০৪:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জাপানি শহরে দিনে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টার বেশি স্মার্টফোন ব্যবহার করা যাবে না

নাগোয়া, জাপান – মধ্য জাপানের একটি শহর সোমবার দেশে প্রথমবারের মতো স্মার্টফোন ব্যবহারে সীমা নির্ধারণের বিধি চালু করেছে। এর লক্ষ্য হলো শিশুদের ঘুমের মান উন্নত করা এবং তাদের শিক্ষাগত পারফরম্যান্স বাড়ানো।

নতুন বিধি ও সিদ্ধান্ত

আইচি প্রিফেকচারের তোয়োআকে শহরের কাউন্সিল ১৯ সদস্যের মধ্যে ১২ জনের সমর্থনে এই বিধি পাস করেছে। এ অনুযায়ী, সব নাগরিক বিনোদনমূলক কাজে দিনে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারবেন।

মেয়র মাসাফুমি কোকি বলেন, “আমরা আশা করি নাগরিকরা নিজেরাই স্মার্টফোন ব্যবহারের ওপর নজর রাখবেন এবং ঘুমের সময় কমে যাওয়া এড়াবেন।”

এই বিধি কার্যকর হবে আগামী ১ অক্টোবর থেকে। তবে আইন ভাঙলে কোনো শাস্তি নেই, এটি কেবল নির্দেশনা মাত্র বলে জানান মেয়র।

শিশু ও অভিভাবকদের লক্ষ্য করে প্রচার

শহর প্রশাসন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক ও অভিভাবকদের কাছে এই বিধি ও এর উদ্দেশ্য জানাবে। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহারের ওপর জরিপ চালিয়ে ফল প্রকাশ করা হবে।

শহরবাসী মাসের শেষ পর্যন্ত অনলাইনে তাদের মতামত জানাতে পারবেন। মেয়র কোকি বলেন, “নাগরিকদের কাছে পরিষ্কারভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা জরুরি।”

পেছনের কারণ: স্কুল ফাঁকি ও ঘুমের অভাব

তোয়োআকে শহর দীর্ঘদিন ধরে স্কুল ফাঁকি দেওয়া শিক্ষার্থীদের সামাজিকভাবে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিচ্ছিল। সেখানেই দেখা যায়, দীর্ঘ সময় স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে শিশুদের ঘুম কমে যাচ্ছে এবং ঘুমের ছন্দ বিঘ্নিত হচ্ছে। এর প্রভাবেই স্কুল ফাঁকি বেড়েছে।

একজন কর্মকর্তা বলেন, “যদি বাড়িতে সমস্যা সমাধান সম্ভব না হয়, তবে সামাজিক সেবার প্রয়োজন।”

মেয়র এ মাসে কাউন্সিল বৈঠকে খসড়া বিধি উপস্থাপন করেন। গ্রীষ্মকালীন ছুটির পর সেপ্টেম্বর মাসে সাধারণত স্কুল ফাঁকি বেড়ে যায়।

জাপানের অন্য অভিজ্ঞতা

২০২০ সালে কাগাওয়া প্রিফেকচার শিশুদের অনলাইন গেম খেলার সময়সীমা নির্ধারণ করে। স্কুলের দিনে এক ঘণ্টা, ছুটির দিনে সর্বোচ্চ দেড় ঘণ্টা খেলার অনুমতি দেওয়া হয়। অভিভাবক ও অভিভাবকদেরও এ নিয়ম মানতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

সেই বছর অনলাইন গেম আসক্তি মোকাবিলায় কাগাওয়া প্রিফেকচার বাজেটে ১ কোটি ৪০ লাখ ইয়েনেরও বেশি বরাদ্দ দেয় এবং সচেতনতা বাড়াতে কর্মশালা আয়োজন করে।

জরিপে স্মার্টফোন আসক্তি

টোকিওর ফার্স্ট ইনোভেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান আগস্টে জরিপ চালায়। তাতে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষ দিনে অন্তত দুই ঘণ্টা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। ২২ শতাংশ মানুষ দুই থেকে চার ঘণ্টা, আর ১৩ শতাংশ মানুষ আট ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় ফোনে থাকেন। কেবল ২৬ শতাংশ মানুষ দিনে দুই ঘণ্টা বা তার কম সময় ব্যবহার করেন।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, কিশোর ও তরুণদের বড় অংশ দিনে ছয় ঘণ্টার বেশি সময় স্মার্টফোনে কাটায়।

জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এডুকেশনাল পলিসি রিসার্চ স্মার্টফোন আসক্তি এবং এর শিক্ষাগত প্রভাব নিয়ে নজরদারি করছে।

 

বিশ্বব্যাপী প্রবণতা

অস্ট্রেলিয়ায় ডিসেম্বর থেকে নতুন আইন কার্যকর হচ্ছে, যাতে ১৬ বছরের নিচের কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতে পারবে না। নিয়ম ভাঙলে প্ল্যাটফর্মগুলোর সর্বোচ্চ ৪ কোটি ৯৫ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার জরিমানা হতে পারে। নিউ জিল্যান্ডেও প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লাক্সন একই ধরনের আইন প্রস্তাব করেছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের গণতন্ত্র, আইন ও ভোক্তা সুরক্ষা কমিশনার মাইকেল ম্যাকগ্রাথ নিক্কেইকে বলেন, ইইউও অপ্রাপ্তবয়স্কদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আরোপের চিন্তাভাবনা করছে। যুক্তরাষ্ট্রেও অন্তত ৫০টির মধ্যে ৪৫টি অঙ্গরাজ্যে শিশুদের অনলাইন ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য নীতি প্রণয়নের উদ্যোগ চলছে।

কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন

তবে এসব নিয়ম কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

জাপানের সেন্দাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাগায়ুকি সাইতো বলেন, “নীতিনির্ধারকদের উচিত নাগরিকদের সঠিকভাবে স্মার্টফোন ব্যবহারে উৎসাহিত করা। কিন্তু শুধু সময় সীমিত করলেই সমস্যার সমাধান নাও হতে পারে।”

সেইকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং অধ্যাপক আকিকো তাকাহাশি মনে করেন, “স্মার্টফোন কেবল একটি যন্ত্র। এটিকে নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে নির্দিষ্ট সমস্যাগুলোতে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে, যেমন ভিডিও গেম বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার।”

জাপানি শহরে দিনে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টার বেশি স্মার্টফোন ব্যবহার করা যাবে না

০১:১৯:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নাগোয়া, জাপান – মধ্য জাপানের একটি শহর সোমবার দেশে প্রথমবারের মতো স্মার্টফোন ব্যবহারে সীমা নির্ধারণের বিধি চালু করেছে। এর লক্ষ্য হলো শিশুদের ঘুমের মান উন্নত করা এবং তাদের শিক্ষাগত পারফরম্যান্স বাড়ানো।

নতুন বিধি ও সিদ্ধান্ত

আইচি প্রিফেকচারের তোয়োআকে শহরের কাউন্সিল ১৯ সদস্যের মধ্যে ১২ জনের সমর্থনে এই বিধি পাস করেছে। এ অনুযায়ী, সব নাগরিক বিনোদনমূলক কাজে দিনে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারবেন।

মেয়র মাসাফুমি কোকি বলেন, “আমরা আশা করি নাগরিকরা নিজেরাই স্মার্টফোন ব্যবহারের ওপর নজর রাখবেন এবং ঘুমের সময় কমে যাওয়া এড়াবেন।”

এই বিধি কার্যকর হবে আগামী ১ অক্টোবর থেকে। তবে আইন ভাঙলে কোনো শাস্তি নেই, এটি কেবল নির্দেশনা মাত্র বলে জানান মেয়র।

শিশু ও অভিভাবকদের লক্ষ্য করে প্রচার

শহর প্রশাসন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক ও অভিভাবকদের কাছে এই বিধি ও এর উদ্দেশ্য জানাবে। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহারের ওপর জরিপ চালিয়ে ফল প্রকাশ করা হবে।

শহরবাসী মাসের শেষ পর্যন্ত অনলাইনে তাদের মতামত জানাতে পারবেন। মেয়র কোকি বলেন, “নাগরিকদের কাছে পরিষ্কারভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা জরুরি।”

