১০:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রাকৃতিক দুর্যোগে অর্থনৈতিক ক্ষতি এক তৃতীয়াংশ কমল, তবু ঝুঁকি কাটেনি আলু, চাল, পেঁয়াজ স্লোগানে মাতিল—ঢাকা না দিল্লি—দিল্লি, দিল্লি। টানাপোড়েনে ঢাকা দিল্লি সম্পর্ক শহরে বাড়ছে শেয়াল ও কায়োট—মানুষের পরিবেশে বন্যপ্রাণীর মানিয়ে নেওয়া বিশ্বে মিথেন নিঃসরণ রেকর্ড উচ্চতায়—জলবায়ু লক্ষ্য নিয়ে বিজ্ঞানীদের সতর্কতা এআই ব্যবহারে স্বচ্ছতা চাইছে অ্যাপল—অ্যাপ স্টোর নীতিমালায় নতুন কড়াকড়ি নেটফ্লিক্সে কে-ড্রামা ও অ্যানিমের বিশ্বজয় জিওহটস্টার দক্ষিণ ভারতীয় কনটেন্টে $৪৪৪ মিলিয়ন বিনিয়োগের ঘোষণা চ্যাটবট চাপে গুগলের নতুন এআই সার্চ উন্মোচন আইডোলাদের সঙ্গে ডোলার আবেগী পুনর্মিলন, সানওয়ে পিরামিডে স্মরণীয় বিকেল

ইন্দাস জলচুক্তি: ৬৫ বছরের কাঠামো ভঙ্গুর, জলবায়ু পরিবর্তনে নতুন হুমকি

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বহুল আলোচিত ইন্দাস জলচুক্তি এ বছর ৬৫ বছরে পা দিল। ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত এই চুক্তি দুই দেশের নদী ব্যবহার ও কৃষি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এক সময় কার্যকর ছিল। কিন্তু আজকের দিনে প্রধান চ্যালেঞ্জ আর শুধু নদী ভাগাভাগি নয়—সবচেয়ে বড় সংকট জলবায়ু পরিবর্তন। নতুন বাস্তবতা ইঙ্গিত দিচ্ছে, পুরনো কাঠামো দিয়ে আর এই সংকট সামলানো সম্ভব নয়।

চুক্তির বর্তমান অবস্থা
চুক্তি অনুযায়ী পশ্চিম দিকের নদীগুলো—চেনাব, ঝিলম ও ইন্দাস—পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ হয় এবং পূর্ব দিকের নদীগুলো—সতলজ, বেয়াস ও রাভি—ভারতের জন্য সংরক্ষিত থাকে। কৃষি, বাঁধ ও খাল ব্যবস্থাপনায় এই সমঝোতা তখন কার্যকর প্রমাণিত হয়েছিল। কিন্তু আজ সীমান্তপারের জলতাত্ত্বিক তথ্য বিনিময় ও বন্যার আগাম সতর্কতা অনেক বেশি জরুরি।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান দাবি করেন—পশ্চিম নদীগুলো যেহেতু পাকিস্তানের দখলে, তাই কাশ্মীরের দাবিও তাদের ন্যায্য। অন্যদিকে নেহরু চেয়েছিলেন শান্তি ও সহযোগিতার সেতুবন্ধন গড়তে। কিন্তু আইয়ুব সেই চুক্তিকেই বিরোধের অস্ত্রে পরিণত করেন। ভারতের সংসদে নেহরুকে অতিরিক্ত সমঝোতাপূর্ণ মনোভাবের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছিল, তবু তিনি বৃহত্তর শান্তির স্বার্থে এই সমঝোতাকে অপরিহার্য মনে করেছিলেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের নতুন সংকট
আজ ইন্দাস অববাহিকার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো জলবায়ু পরিবর্তন। হিমালয় ও হিন্দুকুশ অঞ্চলে হিমবাহ দ্রুত গলছে, ফলে নদীর প্রবাহ অস্থির হচ্ছে। বর্ষা অনিয়মিত হয়ে পড়ছে, কৃষি মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছে।

