০৭:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পুবালী ও যমুনা ব্যাংকের সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড: মূলধন শক্তিশালী করার উদ্যোগ

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে মূলধন ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলতে সম্প্রতি দুটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক – পুবালী ব্যাংক ও যমুনা ব্যাংক – নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অনুমোদন দিয়েছে যে তারা মোট ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা (১৩ বিলিয়ন টাকা) সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারবে।

পুবালী ব্যাংকের উদ্যোগ

পুবালী ব্যাংককে ৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই অর্থ মূলধন ঘাটতি পূরণ এবং ঋণ ও বিনিয়োগ পোর্টফোলিও সম্প্রসারণে ব্যবহার হবে।

  • প্রতিটি বন্ড ইউনিটের মূল্য ৫০ লাখ টাকা।
  • এটি হবে অসুরক্ষিত, রূপান্তর অযোগ্য, রিডিমেবল এবং ফ্লোটিং-রেট সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড।
  • কুপন হার নির্ধারিত হবে রেফারেন্স রেটের সঙ্গে ৩ শতাংশ মার্জিন যোগ করে।
  • ট্রাস্টি হিসেবে কাজ করবে ডিবিএইচ ফাইন্যান্স, আর অ্যারেঞ্জার হিসেবে থাকবে ইউসিবি ইনভেস্টমেন্টপ্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড

যমুনা ব্যাংকের পরিকল্পনা

যমুনা ব্যাংককে ৮০০ কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখানেও একই ধরনের শর্ত প্রযোজ্য।

  • প্রতিটি বন্ড ইউনিটের মূল্য ৫০ লাখ টাকা।
  • এটি হবে অসুরক্ষিত, রূপান্তর অযোগ্য, সম্পূর্ণ রিডিমেবল এবং ফ্লোটিং-রেট সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড।
  • কুপন হার নির্ধারিত হবে রেফারেন্স রেটের সঙ্গে ৩ শতাংশ মার্জিন যোগ করে।
  • ট্রাস্টি হিসেবে কাজ করবে ডিবিএইচ ফাইন্যান্স এবং অ্যারেঞ্জার হিসেবে থাকবে ইউসিবি ইনভেস্টমেন্ট

উভয় বন্ডই তালিকাভুক্ত হবে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (ATB)

নিয়মকানুন ও প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশ ব্যাংকের বেসেল-৩ (Basel III) নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতিটি ব্যাংককে তাদের ঝুঁকি-সমন্বিত সম্পদের অন্তত ১০ শতাংশ মূলধন অথবা সর্বনিম্ন ৫০০ কোটি টাকা মূলধন ধরে রাখতে হয়। এটি পূরণ না করতে পারলে সেটিকে মূলধন ঘাটতি হিসেবে গণ্য করা হয়।

বেসেল-৩ একটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড, যা আর্থিক খাতকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে ও ব্যাংকগুলোকে পর্যাপ্ত রিজার্ভ রাখতে বাধ্য করে। মূলত আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং আমানতকারীদের সুরক্ষা দেওয়াই এর লক্ষ্য।

সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড কী?

সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড হলো একটি অসুরক্ষিত ঋণপত্র, যা ব্যাংকের মূলধনের অংশ হিসেবে ধরা হয়। এটি সাধারণ ঋণ বা শেয়ারহোল্ডারের দাবির তুলনায় কম অগ্রাধিকার পায়। এজন্য একে অনেকে “জুনিয়র সিকিউরিটি”ও বলে থাকেন। যদিও এতে কিছুটা ঝুঁকি বেশি, তবে ব্যাংকের মূলধন শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্লেষণ: কেন এখন বন্ড ইস্যু জরুরি

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে অনুত্তরিত ঋণ, তারল্য সংকট এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপের কারণে ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত মূলধন সংগ্রহের দিকে যেতে হচ্ছে।

  • বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধি: নতুন মূলধন ব্যাংকগুলোকে বড় ঋণ প্রকল্প অর্থায়নে সাহায্য করবে।
  • বাজার আস্থা পুনর্গঠন: বিনিয়োগকারীদের কাছে ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী বলে প্রতীয়মান হবে।
  • নিয়ন্ত্রক বাধ্যবাধকতা পূরণ: বেসেল-৩ মানদণ্ড মেনে চলা না গেলে ব্যাংকগুলো জরিমানার মুখে পড়তে পারে।

পুবালী ব্যাংক ও যমুনা ব্যাংকের এই সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যু মূলত তাদের মূলধন ভিত্তি মজবুত করবে এবং দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা আনতে সহায়ক হবে। যদিও এতে বিনিয়োগকারীদের কিছুটা ঝুঁকি রয়েছে, তবু দেশের আর্থিক খাতে এটি ইতিবাচক সংকেত বহন করছে।