পেছনের কারণ: স্কুল ফাঁকি ও ঘুমের অভাব

তোয়োআকে শহর দীর্ঘদিন ধরে স্কুল ফাঁকি দেওয়া শিক্ষার্থীদের সামাজিকভাবে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিচ্ছিল। সেখানেই দেখা যায়, দীর্ঘ সময় স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে শিশুদের ঘুম কমে যাচ্ছে এবং ঘুমের ছন্দ বিঘ্নিত হচ্ছে। এর প্রভাবেই স্কুল ফাঁকি বেড়েছে।

একজন কর্মকর্তা বলেন, “যদি বাড়িতে সমস্যা সমাধান সম্ভব না হয়, তবে সামাজিক সেবার প্রয়োজন।”

মেয়র এ মাসে কাউন্সিল বৈঠকে খসড়া বিধি উপস্থাপন করেন। গ্রীষ্মকালীন ছুটির পর সেপ্টেম্বর মাসে সাধারণত স্কুল ফাঁকি বেড়ে যায়।

জাপানের অন্য অভিজ্ঞতা

২০২০ সালে কাগাওয়া প্রিফেকচার শিশুদের অনলাইন গেম খেলার সময়সীমা নির্ধারণ করে। স্কুলের দিনে এক ঘণ্টা, ছুটির দিনে সর্বোচ্চ দেড় ঘণ্টা খেলার অনুমতি দেওয়া হয়। অভিভাবক ও অভিভাবকদেরও এ নিয়ম মানতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

সেই বছর অনলাইন গেম আসক্তি মোকাবিলায় কাগাওয়া প্রিফেকচার বাজেটে ১ কোটি ৪০ লাখ ইয়েনেরও বেশি বরাদ্দ দেয় এবং সচেতনতা বাড়াতে কর্মশালা আয়োজন করে।

জরিপে স্মার্টফোন আসক্তি

টোকিওর ফার্স্ট ইনোভেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান আগস্টে জরিপ চালায়। তাতে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষ দিনে অন্তত দুই ঘণ্টা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। ২২ শতাংশ মানুষ দুই থেকে চার ঘণ্টা, আর ১৩ শতাংশ মানুষ আট ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় ফোনে থাকেন। কেবল ২৬ শতাংশ মানুষ দিনে দুই ঘণ্টা বা তার কম সময় ব্যবহার করেন।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, কিশোর ও তরুণদের বড় অংশ দিনে ছয় ঘণ্টার বেশি সময় স্মার্টফোনে কাটায়।

জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এডুকেশনাল পলিসি রিসার্চ স্মার্টফোন আসক্তি এবং এর শিক্ষাগত প্রভাব নিয়ে নজরদারি করছে।

 

বিশ্বব্যাপী প্রবণতা

অস্ট্রেলিয়ায় ডিসেম্বর থেকে নতুন আইন কার্যকর হচ্ছে, যাতে ১৬ বছরের নিচের কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতে পারবে না। নিয়ম ভাঙলে প্ল্যাটফর্মগুলোর সর্বোচ্চ ৪ কোটি ৯৫ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার জরিমানা হতে পারে। নিউ জিল্যান্ডেও প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লাক্সন একই ধরনের আইন প্রস্তাব করেছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের গণতন্ত্র, আইন ও ভোক্তা সুরক্ষা কমিশনার মাইকেল ম্যাকগ্রাথ নিক্কেইকে বলেন, ইইউও অপ্রাপ্তবয়স্কদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আরোপের চিন্তাভাবনা করছে। যুক্তরাষ্ট্রেও অন্তত ৫০টির মধ্যে ৪৫টি অঙ্গরাজ্যে শিশুদের অনলাইন ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য নীতি প্রণয়নের উদ্যোগ চলছে।

কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন

তবে এসব নিয়ম কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

জাপানের সেন্দাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাগায়ুকি সাইতো বলেন, “নীতিনির্ধারকদের উচিত নাগরিকদের সঠিকভাবে স্মার্টফোন ব্যবহারে উৎসাহিত করা। কিন্তু শুধু সময় সীমিত করলেই সমস্যার সমাধান নাও হতে পারে।”

সেইকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং অধ্যাপক আকিকো তাকাহাশি মনে করেন, “স্মার্টফোন কেবল একটি যন্ত্র। এটিকে নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে নির্দিষ্ট সমস্যাগুলোতে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে, যেমন ভিডিও গেম বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার।”