০৩:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩১৩) টিম কারির স্মৃতিকথা ‘ভ্যাগাবন্ড’-এ জীবনের রঙিন অধ্যায় সুপার হেডলাইন: ভারতের সংবিধান বেঞ্চেরও বিশেষ ক্ষমতা আছে— মন্তব্য পাকিস্তানের বিচারপতি মাজহার দিওয়ালির রঙে শিল্পা ও শমিতা শেঠির বোনেদের মজা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৪৪) ভারতের ঋণসীমার আওতায় ‘চুক্তি বাতিলের তালিকা ভুল’— পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন অ-পরিশোধিত ঋণে চাপে ২৪ ব্যাংক ঝুঁকিতে, অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় বড় ধাক্কা ১.৫৬ কোটি টাকা বকেয়া ও গ্যাস চুরির অভিযোগে আনন্ত জলিলের কারখানার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন পর্নোগ্রাফি মামলায় দম্পতির পাঁচ দিনের রিমান্ড নারায়ণগঞ্জের প্রধান ফেরিঘাটে ভেসে উঠল এক তরুণের নগ্ন দেহ

ইউরোপকে সতর্ক করে ট্রাম্প: ‘ওপেন বর্ডারের ব্যর্থ পরীক্ষা শেষ করুন’

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে ইউরোপীয় নেতাদের উদ্দেশে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। তিনি জাতিসংঘকে অভিযোগ করেছেন শুধু “ফাঁকা কথা” বলার জন্য এবং বিশ্বজুড়ে অভিবাসনকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে পশ্চিমা দেশগুলোকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র করার জন্য।

জাতিসংঘ ও ওপেন বর্ডার নিয়ে সমালোচনা

ট্রাম্প দাবি করেন, জাতিসংঘের নীতি আসলে “গ্লোবালিস্ট মাইগ্রেশন এজেন্ডা” বাস্তবায়ন করছে, যা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌমত্ব নষ্ট করছে। তিনি বলেন, “ওপেন বর্ডারের ব্যর্থ পরীক্ষা এখনই বন্ধ করতে হবে। আপনাদের দেশগুলো নরকে যাচ্ছে।”

ইউরোপ নিয়ে কড়া ভাষা

ইউরোপীয় নেতাদের উদ্দেশে ট্রাম্প অভিযোগ করেন যে তারা নিজেদের ঐতিহ্য ধ্বংস করছে রাজনৈতিক শুদ্ধতার নামে। তিনি বলেন, অভিবাসন ও সবুজ জ্বালানি ইউরোপকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। তার ভাষায়, “আমি ইউরোপকে ভালোবাসি, ইউরোপের মানুষকেও ভালোবাসি। কিন্তু জ্বালানি ও অভিবাসন সেই দুই-মুখো দানব, যা সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে।”

Can Solar Power Help Reverse Climate Change? - Sistine Solar

সবুজ জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে আক্রমণ

ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনকে “বড় প্রতারণা” আখ্যা দিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তিকে উপহাস করেন। তিনি দাবি করেন, সবুজ জ্বালানির নীতি উন্নত বিশ্ব থেকে উৎপাদনশীলতা কেড়ে নিচ্ছে এবং তা যাচ্ছে নিয়ম ভঙ্গকারী দূষণকারী দেশগুলোর হাতে। প্যারিস চুক্তিকেও তিনি ভণ্ডামি হিসেবে অভিহিত করেন।

সাদিক খান ও লন্ডনের সমালোচনা

লন্ডনের মেয়র সাদিক খানকে সরাসরি আক্রমণ করে ট্রাম্প বলেন, “লন্ডনের ভয়ঙ্কর এক মেয়র আছে। শহরটিকে তারা এতটাই বদলে দিয়েছে যে এখন তারা শরিয়া আইন চায়। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়।”

জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে হতাশা

ট্রাম্প অভিযোগ করেন, জাতিসংঘ কেবল শক্তিশালী শব্দে চিঠি লিখে, কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না। তার মতে, যুদ্ধ থামাতে বাস্তব পদক্ষেপই একমাত্র সমাধান।

