১১:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাগরাম ঘাঁটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি ‘অসম্ভব’: আফগান তালেবান কর্মকর্তা

যুক্তরাষ্ট্রের দাবি ও ট্রাম্পের হুমকি

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের এক কর্মকর্তা রোববার স্পষ্ট জানিয়েছেন যে বাগরাম বিমানঘাঁটি নিয়ে কোনো চুক্তি “অসম্ভব”। এর আগের দিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলেন তিনি চান যুক্তরাষ্ট্র আবার ঘাঁটিটি ফিরে পাক।

ট্রাম্প সতর্ক করে বলেন, যদি আফগানিস্তান বাগরাম ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে না দেয়, তবে “খারাপ কিছু ঘটবে”। তিনি তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে লেখেন, “যারা এটি তৈরি করেছে, তাদেরই ফেরত দিতে হবে।”

ট্রাম্পের পূর্বেকার ইতিহাসে পানামা খাল থেকে শুরু করে গ্রিনল্যান্ড পর্যন্ত বিভিন্ন কৌশলগত অঞ্চল ও স্থাপনা অধিগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ পেয়েছিল। এবার তার মনোযোগ বাগরাম ঘাঁটির দিকে। তবে তিনি সরাসরি বলেননি, যুক্তরাষ্ট্র সেনা পাঠিয়ে জোর করে ঘাঁটি দখল করবে কিনা।

আফগানিস্তানের প্রতিক্রিয়া

রোববার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিফ অব স্টাফ ফাসিহউদ্দিন ফিত্রাত স্থানীয় মাধ্যমে বলেন, কিছু লোক দাবি করছে তারা আফগানিস্তানের সঙ্গে আলোচনা করছে বাগরাম ঘাঁটি নিয়ে। তিনি স্পষ্টভাবে জানান, “আফগানিস্তানের জমির এক ইঞ্চিও নিয়ে কোনো চুক্তি সম্ভব নয়। আমাদের এটির প্রয়োজন নেই।”

আলাদা এক বিবৃতিতে আফগান তালেবান জানায়, তারা ইসলামিক নীতির আলোকে অর্থনীতি-কেন্দ্রিক ভারসাম্যপূর্ণ বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করে এবং পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে সব দেশের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক চায়।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, দোহা চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অখণ্ডতা বা রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করবে না, কিংবা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। তালেবান যুক্তরাষ্ট্রকে সেই প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং বলে, অতীতের ব্যর্থ নীতি পুনরাবৃত্তি না করে বাস্তববাদী ও যুক্তিনিষ্ঠ পথ অনুসরণ করাই সমীচীন।

বাগরামের গুরুত্ব ও জটিলতা

বাগরাম আফগানিস্তানের বৃহত্তম বিমানঘাঁটি, যা ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন অভিযানে তালেবান সরকারের পতনের মূল ঘাঁটি ছিল।

ট্রাম্প সরকারের মধ্যস্থতায় হওয়া চুক্তির অংশ হিসেবে ২০২১ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনী বিশৃঙ্খল অবস্থায় বাগরাম থেকে সরে যায়। এর পরপরই আফগান সেনাবাহিনী ভেঙে পড়ে এবং তালেবান দ্রুত ক্ষমতায় ফিরে আসে।

বর্তমান ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, বাগরাম পুনরায় দখল করতে গেলে তা কার্যত আফগানিস্তানে ফের আক্রমণের মতোই হবে। এ জন্য ১০ হাজারেরও বেশি সেনা এবং আধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েনের প্রয়োজন হতে পারে।

নিরাপত্তা ঝুঁকি ও সম্ভাব্য হুমকি

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশাল এ ঘাঁটি পুনরায় সচল করা ও সুরক্ষিত করা কঠিন হবে। এমনকি যদি তালেবান আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুমতি দেয়ও, তখনও ইসলামিক স্টেট, আল-কায়েদার মতো গোষ্ঠীর হামলা মোকাবিলা করতে হবে।

এছাড়াও ইরানের মতো আঞ্চলিক শক্তির ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঝুঁকি থাকবে। সম্প্রতি ইরান কাতারে অবস্থিত একটি মার্কিন ঘাঁটিতে আক্রমণ চালিয়েছিল, যখন যুক্তরাষ্ট্র তাদের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়।

সব মিলিয়ে বাগরাম ঘাঁটি পুনর্দখলের ধারণা আন্তর্জাতিকভাবে শুধু সামরিক নয়, রাজনৈতিকভাবেও বড় সংকট ডেকে আনতে পারে।

