০৫:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
উশুর মানোন্নয়নে বাংলাদেশের প্রশিক্ষক ও খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দেবে চীন প্রতিরক্ষা ভেদ করতে সক্ষম চীনের জে-২০ লালমনিরহাটে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডার, বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা চাঁদের মাটি দিয়ে ইট তৈরির যন্ত্র বানাল চীন রাজসাহীর ইতিহাস (পর্ব -২৬) গিগ কর্মীদের উত্থান—চীনের অভিজ্ঞতা থেকে এশিয়ার শিক্ষা চীনা কূটনীতিতে বদলের হাওয়া:“উলফ ওয়ারিয়ার” যুগের অবসান মগজখেকো অ্যামিবার কারণে ভারতের কেরালায় ১৮ জনের মৃত্যু, এটা কী ধরনের রোগ? ট্রাম্প প্রশাসনের পেন্টাগনের নতুন নীতি: সাংবাদিকদের ‘সংবেদনশীল তথ্য’ প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনায় তেলবাজারে অস্থিরতা

ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনায় তেলবাজারে অস্থিরতা

ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা বিশ্ব তেলবাজারে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে তেলের অতিরিক্ত সরবরাহ এবং বৈশ্বিক চাহিদার ওপর বাণিজ্য শুল্ক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব তেলের দামের সম্ভাব্য বৃদ্ধিকে সীমিত করছে। ইরাক সম্প্রতি তেল রফতানি বাড়িয়েছে, যা ওপেক-প্লাসের উৎপাদন সীমিত করার ধীর প্রক্রিয়ার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। এদিকে চারটি পশ্চিমা দেশ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ায় ইসরায়েলের তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা বেড়েছে।

মূল্য ও বাজারের গতি

এশিয়ার বাজারে বাণিজ্য শুরুর সময় তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে। ব্রেন্ট ক্রুড দাঁড়িয়েছে প্রতি ব্যারেল ৬৭.০৭ ডলারে, যা আগের তুলনায় প্রায় ৩৪ সেন্ট বা ০.৫৪ শতাংশ বেশি। অপরদিকে আমেরিকার পশ্চিম টেক্সাস তেল (ডব্লিউটিআই) অক্টোবর কন্ট্রাক্ট দাঁড়িয়েছে ৬৩.০২ ডলার এবং নভেম্বর কন্ট্রাক্ট ৬২.৭৬ ডলার প্রতি ব্যারেলে। উভয় ক্ষেত্রেই প্রায় ০.৫৪ থেকে ০.৫৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি দেখা গেছে।

ইউরোপে নিরাপত্তা উদ্বেগ

ইউরোপীয় অঞ্চলে একের পর এক ঘটনার কারণে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। রাশিয়া পোল্যান্ড সীমান্তের আকাশসীমায় হুমকি তৈরি করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এর জবাবে পোলিশ ও ন্যাটোর বিমানগুলো পোল্যান্ডের আকাশসীমার নিরাপত্তার দায়িত্বে মোতায়েন হয়। পাশাপাশি রাশিয়া পশ্চিম ইউক্রেনের কাছাকাছি এলাকায় হামলা চালিয়েছে।
এস্তোনিয়ার আকাশসীমা রাশিয়ার যুদ্ধবিমান দ্বারা লঙ্ঘিত হওয়ার ঘটনা এবং বাল্টিক সাগরে রাশিয়ার একটি বিমান নিরপেক্ষ আকাশসীমায় প্রবেশ করার অভিযোগও সামনে এসেছে। এসব ঘটনার পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এস্তোনিয়ার আনুষ্ঠানিক অভিযোগের ভিত্তিতে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন চাপ

চারটি পশ্চিমা দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ইসরায়েলের তীব্র প্রতিক্রিয়া ওই অঞ্চলে নিরাপত্তা অনিশ্চয়তাকে আরও জটিল করে তুলেছে। এর ফলে তেল উৎপাদনকারী অঞ্চলের সরবরাহ-ঝুঁকি স্পষ্টভাবে সামনে এসেছে।

সরবরাহ ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা

ইরাক আগস্ট মাসে প্রতিদিন প্রায় ৩.৩৮ মিলিয়ন ব্যারেল তেল রফতানি করেছে এবং সেপ্টেম্বর মাসে রফতানি ৩.৪ থেকে ৩.৪৫ মিলিয়ন ব্যারেলের মধ্যে হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। গত ছয় মাসে গুদামজাত মজুদ ইঙ্গিত দিচ্ছে, সরবরাহ চাহিদার চেয়ে বেশি। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত রিজার্ভ বাড়িয়ে এই অতিরিক্ত সরবরাহের একটি অংশ শোষণ করছে, তবে এ কারণে দাম বাড়ার সম্ভাবনা কার্যত সীমিত হয়ে পড়ছে।

ভবিষ্যতের ঝুঁকি ও সম্ভাবনা

বর্তমান উত্তেজনা তেলের দামে কিছুটা চাপ তৈরি করলেও তা বড় ধরনের ও দীর্ঘমেয়াদি বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাচ্ছে না। কারণ, বৈশ্বিক বাজারে সরবরাহ বেড়ে চলেছে, চাহিদা কমছে এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তীব্র আকার ধারণ করছে।
তবে যদি পরিস্থিতি আরও জটিল হয়, বিশেষ করে সরবরাহ বিঘ্নিত হয়, তাহলে দাম দ্রুত বাড়তে পারে। কিন্তু ইতিমধ্যেই গুদামভরা মজুদ ও কৌশলগত রিজার্ভ তেলের দামে অতিরিক্ত চাপকে কিছুটা দমন করছে।