Fact-check: Donald Trump's false and misleading claims during his UN address | Donald Trump | The Guardian

ইউক্রেন যুদ্ধ ও রাশিয়া প্রসঙ্গ

রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ বন্ধ করতে ইউরোপকে প্রথমে রুশ জ্বালানি কেনা বন্ধ করতে হবে বলে ট্রাম্প দাবি করেন। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “ভাবুন তো, তারা নিজেদের অর্থ দিয়ে নিজেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে।” তবে সমালোচকরা মনে করেন, এভাবে ট্রাম্প আসলে যুদ্ধ শেষ করার নেতৃত্ব ইউরোপের ঘাড়ে চাপাতে চাইছেন।

প্যালেস্টাইন ইস্যু

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ কিছু দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন ট্রাম্প। তিনি দাবি করেন, এতে হামাস সন্ত্রাসীদের পুরস্কৃত করা হবে।

চীন ও বাণিজ্য নীতি

ট্রাম্প আবারও চীন ও অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে বাণিজ্য শুল্ক আরোপের কথা বলেন, যাদের তিনি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতি ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।

Experts Say AI Could Raise the Risks of Nuclear War - Defense One

পারমাণবিক ও জীবাণু অস্ত্র

তিনি সতর্ক করে বলেন, পারমাণবিক বা জীবাণু অস্ত্রের ব্যবহার মানবসভ্যতার সমাপ্তি ডেকে আনতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সমন্বিত একটি নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে এসব অস্ত্র রোধের প্রতিশ্রুতিও দেন।

বক্তৃতার পর সুর পরিবর্তন

যদিও সাধারণ পরিষদে ট্রাম্পের বক্তব্য ছিল উগ্র ও উসকানিমূলক, তবে পরে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠকে তার ভাষা নরম হয়ে যায়। তিনি বলেন, “আমাদের দেশ জাতিসংঘের পক্ষে শতভাগ। আমি কখনও দ্বিমত পোষণ করতে পারি, তবে শান্তির সম্ভাবনার জন্য এই প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অপরিসীম।”

ট্রাম্পের এই বক্তৃতা আবারও প্রমাণ করল যে তিনি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে জাতীয়তাবাদী ও সংঘাতমূলক অবস্থান বজায় রেখেছেন। অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে তার বক্তব্য বিশ্বনেতাদের মধ্যে বিতর্ক উসকে দিয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩১৩)

ইউরোপকে সতর্ক করে ট্রাম্প: ‘ওপেন বর্ডারের ব্যর্থ পরীক্ষা শেষ করুন’

০৫:০২:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে ইউরোপীয় নেতাদের উদ্দেশে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। তিনি জাতিসংঘকে অভিযোগ করেছেন শুধু “ফাঁকা কথা” বলার জন্য এবং বিশ্বজুড়ে অভিবাসনকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে পশ্চিমা দেশগুলোকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র করার জন্য।

জাতিসংঘ ও ওপেন বর্ডার নিয়ে সমালোচনা

ট্রাম্প দাবি করেন, জাতিসংঘের নীতি আসলে “গ্লোবালিস্ট মাইগ্রেশন এজেন্ডা” বাস্তবায়ন করছে, যা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌমত্ব নষ্ট করছে। তিনি বলেন, “ওপেন বর্ডারের ব্যর্থ পরীক্ষা এখনই বন্ধ করতে হবে। আপনাদের দেশগুলো নরকে যাচ্ছে।”

ইউরোপ নিয়ে কড়া ভাষা

ইউরোপীয় নেতাদের উদ্দেশে ট্রাম্প অভিযোগ করেন যে তারা নিজেদের ঐতিহ্য ধ্বংস করছে রাজনৈতিক শুদ্ধতার নামে। তিনি বলেন, অভিবাসন ও সবুজ জ্বালানি ইউরোপকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। তার ভাষায়, “আমি ইউরোপকে ভালোবাসি, ইউরোপের মানুষকেও ভালোবাসি। কিন্তু জ্বালানি ও অভিবাসন সেই দুই-মুখো দানব, যা সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে।”

