টয়োটার বিপরীতে অপ্রত্যাশিত জয়
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধি ও বিক্রয় হ্রাসের কারণে মুনাফা কমে যাওয়ার চাপের মুখে ছিল জাপানি গাড়ি নির্মাতা মিতসুবিশি। এমন সময় থাইল্যান্ডের পাতায়ায় অনুষ্ঠিত এশিয়া ক্রস কান্ট্রি র্যালি (AXCR) ২০২৫-এ টয়োটাকে হারিয়ে তারা বড় ধরনের জয় অর্জন করে। এই প্রতিযোগিতা এশিয়ার সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক র্যালি হিসেবে পরিচিত।
মিতসুবিশি মোটরসের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও টিম ডিরেক্টর হিরোশি মাসুওকা বিজয়ের পর আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “আমি স্বস্তি পাচ্ছি।” থাই ড্রাইভার চায়াপন ইয়োথার নেতৃত্বে লাল ট্রাইটন পিকআপ ট্রাকটি ১৬ আগস্ট জঙ্গল ও দুর্গম পথ অতিক্রম করে প্রথম স্থান অর্জন করে। টয়োটার হাইলাক্স রেভো মাত্র ৭ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের ব্যবধানে দ্বিতীয় হয়।
বিশির সাফল্য
আগের বছরের ব্যর্থতার প্রতিশোধ
২০২৪ সালের প্রতিযোগিতায় ফিনিশিং লাইন থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে এগিয়ে থেকেও ইয়োথার ট্রাইটন হঠাৎ বিকল হয়ে পড়ে। মাসুওকা সেই সময়কে স্মরণ করে বলেন, “একজন গাড়ি নির্মাতার জন্য সবচেয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি আমাদের ওপর নেমে এসেছিল।”
সেই ব্যর্থতার মূল কারণ ছিল ইঞ্জিন নকশা। ট্রাইটনের ইঞ্জিন প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় ২০ % ছোট হওয়ায় শক্তি কম ছিল। এ ঘাটতি পূরণে অতিরিক্ত পরিবর্তন করার ফলে ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হয়ে নষ্ট হয়ে যায়।
নতুন কৌশলে জয়
এবছর মিতসুবিশি দল ইঞ্জিনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল নেয় এবং পাশাপাশি গতি কমানো ছাড়াই আঁকাবাঁকা ও কাদামাটির পথে ট্রাক চালানোর দক্ষতা উন্নত করে। ইয়োথা বলেন, “ট্রাকের নিয়ন্ত্রণ আমাকে বিস্মিত করেছে।”
প্রতিটি ধাপ শেষে সার্ভিস পার্কে চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়ে ইঞ্জিন পরীক্ষা করা হয়। প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য বাড়তি একটি ইঞ্জিনও প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।
কম বাজেটেও কার্যকর পরিকল্পনা
২০২৬ সালের মার্চ শেষে মিতসুবিশির নিট মুনাফা ৭৬ % কমে ১০ বিলিয়ন ইয়েনে নেমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই কারণে র্যালির বাজেটও ৩০ % কমানো হয়। ফলে গতবারের তুলনায় একটি ট্রাক বাদ দেওয়া হলেও কর্মীসংখ্যা অপরিবর্তিত রাখা হয়।
ট্রাক কম থাকায় ঝুঁকি বাড়লেও প্রতিটি গাড়িতে বাড়তি টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেওয়ায় রক্ষণাবেক্ষণ সহজ হয়। প্রায় ৫০ জন প্রকৌশলী ও ডিজাইনারের পাশাপাশি স্থানীয় ডিলারশিপের মেকানিকরাও এতে অংশ নেন।
দলটি সামান্য পরিবর্তনেও এগিয়ে থাকার পথ খুঁজে নেয়। যেমন টায়ারের চারপাশের রাবার গার্ডের আকার পাল্টে বাতাসের বাধা কমানো হয়। সীমিত শক্তি ও বাজেট নিয়েও তারা তিন বছরের মধ্যে প্রথম জয় পেতে সক্ষম হয়।
ঐতিহাসিক আত্মবিশ্বাস ও ভবিষ্যতের ইঙ্গিত
১৯৭৪ সালের সাফারি র্যালিতে ছোট ইঞ্জিনের ল্যান্সার ১৬০০ জিএসআর দিয়ে মিতসুবিশি পোর্শে ৯১১-কে হারিয়ে এক ঐতিহাসিক সাফল্য পেয়েছিল। মাসুওকা বলেন, “আমরা জানতাম টয়োটাকেও হারানো সম্ভব। কর্মীদের সেই আত্মবিশ্বাস ও অভিজ্ঞতা দিতে চেয়েছিলাম।”
বর্তমানে বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রসার এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা তীব্রতর হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, ঝুঁকি না নিলে প্রবৃদ্ধি সম্ভব নয়। র্যালিতে মিতসুবিশির এই সাহসী পদক্ষেপ তাদের ভবিষ্যৎ টিকে থাকার জন্য উদ্ভাবনী কৌশলের ইঙ্গিত হতে পারে।