১১:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এইচ বি ১ ভিসা যুদ্ধ এআই চাকরির ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনতে চলেছে

ওয়াশিংটন ও নিউ ইয়র্কের প্রেক্ষাপট
আমেরিকান প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সাফল্যের অন্যতম কারণ হলো তারা সারা বিশ্বের সেরা প্রতিভাকে নিয়োগ দিতে সক্ষম। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্ত সেই সমীকরণকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। তিনি এইচ বি ১ ভিসার নতুন আবেদনের ক্ষেত্রে এক লাখ ডলারের ফি আরোপ করেছেন। এই ভিসা ব্যবহার করে অ্যামাজন, মাইক্রোসফট, মেটা, অ্যাপলসহ বড় বড় কোম্পানি উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন বিদেশি কর্মী নিয়োগ করে থাকে।

ভারতীয় আইটি খাতের প্রভাব
এইচ বি ১ ভিসা নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করা ভারতীয় আইটি আউটসোর্সিং কোম্পানিগুলো বছরের পর বছর ধরে সমালোচিত হয়েছে। অভিযোগ ছিল তারা স্থানীয়দের বদলে কম খরচে বিদেশি প্রযুক্তিবিদদের নিয়োগ দিচ্ছে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এতে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস (টিসিএস)-এর এইচ বি ১ ভিসাধারী কর্মীর সংখ্যা ২০২১ সালের তুলনায় প্রায় অর্ধেক হয়েছে—বর্তমানে ৫,৫০৫ জন। তবে এখনো ৭১% এইচ বি ১ ভিসা ভারতীয় নাগরিকদের দখলে। তবে শীর্ষ ১০ ভিসা স্পনসর কোম্পানির মধ্যে মার্কিন কোম্পানিগুলোর প্রাধান্য বেশি।

কোম্পানির প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্প প্রশাসন স্পষ্ট করেছে যে নতুন ফি কেবল নতুন আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, বিদ্যমান ভিসাধারীদের জন্য নয়। ফলে তাৎক্ষণিক আর্থিক প্রভাব সীমিত থাকবে। উদাহরণস্বরূপ, জেপি মরগ্যান এর জন্য এটি তাদের বার্ষিক মুনাফার মাত্র ০.৪%। কর্মীর ৩-৫ বছরের চুক্তির মেয়াদে খরচটি ভাগ করে নিলে শীর্ষ প্রতিভা নিয়োগের ক্ষেত্রে এক লাখ ডলার একটি সহনীয় খরচ হিসেবেই গণ্য হবে। টিসিএস-এর ক্ষেত্রে এটি সর্বোচ্চ ১০% পর্যন্ত হতে পারে।

অফশোরিং ও এআই-এর দিকে ঝোঁক
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে কোম্পানিগুলো দুইভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে:
১. অফশোরিং বৃদ্ধি – যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ভারত, ফিলিপাইন, মেক্সিকোর মতো দেশে কাজ স্থানান্তর বাড়তে পারে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় যেভাবে দূর থেকে কাজ করার ধারা গড়ে উঠেছিল, তা আবারও কাজে লাগানো হবে।
২. এআই গ্রহণ বৃদ্ধি – কোম্পানিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের মাধ্যমে জনবল কমিয়ে প্রকল্প পরিচালনার চেষ্টা করবে। যেমন, আগে যেখানে ১০ জন এইচ বি ১ ভিসাধারী কর্মী নিয়োগ দিত, সেখানে হয়তো ৫ জনকে নিয়োগ দিয়ে বাকি কাজ এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন করবে। এটি আসলে ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্দেশ্যের বিপরীত ফল বয়ে আনবে, কারণ সরকার চায় কোম্পানিগুলো স্থানীয় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (STEM) স্নাতকদের নিয়োগ দিক।

ট্রাম্পের দ্বিধা ও ছাড়ের সুযোগ
ট্রাম্প অতীতে এইচ বি ১ ভিসা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন। কখনো তিনি প্রযুক্তি উপদেষ্টাদের সঙ্গে থেকেছেন, কখনো আবার ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ সমর্থকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ কারণেই তার নতুন আদেশে কিছু ফাঁকফোকর রাখা হয়েছে।

  • হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সেক্রেটারি প্রয়োজনে জাতীয় স্বার্থে ফি মওকুফ করতে পারবেন।
  • এই নিয়ম ১২ মাসের জন্য প্রযোজ্য থাকবে, পরবর্তীতে প্রোগ্রামটি বাড়ানো হতে পারে।

বড় চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত
আমেরিকা সবসময় দেশীয় এবং বিদেশি প্রতিভার মিশ্রণের ওপর নির্ভর করেছে। যদি এ ধরনের অ্যান্টি-ইমিগ্রেশন নীতি স্থায়ী হয়, তবে মার্কিন প্রযুক্তি খাত ও অর্থনীতি বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

উপসংহার
ট্রাম্পের নতুন এইচ বি ১ ফি সিদ্ধান্ত স্বল্পমেয়াদে সীমিত আর্থিক চাপ তৈরি করবে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি প্রযুক্তি শিল্পে এআই-এর ব্যবহার বাড়িয়ে দেবে এবং অফশোরিংয়ের প্রবণতা বাড়াবে। ফলে মার্কিন চাকরি বাজারে জটিল পরিবর্তন দেখা দিতে পারে, যা সরকারের মূল লক্ষ্য—স্থানীয় কর্মসংস্থান বাড়ানো—এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এইচ বি ১ ভিসা যুদ্ধ এআই চাকরির ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনতে চলেছে