Can Solar Power Help Reverse Climate Change? - Sistine Solar

সবুজ জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে আক্রমণ

ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনকে “বড় প্রতারণা” আখ্যা দিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তিকে উপহাস করেন। তিনি দাবি করেন, সবুজ জ্বালানির নীতি উন্নত বিশ্ব থেকে উৎপাদনশীলতা কেড়ে নিচ্ছে এবং তা যাচ্ছে নিয়ম ভঙ্গকারী দূষণকারী দেশগুলোর হাতে। প্যারিস চুক্তিকেও তিনি ভণ্ডামি হিসেবে অভিহিত করেন।

সাদিক খান ও লন্ডনের সমালোচনা

লন্ডনের মেয়র সাদিক খানকে সরাসরি আক্রমণ করে ট্রাম্প বলেন, “লন্ডনের ভয়ঙ্কর এক মেয়র আছে। শহরটিকে তারা এতটাই বদলে দিয়েছে যে এখন তারা শরিয়া আইন চায়। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়।”

জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে হতাশা

ট্রাম্প অভিযোগ করেন, জাতিসংঘ কেবল শক্তিশালী শব্দে চিঠি লিখে, কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না। তার মতে, যুদ্ধ থামাতে বাস্তব পদক্ষেপই একমাত্র সমাধান।

Fact-check: Donald Trump's false and misleading claims during his UN address | Donald Trump | The Guardian

ইউক্রেন যুদ্ধ ও রাশিয়া প্রসঙ্গ

রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ বন্ধ করতে ইউরোপকে প্রথমে রুশ জ্বালানি কেনা বন্ধ করতে হবে বলে ট্রাম্প দাবি করেন। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “ভাবুন তো, তারা নিজেদের অর্থ দিয়ে নিজেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে।” তবে সমালোচকরা মনে করেন, এভাবে ট্রাম্প আসলে যুদ্ধ শেষ করার নেতৃত্ব ইউরোপের ঘাড়ে চাপাতে চাইছেন।

প্যালেস্টাইন ইস্যু

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ কিছু দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন ট্রাম্প। তিনি দাবি করেন, এতে হামাস সন্ত্রাসীদের পুরস্কৃত করা হবে।

চীন ও বাণিজ্য নীতি

ট্রাম্প আবারও চীন ও অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে বাণিজ্য শুল্ক আরোপের কথা বলেন, যাদের তিনি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতি ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।

Experts Say AI Could Raise the Risks of Nuclear War - Defense One

পারমাণবিক ও জীবাণু অস্ত্র

তিনি সতর্ক করে বলেন, পারমাণবিক বা জীবাণু অস্ত্রের ব্যবহার মানবসভ্যতার সমাপ্তি ডেকে আনতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সমন্বিত একটি নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে এসব অস্ত্র রোধের প্রতিশ্রুতিও দেন।

বক্তৃতার পর সুর পরিবর্তন

যদিও সাধারণ পরিষদে ট্রাম্পের বক্তব্য ছিল উগ্র ও উসকানিমূলক, তবে পরে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠকে তার ভাষা নরম হয়ে যায়। তিনি বলেন, “আমাদের দেশ জাতিসংঘের পক্ষে শতভাগ। আমি কখনও দ্বিমত পোষণ করতে পারি, তবে শান্তির সম্ভাবনার জন্য এই প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অপরিসীম।”

ট্রাম্পের এই বক্তৃতা আবারও প্রমাণ করল যে তিনি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে জাতীয়তাবাদী ও সংঘাতমূলক অবস্থান বজায় রেখেছেন। অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে তার বক্তব্য বিশ্বনেতাদের মধ্যে বিতর্ক উসকে দিয়েছে।