিয়ার ভারসাম্য বদলে দেবে, এমন সম্ভাবনা কম। বরং সৌদি আরবের বাস্তববাদী নীতি ভারত-সৌদি সম্পর্ক আরও জোরদার করতে পারে।

সৌদি-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তি: ভারতের জন্য কতটা উদ্বেগের কারণ?

০৪:৫৬:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তি

পাকিস্তান ও সৌদি আরব গত বুধবার রিয়াদে একটি কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সফরের সময় এ চুক্তি হয়। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যে কোনো এক দেশের ওপর হামলা হলে সেটি উভয় দেশের ওপর আগ্রাসন হিসেবে বিবেচিত হবে।

চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি। তবে এক সৌদি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এতে সামরিক শক্তির সব মাধ্যম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা থাকলেও এর কোনো সুনির্দিষ্ট উল্লেখ করা হয়নি।

চুক্তির সময়কাল ও প্রেক্ষাপট

চুক্তিটি এমন সময়ে স্বাক্ষরিত হলো, যখন ইসরায়েল কাতারে অভূতপূর্ব বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে সৌদি আরবের সতর্কতা আরও বেড়েছে। আগে সৌদি-পাকিস্তান সম্পর্ক ছিল ধর্মীয় বন্ধন, অর্থনৈতিক সহায়তা ও পাকিস্তানি সামরিক উপস্থিতির ওপর নির্ভরশীল।

  • ২০১৫ সালে পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ ইসলামিক মিলিটারি কাউন্টারটেররিজম কোয়ালিশনের নেতৃত্ব দেন।
  • ২০১৮ সালে পাকিস্তান সৌদি আরবে সেনা পাঠিয়ে ইয়েমেন যুদ্ধে সহায়তা করে।

বর্তমানে জঙ্গিবাদ ও আইএস-সংকট তুলনামূলকভাবে কমেছে। সৌদি আরবও ইয়েমেন যুদ্ধ থেকে সরে আসতে চায়। এখন মূল উদ্বেগ ইসরায়েলের আঞ্চলিক প্রভাব ঠেকানো। ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলাই এই চুক্তির অন্যতম প্রেরণা।

পাকিস্তানের লক্ষ্য

পাকিস্তান এ চুক্তি থেকে সরাসরি কয়েকটি লাভের আশায় রয়েছে।

  • ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরবদের অবস্থান ব্যবহার করে ভারতবিরোধী সুবিধা নেওয়া।
  • সৌদি আরবে বর্তমানে ১,২০০ থেকে ২,০০০ পাকিস্তানি সেনা মোতায়েন রয়েছে।
  • এর বিনিময়ে সৌদি আরব থেকে অর্থনৈতিক সহায়তা পাওয়ার আশা করছে ইসলামাবাদ।

ফলে, ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাতে সৌদি আরবের কূটনৈতিক সমর্থন পাওয়ার সুযোগ পাকিস্তান দেখছে।

ভারতের অবস্থান

ভারতের সঙ্গে সৌদি প্রতিরক্ষা সম্পর্ক তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিক।

  • ২০২৫ সালের আগস্টে সপ্তম ভারত-সৌদি প্রতিরক্ষা বৈঠকে ভারত সৌদি সেনাদের প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেয়।
  • এ বছরের এপ্রিলে একটি যৌথ প্রতিরক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
  • ভারত ও সৌদি সেনাদের যৌথ মহড়াও শুরু হয়েছে।

তবে ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বে আরব দেশগুলো সাধারণত নিরপেক্ষ থাকে। ২০২৫ সালের মে মাসে পাহালগাঁও হামলার পর সৌদি আরব ঘটনাটি নিন্দা করলেও ভারতের পাল্টা অভিযান নিয়ে সমালোচনা করেনি।

ভারতের জন্য ঝুঁকি কতটা?

যৌথ বিবৃতিতে পারমাণবিক সহযোগিতা বা সরাসরি সামরিক প্রতিশ্রুতির উল্লেখ নেই।

  • পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝাচ্ছে যে তাদের পারমাণবিক অস্ত্র শুধু ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্য।
  • ইসলামাবাদ কখনোই “ইসলামিক বোমা” ধারণাকে মেনে নেয়নি।
  • সৌদি আরবও ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক, বিশেষ করে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে গুরুত্ব দিচ্ছে।

তাই এই চুক্তি দক্ষিণ এশিয়ার ভারসাম্য বদলে দেবে, এমন সম্ভাবনা কম। বরং সৌদি আরবের বাস্তববাদী নীতি ভারত-সৌদি সম্পর্ক আরও জোরদার করতে পারে।