মোটের ওপর, তেলবাজার এখন এক অদ্ভুত বাস্তবতার মধ্যে রয়েছে—উচ্চ ঝুঁকি ও সীমিত সম্ভাবনা একইসঙ্গে বিদ্যমান। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক-সামরিক উত্তেজনা দাম বৃদ্ধির উৎস হলেও সমান্তরালে সরবরাহ বৃদ্ধি, মজুদ বাড়া এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কট দাম বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখছে। ভবিষ্যতে বাজার কোন দিকে যাবে, তা অনেকটাই নির্ভর করবে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির ওপর।

উশুর মানোন্নয়নে বাংলাদেশের প্রশিক্ষক ও খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দেবে চীন

ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনায় তেলবাজারে অস্থিরতা

০১:৪৬:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা বিশ্ব তেলবাজারে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে তেলের অতিরিক্ত সরবরাহ এবং বৈশ্বিক চাহিদার ওপর বাণিজ্য শুল্ক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব তেলের দামের সম্ভাব্য বৃদ্ধিকে সীমিত করছে। ইরাক সম্প্রতি তেল রফতানি বাড়িয়েছে, যা ওপেক-প্লাসের উৎপাদন সীমিত করার ধীর প্রক্রিয়ার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। এদিকে চারটি পশ্চিমা দেশ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ায় ইসরায়েলের তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা বেড়েছে।

মূল্য ও বাজারের গতি

এশিয়ার বাজারে বাণিজ্য শুরুর সময় তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে। ব্রেন্ট ক্রুড দাঁড়িয়েছে প্রতি ব্যারেল ৬৭.০৭ ডলারে, যা আগের তুলনায় প্রায় ৩৪ সেন্ট বা ০.৫৪ শতাংশ বেশি। অপরদিকে আমেরিকার পশ্চিম টেক্সাস তেল (ডব্লিউটিআই) অক্টোবর কন্ট্রাক্ট দাঁড়িয়েছে ৬৩.০২ ডলার এবং নভেম্বর কন্ট্রাক্ট ৬২.৭৬ ডলার প্রতি ব্যারেলে। উভয় ক্ষেত্রেই প্রায় ০.৫৪ থেকে ০.৫৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি দেখা গেছে।

ইউরোপে নিরাপত্তা উদ্বেগ

ইউরোপীয় অঞ্চলে একের পর এক ঘটনার কারণে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। রাশিয়া পোল্যান্ড সীমান্তের আকাশসীমায় হুমকি তৈরি করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এর জবাবে পোলিশ ও ন্যাটোর বিমানগুলো পোল্যান্ডের আকাশসীমার নিরাপত্তার দায়িত্বে মোতায়েন হয়। পাশাপাশি রাশিয়া পশ্চিম ইউক্রেনের কাছাকাছি এলাকায় হামলা চালিয়েছে।
এস্তোনিয়ার আকাশসীমা রাশিয়ার যুদ্ধবিমান দ্বারা লঙ্ঘিত হওয়ার ঘটনা এবং বাল্টিক সাগরে রাশিয়ার একটি বিমান নিরপেক্ষ আকাশসীমায় প্রবেশ করার অভিযোগও সামনে এসেছে। এসব ঘটনার পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এস্তোনিয়ার আনুষ্ঠানিক অভিযোগের ভিত্তিতে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন চাপ

চারটি পশ্চিমা দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ইসরায়েলের তীব্র প্রতিক্রিয়া ওই অঞ্চলে নিরাপত্তা অনিশ্চয়তাকে আরও জটিল করে তুলেছে। এর ফলে তেল উৎপাদনকারী অঞ্চলের সরবরাহ-ঝুঁকি স্পষ্টভাবে সামনে এসেছে।

সরবরাহ ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা

ইরাক আগস্ট মাসে প্রতিদিন প্রায় ৩.৩৮ মিলিয়ন ব্যারেল তেল রফতানি করেছে এবং সেপ্টেম্বর মাসে রফতানি ৩.৪ থেকে ৩.৪৫ মিলিয়ন ব্যারেলের মধ্যে হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। গত ছয় মাসে গুদামজাত মজুদ ইঙ্গিত দিচ্ছে, সরবরাহ চাহিদার চেয়ে বেশি। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত রিজার্ভ বাড়িয়ে এই অতিরিক্ত সরবরাহের একটি অংশ শোষণ করছে, তবে এ কারণে দাম বাড়ার সম্ভাবনা কার্যত সীমিত হয়ে পড়ছে।

ভবিষ্যতের ঝুঁকি ও সম্ভাবনা

বর্তমান উত্তেজনা তেলের দামে কিছুটা চাপ তৈরি করলেও তা বড় ধরনের ও দীর্ঘমেয়াদি বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাচ্ছে না। কারণ, বৈশ্বিক বাজারে সরবরাহ বেড়ে চলেছে, চাহিদা কমছে এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তীব্র আকার ধারণ করছে।
তবে যদি পরিস্থিতি আরও জটিল হয়, বিশেষ করে সরবরাহ বিঘ্নিত হয়, তাহলে দাম দ্রুত বাড়তে পারে। কিন্তু ইতিমধ্যেই গুদামভরা মজুদ ও কৌশলগত রিজার্ভ তেলের দামে অতিরিক্ত চাপকে কিছুটা দমন করছে।

মোটের ওপর, তেলবাজার এখন এক অদ্ভুত বাস্তবতার মধ্যে রয়েছে—উচ্চ ঝুঁকি ও সীমিত সম্ভাবনা একইসঙ্গে বিদ্যমান। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক-সামরিক উত্তেজনা দাম বৃদ্ধির উৎস হলেও সমান্তরালে সরবরাহ বৃদ্ধি, মজুদ বাড়া এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কট দাম বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখছে। ভবিষ্যতে বাজার কোন দিকে যাবে, তা অনেকটাই নির্ভর করবে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির ওপর।