২০২৫ সালের পাঞ্জাবের ভয়াবহ বন্যা সেই সতর্কবার্তা দিয়েছে। ভারতের পাঞ্জাবে ২৩টি জেলা ও ১,৬৫০ গ্রাম প্লাবিত হয়, ডুবে যায় ১.৭৫ লাখ একর জমি। পাকিস্তানের পাঞ্জাবেও কয়েক মিলিয়ন মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হয়েছে।

নীরব বিপদ: পলি জমে যাওয়া
জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত আরেকটি গুরুতর সমস্যা হলো পলি জমে যাওয়া। বাঁধ ও জলাধারে পলি জমে পানির ধারণক্ষমতা কমে যাচ্ছে, খালের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, আর নদীর পাড় উঁচু হয়ে বন্যার মাত্রা আরও বেড়ে যাচ্ছে।

এ বছরের বন্যায় বহু কৃষিজমি পলিতে ঢেকে গেছে। তবে পলিকে শুধু বর্জ্য না ভেবে সম্পদ হিসেবে ব্যবহারের প্রয়োজন রয়েছে। মাটি উর্বর করা, নির্মাণকাজ কিংবা জমি পুনরুদ্ধার—সব ক্ষেত্রেই এটি কার্যকর হতে পারে। এ জন্য জাতীয় সিল্ট ব্যবস্থাপনা নীতি জরুরি।

চুক্তি বনাম নতুন প্রয়োজন
ইন্দাস জলচুক্তি তৈরি হয়েছিল এমন সময়ে, যখন পানি মানেই ছিল বাঁধ, খাল ও বিদ্যুৎকেন্দ্র। আজ পানি মানে হলো জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা, দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং ভঙ্গুর প্রতিবেশ সংরক্ষণ। তাই শুধু পুরনো ধারাগুলোর ওপর নির্ভর করে সমাধান আসবে না।

ভারত ইতিমধ্যেই ব্রহ্মপুত্র নদ নিয়ে চীনের সঙ্গে তথ্য বিনিময় চুক্তি করেছে, যা বর্ষা মৌসুমে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। ইন্দাস জলচুক্তিতেও তথ্য বিনিময়ের ব্যবস্থা থাকলেও নতুন বাস্তবতার জন্য এটিকে পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

সামনে পথ
৬৫ বছর আগে করা চুক্তির কাঠামো আজ আর যথেষ্ট নয়। নদীগুলো পলিতে ভরে যাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনে প্রবাহ অস্থির হচ্ছে, অথচ কোনো জাতীয় সিল্ট নীতি নেই।

এখন জরুরি হলো—দোষারোপ নয়, বরং কার্যকর প্রস্তুতি ও সমাধান খোঁজা। কারণ এ সংকট কেবল রাজনৈতিক প্রশ্ন নয়; কোটি মানুষের জীবন ও ভবিষ্যতের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রাকৃতিক দুর্যোগে অর্থনৈতিক ক্ষতি এক তৃতীয়াংশ কমল, তবু ঝুঁকি কাটেনি

ইন্দাস জলচুক্তি: ৬৫ বছরের কাঠামো ভঙ্গুর, জলবায়ু পরিবর্তনে নতুন হুমকি

০৫:৩৫:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বহুল আলোচিত ইন্দাস জলচুক্তি এ বছর ৬৫ বছরে পা দিল। ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত এই চুক্তি দুই দেশের নদী ব্যবহার ও কৃষি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এক সময় কার্যকর ছিল। কিন্তু আজকের দিনে প্রধান চ্যালেঞ্জ আর শুধু নদী ভাগাভাগি নয়—সবচেয়ে বড় সংকট জলবায়ু পরিবর্তন। নতুন বাস্তবতা ইঙ্গিত দিচ্ছে, পুরনো কাঠামো দিয়ে আর এই সংকট সামলানো সম্ভব নয়।

