হঠাৎ সিদ্ধান্তে অচলাবস্থা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার ফলে জনপ্রিয় এইচ-১বি ভিসা প্রোগ্রাম নিয়ে গত সপ্তাহান্তে তীব্র অস্থিরতা দেখা দেয়। হোয়াইট হাউস জানায়, রবিবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে নতুন ভিসার জন্য আবেদনকারীদের ১ লাখ ডলার এককালীন ফি দিতে হবে। আকস্মিক এই ঘোষণা কোম্পানি ও ভিসাধারীদের অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলে দেয়।
কোম্পানিগুলোর উদ্বেগ ও সতর্কতা
অ্যামাজন, গুগল, মাইক্রোসফটসহ বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো দ্রুত কর্মীদের সতর্ক করে। তারা এইচ-১বি ভিসাধারীদের দেশ না ছাড়তে এবং যারা বিদেশে ছিলেন তাদের শনিবারের মধ্যেই দেশে ফিরতে নির্দেশ দেয়। অনেক প্রতিষ্ঠান মানবসম্পদ বিভাগকে কর্মীদের অবস্থান চিহ্নিত করার দায়িত্ব দেয় এবং প্রয়োজনে বিমানের টিকিট বুক করার উদ্যোগ নেয়।
আইনজীবীদের অসহায় অবস্থান
ইমিগ্রেশন আইনজীবীরা কোম্পানি ও ভিসাধারীদের উদ্দেশে বার্তা পাঠালেও শুরুতে স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি। এতে আতঙ্ক আরও বাড়ে। পরে হোয়াইট হাউস জানায়, এই নিয়ম কেবল নতুন ভিসার জন্য প্রযোজ্য, নবায়ন বা বর্তমান ভিসাধারীদের ক্ষেত্রে নয়। এছাড়া ফি বার্ষিক নয়, বরং একবারের জন্যই প্রযোজ্য।
কর্মীদের ব্যক্তিগত সংকট
অনেক কর্মী এখনও দেশ ছাড়তে ভয় পাচ্ছেন। কেউ কেউ জানান, ভিসার কার্যকারিতা শুরু হতে আরও কয়েক সপ্তাহ বাকি, তবুও তারা পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে ভারত যেতে ঝুঁকি নেবেন না। এক ভিসাধারী বলেন, মায়ের হার্টের অসুস্থতা থাকা সত্ত্বেও জরুরি পরিস্থিতিতে তিনি হয়তো পরিবার ও ক্যারিয়ারের মধ্যে বেছে নিতে বাধ্য হবেন।
আরও পরিবর্তনের শঙ্কা
ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি কেবল শুরু। ফিশার ফিলিপস আইন সংস্থার শ্যানন আর. স্টিভেনসন বলেন, “আমরা মনে করি এটি সরকারের এইচ-১বি প্রোগ্রামের ওপর আক্রমণের প্রথম ধাপ।” বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লাটনিক এক পর্যায়ে বলেন, কোম্পানিগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—কর্মীটি কি এতটা মূল্যবান যে তার জন্য বছরে ১ লাখ ডলার সরকারকে দেওয়া উচিত, নাকি স্থানীয় মার্কিন কর্মী নিয়োগ দেওয়া উচিত।
ভিসা জেতা এক ‘স্বপ্নের মুহূর্ত’
এইচ-১বি ভিসা পাওয়া সাধারণত দীর্ঘ অপেক্ষা, বিপুল কাগজপত্র ও খরচের পর একটি বড় সাফল্য হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু হঠাৎ ঘোষণার ফলে অনেক কর্মী একে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার সমান বলে মনে করেন। কোম্পানিগুলো নতুন পরিকল্পনা করতে বাধ্য হয়, অনেক কর্মী ভ্রমণ বাতিল করেন।
কর্পোরেট আতঙ্ক ও বাস্তব সংকট
কগনিজ্যান্ট কর্মীদের দেশে ফিরতে নির্দেশ দেয়। মাইক্রোসফট জানায়, “যদি আপনি যুক্তরাষ্ট্রে এইচ-১বি ভিসায় থাকেন, তবে আপাতত এখানেই থাকুন।” গুগল মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকে। কগনিজ্যান্ট জানায়, তারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্থানীয় নিয়োগে জোর দিয়েছে।
ইমিগ্রেশন আইনজীবী হিবা আনভার বলেন, তার এক ক্লায়েন্ট তখন সমুদ্রে ভ্রমণে ছিলেন, অনেকে জরুরি ফ্লাইট না পেয়ে গুয়াম বা হাওয়াই যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভ্রমণ বিশৃঙ্খলার বিবরণে ভরে যায়। কেউ মিটিং থেকে সরাসরি এয়ারপোর্টে ছুটে যান, কেউ আবার ভ্রমণ বাতিল করেন।
পরিবারের বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা
কর্মী নিয়োগ বিশেষজ্ঞ নোলান চার্চ বলেন, “এটি বাড়িয়ে বলা মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে নয়—কোম্পানিগুলো চেষ্টা করছে যেন পরিবারগুলো বিচ্ছিন্ন না হয়।” তিনি জানান, অনেক মানবসম্পদ কর্মীকে একসঙ্গে ডজনখানেক ভিসাধারীর অবস্থান জানতে দেওয়া হয় এবং তারা মরিয়া হয়ে বার্তা পাঠান। কেউ বাইরে থাকলে যেকোনো উপায়ে তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়।
হোয়াইট হাউসের ব্যাখ্যা কিছুটা স্বস্তি দিলেও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। বড় কোম্পানিগুলো এখনও নতুন নিয়ম নিয়ে অস্থির, আর কর্মীরা দ্বিধায়—ক্যারিয়ার রক্ষা করবেন, নাকি পরিবারের কাছে ফিরবেন।