যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য কঠোর পদক্ষেপ
যুক্তরাষ্ট্র শিগগির আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) সম্পূর্ণভাবে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনতে পারে। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে আদালতের দৈনন্দিন কার্যক্রমই ঝুঁকির মুখে পড়বে। এর পেছনে কারণ হলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ তদন্তে আইসিসির পদক্ষেপ।
আগে যুক্তরাষ্ট্র কিছু বিচারক ও প্রসিকিউটরের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। তবে এবার পুরো আদালতকে লক্ষ্য করে ব্যবস্থা নেওয়া হলে তা হবে বড় ধরনের উত্তেজনা।
গোপন বৈঠক ও প্রস্তুতি
রয়টার্সকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ছয়টি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে যুক্তরাষ্ট্র শিগগির এ ধরনের ‘এনটিটি স্যাংশন’ আরোপের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আদালতের ভেতরে জরুরি বৈঠক হয়েছে সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা করতে। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কূটনীতিকরাও একাধিক বৈঠক করেছেন।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যে এমন নিষেধাজ্ঞা বিবেচনায় রয়েছে। যদিও কবে এটি কার্যকর হতে পারে, তা স্পষ্ট করা হয়নি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র অভিযোগ করেছেন, আইসিসি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের নাগরিকদের ওপর ‘অযাচিত এখতিয়ার’ প্রয়োগ করতে চাইছে। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেবে।
বেতন অগ্রিম প্রদান ও বিকল্প খোঁজা
যদি আদালত পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে, তবে তা ব্যাংক লেনদেন, সফটওয়্যার ব্যবহার, এমনকি কর্মীদের বেতন প্রদানের মতো মৌলিক কাজেও প্রভাব ফেলবে।
এ ঝুঁকি মোকাবিলায় আদালতের কর্মীদের ২০২৫ সালের বাকি সময়ের বেতন ইতিমধ্যে অগ্রিম দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নতুন ব্যাংকিং সেবা ও সফটওয়্যার সরবরাহকারীদের খোঁজ চলছে।
মামলার পটভূমি
হেগভিত্তিক আইসিসি ইতোমধ্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্ট এবং ফিলিস্তিনি হামাসের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে গাজা যুদ্ধকালে সংঘটিত অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
এ ছাড়াও আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের সম্ভাব্য অপরাধ নিয়েও আদালত তদন্ত চালায়। এ কারণেই ওয়াশিংটন আগে থেকেই আদালতের কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল।
জাতিসংঘে পাল্টা অবস্থান
আইসিসির ১২৫ সদস্য দেশের কূটনীতিকরা এবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন। তবে হেগ ও নিউইয়র্কে থাকা চারটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, সব ইঙ্গিত বলছে যুক্তরাষ্ট্র তার চাপ বাড়াতেই যাচ্ছে।
একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, ‘ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞার পথ শেষ হয়ে গেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কবে, না আদৌ হবে কিনা।’
মার্কিন অবস্থান
মার্কিন সিনেটর মার্কো রুবিও আইসিসিকে ‘জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, এই আদালত যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘আইনের অপব্যবহার’ করছে।
আইসিসি ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, যার উদ্দেশ্য গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচার করা। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এ আদালতের সদস্য নয়। আদালত ফিলিস্তিনকে সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তাদের ভূখণ্ডে সংঘটিত অপরাধে এখতিয়ার দাবি করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
অতীতের নিষেধাজ্ঞা ও বিতর্ক
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউস আদালতের প্রধান প্রসিকিউটর করিম খানকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনে, যিনি নেতানিয়াহু ও গালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়েছিলেন। বর্তমানে খান যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তদন্তাধীন থাকায় ছুটিতে আছেন, যদিও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার এই নতুন পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের জন্য এক বড় পরীক্ষার সময় বয়ে আনতে পারে। একদিকে আদালত তার কার্যক্রম সচল রাখতে বিকল্প উপায় খুঁজছে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র আদালতকে তার স্বার্থবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করছে। এ পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক আইনের ভবিষ্যৎ কার্যকারিতা এবং বৈশ্বিক কূটনীতির জন্যও গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।