পুবালী ও যমুনা ব্যাংকের সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড: মূলধন শক্তিশালী করার উদ্যোগ

০১:১৪:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে মূলধন ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলতে সম্প্রতি দুটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক – পুবালী ব্যাংক ও যমুনা ব্যাংক – নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অনুমোদন দিয়েছে যে তারা মোট ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা (১৩ বিলিয়ন টাকা) সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারবে।

পুবালী ব্যাংকের উদ্যোগ

পুবালী ব্যাংককে ৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই অর্থ মূলধন ঘাটতি পূরণ এবং ঋণ ও বিনিয়োগ পোর্টফোলিও সম্প্রসারণে ব্যবহার হবে।

  • প্রতিটি বন্ড ইউনিটের মূল্য ৫০ লাখ টাকা।
  • এটি হবে অসুরক্ষিত, রূপান্তর অযোগ্য, রিডিমেবল এবং ফ্লোটিং-রেট সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড।
  • কুপন হার নির্ধারিত হবে রেফারেন্স রেটের সঙ্গে ৩ শতাংশ মার্জিন যোগ করে।
  • ট্রাস্টি হিসেবে কাজ করবে ডিবিএইচ ফাইন্যান্স, আর অ্যারেঞ্জার হিসেবে থাকবে ইউসিবি ইনভেস্টমেন্টপ্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড

যমুনা ব্যাংকের পরিকল্পনা

যমুনা ব্যাংককে ৮০০ কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখানেও একই ধরনের শর্ত প্রযোজ্য।

  • প্রতিটি বন্ড ইউনিটের মূল্য ৫০ লাখ টাকা।
  • এটি হবে অসুরক্ষিত, রূপান্তর অযোগ্য, সম্পূর্ণ রিডিমেবল এবং ফ্লোটিং-রেট সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড।
  • কুপন হার নির্ধারিত হবে রেফারেন্স রেটের সঙ্গে ৩ শতাংশ মার্জিন যোগ করে।
  • ট্রাস্টি হিসেবে কাজ করবে ডিবিএইচ ফাইন্যান্স এবং অ্যারেঞ্জার হিসেবে থাকবে ইউসিবি ইনভেস্টমেন্ট

উভয় বন্ডই তালিকাভুক্ত হবে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (ATB)

নিয়মকানুন ও প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশ ব্যাংকের বেসেল-৩ (Basel III) নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতিটি ব্যাংককে তাদের ঝুঁকি-সমন্বিত সম্পদের অন্তত ১০ শতাংশ মূলধন অথবা সর্বনিম্ন ৫০০ কোটি টাকা মূলধন ধরে রাখতে হয়। এটি পূরণ না করতে পারলে সেটিকে মূলধন ঘাটতি হিসেবে গণ্য করা হয়।

বেসেল-৩ একটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড, যা আর্থিক খাতকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে ও ব্যাংকগুলোকে পর্যাপ্ত রিজার্ভ রাখতে বাধ্য করে। মূলত আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং আমানতকারীদের সুরক্ষা দেওয়াই এর লক্ষ্য।

সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড কী?

সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড হলো একটি অসুরক্ষিত ঋণপত্র, যা ব্যাংকের মূলধনের অংশ হিসেবে ধরা হয়। এটি সাধারণ ঋণ বা শেয়ারহোল্ডারের দাবির তুলনায় কম অগ্রাধিকার পায়। এজন্য একে অনেকে “জুনিয়র সিকিউরিটি”ও বলে থাকেন। যদিও এতে কিছুটা ঝুঁকি বেশি, তবে ব্যাংকের মূলধন শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্লেষণ: কেন এখন বন্ড ইস্যু জরুরি

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে অনুত্তরিত ঋণ, তারল্য সংকট এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপের কারণে ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত মূলধন সংগ্রহের দিকে যেতে হচ্ছে।

  • বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধি: নতুন মূলধন ব্যাংকগুলোকে বড় ঋণ প্রকল্প অর্থায়নে সাহায্য করবে।
  • বাজার আস্থা পুনর্গঠন: বিনিয়োগকারীদের কাছে ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী বলে প্রতীয়মান হবে।
  • নিয়ন্ত্রক বাধ্যবাধকতা পূরণ: বেসেল-৩ মানদণ্ড মেনে চলা না গেলে ব্যাংকগুলো জরিমানার মুখে পড়তে পারে।

পুবালী ব্যাংক ও যমুনা ব্যাংকের এই সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যু মূলত তাদের মূলধন ভিত্তি মজবুত করবে এবং দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা আনতে সহায়ক হবে। যদিও এতে বিনিয়োগকারীদের কিছুটা ঝুঁকি রয়েছে, তবু দেশের আর্থিক খাতে এটি ইতিবাচক সংকেত বহন করছে।