সম্মেলনের উদ্দেশ্য
ফ্রান্স ও সৌদি আরব সোমবার এক বিশ্ব সম্মেলনের আয়োজন করছে যেখানে কয়েক ডজন দেশের নেতারা একত্রিত হবেন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও দুই-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে সমর্থন জানাতে। এর মধ্যেই কিছু দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা করেছে। তবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এ সম্মেলনকে ‘‘ভণ্ডামি’’ আখ্যা দিয়ে বয়কট করেছে।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে ডানপন্থী সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে তারা কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র মেনে নেবে না। তাদের যুদ্ধ চলছে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে। ইসরায়েলি জাতিসংঘ রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন এ সম্মেলনকে ‘‘সার্কাস’’ বলে বর্ণনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রও একই অবস্থান নিয়েছে।
নতুন স্বীকৃতির ঢেউ
ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগাল রবিবার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সোমবার ফ্রান্সসহ আরও কয়েকটি দেশ একই পদক্ষেপ নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউরোপের অধিকাংশ দেশ ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলেও জার্মানি ও ইতালি আপাতত এমন পদক্ষেপে আগ্রহী নয়।
জার্মানি বলছে, রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে দুই-রাষ্ট্র সমাধান চূড়ান্ত হওয়ার পরই স্বীকৃতি আসা উচিত। তবে তারা ইসরায়েলি দখলকৃত এলাকায় নতুন সংযুক্তি বা দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে। ইতালি এ স্বীকৃতিকে ‘‘বিপরীতমুখী ফল’’ আনতে পারে বলে মন্তব্য করেছে।
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া ও সম্ভাব্য পদক্ষেপ
ইসরায়েল পশ্চিম তীরের কিছু অংশ সংযুক্ত (অ্যানেক্সেশন) করার বিষয় বিবেচনা করছে। একই সঙ্গে তারা ফ্রান্সের বিরুদ্ধে দ্বিপাক্ষিক ব্যবস্থা নিতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে এমন পদক্ষেপ সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ মিত্রকে বিরূপ করতে পারে।
আমিরাত, যারা ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র-প্রশস্তিত আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছিল, স্পষ্ট জানিয়েছে—পশ্চিম তীর সংযুক্তি ‘‘লাল রেখা’’। তাদের মতে, এটি চুক্তির মূল লক্ষ্যকে ক্ষুণ্ণ করবে।
নরওয়ে ও সতর্ক কূটনীতি
২০২৪ সালে স্পেন ও আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে যৌথভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছিল নরওয়ে। তবে নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ আইদে সতর্ক সুরে বলেছেন—‘‘আন্তর্জাতিক সমর্থন আগে কখনো এত শক্তিশালী ছিল না, অথচ বাস্তবে ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে খারাপ।’’
যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারি
আমেরিকা সতর্ক করেছে, যারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেবে—বিশেষ করে ফ্রান্স—তাদের জন্য পরিণতি থাকতে পারে। এর মধ্যেই নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠকের আগে এই সম্মেলন আয়োজন করছে ফ্রান্স।
ফ্রান্সের অবস্থান
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জুলাইয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির ঘোষণা দিয়েছিলেন। এবার জাতিসংঘে এ বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরতে যাচ্ছেন। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল ব্যারো বলেছেন—‘‘এটি প্রতীকী হলেও তাৎক্ষণিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এটি আমাদের দুই-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি অঙ্গীকার প্রমাণ করে এবং হামাসের বিরুদ্ধে একটি বার্তা।’’
রবিবার রাতে প্যারিসের আইফেল টাওয়ারে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি পতাকা একসঙ্গে প্রক্ষেপণ করা হয়।
গাজার বাস্তবতা
গাজায় ইসরায়েলি হামলা থেকে বাঁচতে পালানো মানুষদের কাছে এই স্বীকৃতি খুব একটা স্বস্তি আনেনি। এক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি, নাবিল জাবের বলেছেন—‘‘অস্ট্রেলিয়া, কানাডা কিংবা ফ্রান্স স্বীকৃতি দিলেও ইসরায়েলের ওপর ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিশ্চিত করার মতো কোনো বড় চাপ তৈরি হবে বলে আমি মনে করি না।’’
ইসরায়েলি দৃষ্টিভঙ্গি
তেলআবিবে ইসরায়েলিরা বলছে, ফিলিস্তিনিরা অতীতে বহুবার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ পেয়েছিল কিন্তু কখনো তা গ্রহণ করেনি। এক ইসরায়েলি শিক্ষার্থী তামারা রাভেহ বলেন—‘‘আমরা তাদের প্রায় পাঁচবার শান্তির প্রস্তাব দিয়েছি, তারা কখনোই গ্রহণ করেনি। তারা যখন অপহরণ, হত্যা আর ধর্ষণের পথে থাকে, তখন আমাদের কেন শান্তি বেছে নিতে হবে?’’
এই সম্মেলন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র স্বীকৃতির পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থনকে আরও জোরালো করেছে। তবে বাস্তবে মাটিতে পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে, আর ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবস্থানের কারণে দুই-রাষ্ট্র সমাধানের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।