চুক্তির বর্তমান অবস্থা
চুক্তি অনুযায়ী পশ্চিম দিকের নদীগুলো—চেনাব, ঝিলম ও ইন্দাস—পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ হয় এবং পূর্ব দিকের নদীগুলো—সতলজ, বেয়াস ও রাভি—ভারতের জন্য সংরক্ষিত থাকে। কৃষি, বাঁধ ও খাল ব্যবস্থাপনায় এই সমঝোতা তখন কার্যকর প্রমাণিত হয়েছিল। কিন্তু আজ সীমান্তপারের জলতাত্ত্বিক তথ্য বিনিময় ও বন্যার আগাম সতর্কতা অনেক বেশি জরুরি।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান দাবি করেন—পশ্চিম নদীগুলো যেহেতু পাকিস্তানের দখলে, তাই কাশ্মীরের দাবিও তাদের ন্যায্য। অন্যদিকে নেহরু চেয়েছিলেন শান্তি ও সহযোগিতার সেতুবন্ধন গড়তে। কিন্তু আইয়ুব সেই চুক্তিকেই বিরোধের অস্ত্রে পরিণত করেন। ভারতের সংসদে নেহরুকে অতিরিক্ত সমঝোতাপূর্ণ মনোভাবের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছিল, তবু তিনি বৃহত্তর শান্তির স্বার্থে এই সমঝোতাকে অপরিহার্য মনে করেছিলেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের নতুন সংকট
আজ ইন্দাস অববাহিকার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো জলবায়ু পরিবর্তন। হিমালয় ও হিন্দুকুশ অঞ্চলে হিমবাহ দ্রুত গলছে, ফলে নদীর প্রবাহ অস্থির হচ্ছে। বর্ষা অনিয়মিত হয়ে পড়ছে, কৃষি মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছে।

২০২৫ সালের পাঞ্জাবের ভয়াবহ বন্যা সেই সতর্কবার্তা দিয়েছে। ভারতের পাঞ্জাবে ২৩টি জেলা ও ১,৬৫০ গ্রাম প্লাবিত হয়, ডুবে যায় ১.৭৫ লাখ একর জমি। পাকিস্তানের পাঞ্জাবেও কয়েক মিলিয়ন মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হয়েছে।

নীরব বিপদ: পলি জমে যাওয়া
জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত আরেকটি গুরুতর সমস্যা হলো পলি জমে যাওয়া। বাঁধ ও জলাধারে পলি জমে পানির ধারণক্ষমতা কমে যাচ্ছে, খালের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, আর নদীর পাড় উঁচু হয়ে বন্যার মাত্রা আরও বেড়ে যাচ্ছে।

এ বছরের বন্যায় বহু কৃষিজমি পলিতে ঢেকে গেছে। তবে পলিকে শুধু বর্জ্য না ভেবে সম্পদ হিসেবে ব্যবহারের প্রয়োজন রয়েছে। মাটি উর্বর করা, নির্মাণকাজ কিংবা জমি পুনরুদ্ধার—সব ক্ষেত্রেই এটি কার্যকর হতে পারে। এ জন্য জাতীয় সিল্ট ব্যবস্থাপনা নীতি জরুরি।

চুক্তি বনাম নতুন প্রয়োজন
ইন্দাস জলচুক্তি তৈরি হয়েছিল এমন সময়ে, যখন পানি মানেই ছিল বাঁধ, খাল ও বিদ্যুৎকেন্দ্র। আজ পানি মানে হলো জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা, দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং ভঙ্গুর প্রতিবেশ সংরক্ষণ। তাই শুধু পুরনো ধারাগুলোর ওপর নির্ভর করে সমাধান আসবে না।

ভারত ইতিমধ্যেই ব্রহ্মপুত্র নদ নিয়ে চীনের সঙ্গে তথ্য বিনিময় চুক্তি করেছে, যা বর্ষা মৌসুমে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। ইন্দাস জলচুক্তিতেও তথ্য বিনিময়ের ব্যবস্থা থাকলেও নতুন বাস্তবতার জন্য এটিকে পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

সামনে পথ
৬৫ বছর আগে করা চুক্তির কাঠামো আজ আর যথেষ্ট নয়। নদীগুলো পলিতে ভরে যাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনে প্রবাহ অস্থির হচ্ছে, অথচ কোনো জাতীয় সিল্ট নীতি নেই।

এখন জরুরি হলো—দোষারোপ নয়, বরং কার্যকর প্রস্তুতি ও সমাধান খোঁজা। কারণ এ সংকট কেবল রাজনৈতিক প্রশ্ন নয়; কোটি মানুষের জীবন ও ভবিষ্যতের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।