বাজারের সামগ্রিক চিত্র
সোমবার বৈশ্বিক বাজারে তেলের দাম সামান্য হ্রাস পেয়েছে। রাশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলেও অতিরিক্ত সরবরাহের আশঙ্কা দাম কমিয়ে দিয়েছে।
ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১১ সেন্ট বা ০.২ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৬৬.৫৭ ডলারে। আগস্টের শুরুর পর থেকে এটি ৬৫.৫০ থেকে ৬৯ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করছে।
মার্কিন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) অক্টোবর চুক্তির দাম ৪ সেন্ট কমে ব্যারেলপ্রতি ৬২.৬৪ ডলারে বন্ধ হয়। সক্রিয়ভাবে লেনদেন হওয়া পরবর্তী মাসের চুক্তিও ১২ সেন্ট কমে দাঁড়ায় ৬২.২৮ ডলারে।
সরবরাহ বাড়ছে, শুল্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা
বিওকে ফাইন্যানশিয়ালের ডেনিস কিসলার বলেন, “বাজার আবারও ভবিষ্যতের অতিরিক্ত সরবরাহের দিকে নজর দিচ্ছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ান তেল ক্রেতাদের ওপর কঠোর শুল্কে একমত না হয়, তবে বাজার চাপের মুখে পড়বে।”
ইরাক, যা ওপেকের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদক, রপ্তানি বাড়িয়েছে। রাষ্ট্রীয় তেল বিপণনকারী সোমো জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরে দৈনিক রপ্তানি ৩৪ থেকে ৩৪.৫ লাখ ব্যারেলের মধ্যে থাকতে পারে।
কুয়েতের তেলমন্ত্রী তারেক আল-রুমি স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, তাদের উৎপাদন ক্ষমতা এখন দৈনিক ৩.২ মিলিয়ন ব্যারেল, যা গত দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও তেলের চাহিদা
যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারও তেলের দামের সঙ্গে সমান্তরালে কিছুটা কমেছে। কারণ, ভিসা কঠোরতার প্রভাব ও ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হারের ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
ফেড কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, অতিরিক্ত সুদহার কমানো হয়তো আর প্রয়োজন নেই। কারণ মুদ্রাস্ফীতি এখনো ২ শতাংশ লক্ষ্যের ওপরে এবং কর্মসংস্থানের হারও শক্তিশালী। সাধারণত সুদহার কমলে তেলের চাহিদা বাড়ে।
ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বেড়েছে কয়েকটি পশ্চিমা দেশের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার কারণে। একই সঙ্গে পূর্ব ইউরোপে উত্তেজনা ছড়িয়েছে, কারণ এস্তোনিয়া অভিযোগ করেছে, রাশিয়ার যুদ্ধবিমান তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। তবে এসব ঘটনায় সরাসরি তেল সরবরাহে কোনো প্রভাব পড়েনি।
ভবিষ্যতের বাজার পরিস্থিতি
গত সপ্তাহে ব্রেন্ট ও ডব্লিউটিআই উভয়ই ১ শতাংশের বেশি কমে গিয়েছিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিক থেকে আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিক পর্যন্ত বৈশ্বিক তেলের চাহিদা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে ওপেক+ উৎপাদন বাড়াচ্ছে।
এসইবি ব্যাংকের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বড় প্রশ্ন হলো—চীন কি উদ্বৃত্ত মজুত করবে, নাকি দাম নেমে ব্যারেলপ্রতি ৫০ ডলারের ঘরে পৌঁছাবে। তাদের ধারণা, দাম আরও কমবে।
নতুন রপ্তানি পরিকল্পনা
ইরাক প্রাথমিকভাবে অনুমোদন দিয়েছে, তারা আধা-স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চল থেকে তুরস্ক হয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল রপ্তানি আবার শুরু করবে।