০৮:৩০:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ওয়াশিংটন ও নিউ ইয়র্কের প্রেক্ষাপট
আমেরিকান প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সাফল্যের অন্যতম কারণ হলো তারা সারা বিশ্বের সেরা প্রতিভাকে নিয়োগ দিতে সক্ষম। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্ত সেই সমীকরণকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। তিনি এইচ বি ১ ভিসার নতুন আবেদনের ক্ষেত্রে এক লাখ ডলারের ফি আরোপ করেছেন। এই ভিসা ব্যবহার করে অ্যামাজন, মাইক্রোসফট, মেটা, অ্যাপলসহ বড় বড় কোম্পানি উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন বিদেশি কর্মী নিয়োগ করে থাকে।

ভারতীয় আইটি খাতের প্রভাব
এইচ বি ১ ভিসা নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করা ভারতীয় আইটি আউটসোর্সিং কোম্পানিগুলো বছরের পর বছর ধরে সমালোচিত হয়েছে। অভিযোগ ছিল তারা স্থানীয়দের বদলে কম খরচে বিদেশি প্রযুক্তিবিদদের নিয়োগ দিচ্ছে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এতে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস (টিসিএস)-এর এইচ বি ১ ভিসাধারী কর্মীর সংখ্যা ২০২১ সালের তুলনায় প্রায় অর্ধেক হয়েছে—বর্তমানে ৫,৫০৫ জন। তবে এখনো ৭১% এইচ বি ১ ভিসা ভারতীয় নাগরিকদের দখলে। তবে শীর্ষ ১০ ভিসা স্পনসর কোম্পানির মধ্যে মার্কিন কোম্পানিগুলোর প্রাধান্য বেশি।

কোম্পানির প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্প প্রশাসন স্পষ্ট করেছে যে নতুন ফি কেবল নতুন আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, বিদ্যমান ভিসাধারীদের জন্য নয়। ফলে তাৎক্ষণিক আর্থিক প্রভাব সীমিত থাকবে। উদাহরণস্বরূপ, জেপি মরগ্যান এর জন্য এটি তাদের বার্ষিক মুনাফার মাত্র ০.৪%। কর্মীর ৩-৫ বছরের চুক্তির মেয়াদে খরচটি ভাগ করে নিলে শীর্ষ প্রতিভা নিয়োগের ক্ষেত্রে এক লাখ ডলার একটি সহনীয় খরচ হিসেবেই গণ্য হবে। টিসিএস-এর ক্ষেত্রে এটি সর্বোচ্চ ১০% পর্যন্ত হতে পারে।

অফশোরিং ও এআই-এর দিকে ঝোঁক
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে কোম্পানিগুলো দুইভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে:
১. অফশোরিং বৃদ্ধি – যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ভারত, ফিলিপাইন, মেক্সিকোর মতো দেশে কাজ স্থানান্তর বাড়তে পারে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় যেভাবে দূর থেকে কাজ করার ধারা গড়ে উঠেছিল, তা আবারও কাজে লাগানো হবে।
২. এআই গ্রহণ বৃদ্ধি – কোম্পানিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের মাধ্যমে জনবল কমিয়ে প্রকল্প পরিচালনার চেষ্টা করবে। যেমন, আগে যেখানে ১০ জন এইচ বি ১ ভিসাধারী কর্মী নিয়োগ দিত, সেখানে হয়তো ৫ জনকে নিয়োগ দিয়ে বাকি কাজ এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন করবে। এটি আসলে ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্দেশ্যের বিপরীত ফল বয়ে আনবে, কারণ সরকার চায় কোম্পানিগুলো স্থানীয় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (STEM) স্নাতকদের নিয়োগ দিক।

ট্রাম্পের দ্বিধা ও ছাড়ের সুযোগ
ট্রাম্প অতীতে এইচ বি ১ ভিসা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন। কখনো তিনি প্রযুক্তি উপদেষ্টাদের সঙ্গে থেকেছেন, কখনো আবার ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ সমর্থকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ কারণেই তার নতুন আদেশে কিছু ফাঁকফোকর রাখা হয়েছে।

  • হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সেক্রেটারি প্রয়োজনে জাতীয় স্বার্থে ফি মওকুফ করতে পারবেন।
  • এই নিয়ম ১২ মাসের জন্য প্রযোজ্য থাকবে, পরবর্তীতে প্রোগ্রামটি বাড়ানো হতে পারে।

বড় চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত
আমেরিকা সবসময় দেশীয় এবং বিদেশি প্রতিভার মিশ্রণের ওপর নির্ভর করেছে। যদি এ ধরনের অ্যান্টি-ইমিগ্রেশন নীতি স্থায়ী হয়, তবে মার্কিন প্রযুক্তি খাত ও অর্থনীতি বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

উপসংহার
ট্রাম্পের নতুন এইচ বি ১ ফি সিদ্ধান্ত স্বল্পমেয়াদে সীমিত আর্থিক চাপ তৈরি করবে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি প্রযুক্তি শিল্পে এআই-এর ব্যবহার বাড়িয়ে দেবে এবং অফশোরিংয়ের প্রবণতা বাড়াবে। ফলে মার্কিন চাকরি বাজারে জটিল পরিবর্তন দেখা দিতে পারে, যা সরকারের মূল লক্ষ্য—স্থানীয় কর্মসংস্থান বাড়ানো—এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।