বাগরাম ঘাঁটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি ‘অসম্ভব’: আফগান তালেবান কর্মকর্তা

০৮:৫০:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের দাবি ও ট্রাম্পের হুমকি

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের এক কর্মকর্তা রোববার স্পষ্ট জানিয়েছেন যে বাগরাম বিমানঘাঁটি নিয়ে কোনো চুক্তি “অসম্ভব”। এর আগের দিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলেন তিনি চান যুক্তরাষ্ট্র আবার ঘাঁটিটি ফিরে পাক।

ট্রাম্প সতর্ক করে বলেন, যদি আফগানিস্তান বাগরাম ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে না দেয়, তবে “খারাপ কিছু ঘটবে”। তিনি তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে লেখেন, “যারা এটি তৈরি করেছে, তাদেরই ফেরত দিতে হবে।”

ট্রাম্পের পূর্বেকার ইতিহাসে পানামা খাল থেকে শুরু করে গ্রিনল্যান্ড পর্যন্ত বিভিন্ন কৌশলগত অঞ্চল ও স্থাপনা অধিগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ পেয়েছিল। এবার তার মনোযোগ বাগরাম ঘাঁটির দিকে। তবে তিনি সরাসরি বলেননি, যুক্তরাষ্ট্র সেনা পাঠিয়ে জোর করে ঘাঁটি দখল করবে কিনা।

আফগানিস্তানের প্রতিক্রিয়া

রোববার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিফ অব স্টাফ ফাসিহউদ্দিন ফিত্রাত স্থানীয় মাধ্যমে বলেন, কিছু লোক দাবি করছে তারা আফগানিস্তানের সঙ্গে আলোচনা করছে বাগরাম ঘাঁটি নিয়ে। তিনি স্পষ্টভাবে জানান, “আফগানিস্তানের জমির এক ইঞ্চিও নিয়ে কোনো চুক্তি সম্ভব নয়। আমাদের এটির প্রয়োজন নেই।”

আলাদা এক বিবৃতিতে আফগান তালেবান জানায়, তারা ইসলামিক নীতির আলোকে অর্থনীতি-কেন্দ্রিক ভারসাম্যপূর্ণ বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করে এবং পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে সব দেশের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক চায়।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, দোহা চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অখণ্ডতা বা রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করবে না, কিংবা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। তালেবান যুক্তরাষ্ট্রকে সেই প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং বলে, অতীতের ব্যর্থ নীতি পুনরাবৃত্তি না করে বাস্তববাদী ও যুক্তিনিষ্ঠ পথ অনুসরণ করাই সমীচীন।

বাগরামের গুরুত্ব ও জটিলতা

বাগরাম আফগানিস্তানের বৃহত্তম বিমানঘাঁটি, যা ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন অভিযানে তালেবান সরকারের পতনের মূল ঘাঁটি ছিল।

ট্রাম্প সরকারের মধ্যস্থতায় হওয়া চুক্তির অংশ হিসেবে ২০২১ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনী বিশৃঙ্খল অবস্থায় বাগরাম থেকে সরে যায়। এর পরপরই আফগান সেনাবাহিনী ভেঙে পড়ে এবং তালেবান দ্রুত ক্ষমতায় ফিরে আসে।

বর্তমান ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, বাগরাম পুনরায় দখল করতে গেলে তা কার্যত আফগানিস্তানে ফের আক্রমণের মতোই হবে। এ জন্য ১০ হাজারেরও বেশি সেনা এবং আধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েনের প্রয়োজন হতে পারে।

নিরাপত্তা ঝুঁকি ও সম্ভাব্য হুমকি

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশাল এ ঘাঁটি পুনরায় সচল করা ও সুরক্ষিত করা কঠিন হবে। এমনকি যদি তালেবান আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুমতি দেয়ও, তখনও ইসলামিক স্টেট, আল-কায়েদার মতো গোষ্ঠীর হামলা মোকাবিলা করতে হবে।

এছাড়াও ইরানের মতো আঞ্চলিক শক্তির ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঝুঁকি থাকবে। সম্প্রতি ইরান কাতারে অবস্থিত একটি মার্কিন ঘাঁটিতে আক্রমণ চালিয়েছিল, যখন যুক্তরাষ্ট্র তাদের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়।

সব মিলিয়ে বাগরাম ঘাঁটি পুনর্দখলের ধারণা আন্তর্জাতিকভাবে শুধু সামরিক নয়, রাজনৈতিকভাবেও বড় সংকট ডেকে আনতে পারে।