বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম দুর্গাপূজার ছুটিতে বেনাপোল স্থলবন্দরে পাঁচ দিন এবং সোনামসজিদ স্থলবন্দরে আট দিন বন্ধ থাকবে। প্রতিবছরের মতো এবারও এই সাময়িক স্থবিরতা দুই দেশের সীমান্ত বাণিজ্যে প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোলে পাঁচ দিনের ছুটি
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন জানান, ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। ৪ অক্টোবর থেকে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হবে। তবে এই সময়ে কাস্টমস হাউস ও বন্দরের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম চালু থাকবে।

সোনামসজিদে আট দিনের বাণিজ্য বিরতি
সোনামসজিদ স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন জানান, দুর্গাপূজার পাশাপাশি সরকারি ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটির কারণে সেখানে টানা আট দিন বাণিজ্য বন্ধ থাকবে। এতে কয়েকশো ট্রাক আটকে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাণিজ্যের ওপর প্রভাব
বেনাপোল ও সোনামসজিদ বাংলাদেশের জন্য ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের প্রধান দুটি প্রবেশদ্বার। বেনাপোল দিয়ে দৈনিক প্রায় আড়াই হাজার টন পণ্য আমদানি হয়, যার মধ্যে রয়েছে কাঁচামাল, ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের সরঞ্জাম। অন্যদিকে, সোনামসজিদ দিয়ে বিশেষত রাজশাহী অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা আমদানি-রপ্তানি করে থাকেন।
বন্দরে কয়েক দিনের বিরতি মানে বিপুল অঙ্কের বাণিজ্য স্থগিত হওয়া। ব্যবসায়ীদের হিসাবে, প্রতিদিন কয়েকশো কোটি টাকার লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে বাজারে পণ্যের সরবরাহ ও দামে।

পূর্ববর্তী বছরের অভিজ্ঞতা
প্রতিবছর দুর্গাপূজায় এ ধরনের ছুটি দেওয়া হলেও ব্যবসায়ীরা বলেন, আগের বছরগুলোতে দীর্ঘ ছুটির পর হঠাৎ করে বিপুল পরিমাণ ট্রাক প্রবেশ করায় বন্দরে জট তৈরি হয়েছিল। ফলে পণ্য খালাসে দেরি হয় এবং ভোগান্তি বেড়ে যায়। এবারও একই ধরনের পরিস্থিতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, এবার তারা আগের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্রুত খালাস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেবে।
মানুষের চলাচল অব্যাহত
যদিও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে, সীমান্ত দিয়ে বৈধ কাগজপত্র থাকা যাত্রীরা ছুটির মধ্যেও দুই দেশ অতিক্রম করতে পারবেন। এতে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক যাতায়াত ব্যাহত হবে না।
বিশেষজ্ঞদের মত
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, স্থলবন্দরের এই সাময়িক ছুটি স্বল্পমেয়াদে বাণিজ্যপ্রবাহে প্রভাব ফেললেও দীর্ঘমেয়াদে বড় ধরনের ক্ষতি হয় না। তবে তারা সতর্ক করেছেন, যদি ছুটি শেষে বন্দরে জট দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে তা অভ্যন্তরীণ বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে কাঁচামাল আমদানিতে দেরি হলে শিল্প উৎপাদনেও প্রভাব পড়তে পারে।

সার্বিক চিত্র
দুর্গাপূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। প্রতিবছরের মতো এবারও এই উৎসবের কারণে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বাণিজ্যে সাময়িক বিরতি আসছে। তবে ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, যথাযথ সমন্বয় থাকলে ছুটি শেষে দ্রুত কার্যক্রম সচল করে এই প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















