বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধাক্কায় অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ চলতি বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। পুনঃবীমা সংস্থা সুইস রে–এর প্রাথমিক হিসাব বলছে, দুই হাজার পঁচিশ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ক্ষতি কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় বাইশ শ’ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় এক তৃতীয়াংশ কম। তবে এই স্বস্তির মধ্যেও বড় দুর্যোগের ঝুঁকি যে কাটেনি, তা স্পষ্ট করছে একের পর এক ভয়াবহ ঘটনা।
উত্তর আটলান্টিকে তুলনামূলক শান্ত ঘূর্ণিঝড় মৌসুম
সুইস রে জানায়, ক্ষতি কমার প্রধান কারণ উত্তর আটলান্টিকে তুলনামূলকভাবে কম তীব্র ঘূর্ণিঝড় মৌসুম। দুই হাজার চব্বিশ সালের তুলনায় দুই হাজার পঁচিশ সালে ঝড়ের তাণ্ডব অনেকটাই কম ছিল। টানা দশ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো বড় ঘূর্ণিঝড় যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলে আঘাত হানেনি। এর ফলেই বিমাকৃত ক্ষতির অঙ্ক উল্লেখযোগ্যভাবে নেমে আসে।
বিমাকৃত ক্ষতির অঙ্ক এখনও বিপুল
অর্থনৈতিক ক্ষতি কমলেও বিমাকৃত ক্ষতির মোট অঙ্ক দুই হাজার পঁচিশ সালের একশ’ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়িয়েছে। সুইস রে–এর হিসাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বিমাকৃত ক্ষতি দাঁড়াতে পারে প্রায় একশ’ সাত বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় এক চতুর্থাংশ কম। তবু টানা ষষ্ঠ বছরের মতো এই সীমা অতিক্রম করায় বীমা খাতের উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে।

মেলিসার তাণ্ডব ক্যারিবীয় অঞ্চলে
চলতি বছরে মোট তেরোটি নামকৃত ক্রান্তীয় ঝড় দেখা গেছে, যার মধ্যে তিনটি ছিল সর্বোচ্চ শক্তিশালী ক্যাটাগরি পাঁচের ঘূর্ণিঝড়। এরিন, হামবার্টো ও মেলিসা নামের এই ঝড়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ছিল হারিকেন মেলিসা। জ্যামাইকা, হাইতি ও কিউবায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো এই ঝড়ে বিমাকৃত ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার। ঘণ্টায় প্রায় তিনশ’ কিলোমিটার গতির ঝড়ো হাওয়ায় সৃষ্টি হয় ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধস, যা এটিকে ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী স্থলভাগে আঘাত হানা ঝড়ে পরিণত করেছে।
টর্নেডো ও দাবানলে নতুন চাপ
সুইস রে সতর্ক করেছে, তীব্র ঝড় এখনো বিশ্বব্যাপী ক্ষতির বড় চালক। সহিংস ঝোড়ো হাওয়া, শিলাবৃষ্টি, টর্নেডো ও আকস্মিক বন্যা মিলিয়ে দুই হাজার পঁচিশ সালে শুধু এই ধরনের ঝড় থেকেই বিমাকৃত ক্ষতি হয়েছে প্রায় পঞ্চাশ বিলিয়ন ডলার। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে মার্চ ও মে মাসে একের পর এক টর্নেডো পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে। একই সঙ্গে লস অ্যাঞ্জেলেসের ভয়াবহ দাবানল বিশ্ব ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল বনাগ্নিতে পরিণত হয়েছে, যেখানে বিমাকৃত ক্ষতির অঙ্ক প্রায় চল্লিশ বিলিয়ন ডলার।
নগরায়ণ ও জলবায়ু বাস্তবতা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নগরায়ণ, সম্পদের মূল্য বৃদ্ধি, নির্মাণ ব্যয়ের ঊর্ধ্বগতি এবং পুরোনো অবকাঠামো দুর্যোগজনিত ক্ষতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। একক কোনো ঘটনা বড় ক্ষতি না করলেও বারবার ছোট আঘাতের সম্মিলিত প্রভাব বীমা খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক বিমাকৃত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ক্ষতির প্রায় তিরাশি শতাংশ ঘটে বলে জানিয়েছে সুইস রে।

এশিয়ায় নতুন সতর্কতা
এদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়ও দুর্যোগের আশঙ্কা বেড়েছে। নভেম্বর মাসে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় তীব্র নদীভাঙন ও আকস্মিক বন্যা দেখা দিলেও এখনো ক্ষতির চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করেনি সুইস রে। বিশ্লেষকদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতায় আগামী বছরগুলোতে ক্ষতির ধরন ও মাত্রা আরও বদলে যেতে পারে।
মেটা বর্ণনা
প্রাকৃতিক দুর্যোগে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ক্ষতি কমলেও হারিকেন, টর্নেডো ও দাবানলের ঝুঁকি এখনও বিশ্ব অর্থনীতিকে চাপে রাখছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















