বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও আলোচনায় এসেছে নির্বাচনী ব্যবস্থার পরিবর্তনের প্রসঙ্গ। বিশেষ করে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধছে। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সতর্ক করে বলেছেন, পিআর চালু হলে দেশে স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে এবং দুর্বল বা ফ্যাসিস্ট সরকার তৈরি হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে।
সালাহউদ্দিনের বক্তব্য
২৫ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন—
• শেখ হাসিনার আমলের মতো আরেকটি ফ্যাসিস্ট সরকার তৈরি হতে পারে।
• ছোট দলগুলো সুবিধা পেলেও দেশে স্থায়ী অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে।
• জনপ্রিয়তার দিক থেকে দুর্বল দলগুলো বেশি লাভবান হবে।
তার মতে, পিআর ব্যবস্থার লক্ষ্যই হলো সংখ্যাগরিষ্ঠ দলকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখা এবং ছোট দলগুলোকে অতিরিক্ত প্রভাবশালী করে তোলা।

সংবিধানের বাধ্যবাধকতা
সালাহউদ্দিন আহমদ জোর দিয়ে বলেন—
• সংবিধানে স্পষ্টভাবে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে।
• অরাজনৈতিক বা অসাংবিধানিক কোনো দাবি মানা হলে জাতি বিপদের মুখে পড়বে।
• বর্তমান সরকার সাংবিধানিক সরকার, তাই আইনানুগভাবে ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই দেশ পরিচালনা করা উচিত।
পিআর পদ্ধতি: কীভাবে কাজ করে?
সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বে সংসদের আসন বণ্টন করা হয় প্রতিটি দলের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে।
• এতে ছোট দলগুলোও সংসদে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পায়।
• তবে সমালোচকদের মতে, এই পদ্ধতি স্থিতিশীল সরকার গঠনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
• প্রায়শই জোট সরকার গঠন করতে হয়, যা নীতি বাস্তবায়নকে দুর্বল করে দেয়।

আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা
সফলতার উদাহরণ
• নেদারল্যান্ডস: পিআর ব্যবস্থায় সংসদ বহুমাত্রিক হয়েছে। ছোট-বড় সব দলই প্রতিনিধিত্ব পেয়েছে। তবে সরকার সবসময়ই জোটের মাধ্যমে গঠিত হয়।
• জার্মানি: আংশিক পিআর ও আংশিক সরাসরি ভোটের মিশ্র ব্যবস্থায় এখানে তুলনামূলক স্থিতিশীল জোট সরকার গঠিত হয়েছে। এটিকে সফল উদাহরণ বলা হয়।
ব্যর্থতার উদাহরণ
• ইতালি (২০শ শতকের মাঝামাঝি): প্রায় প্রতি বছর সরকার পরিবর্তন হতো। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ভেঙে পড়ে।
• ইসরায়েল: পুরোপুরি পিআর ব্যবস্থার কারণে প্রায় সব সময়ই দুর্বল জোট সরকার গঠিত হয়েছে, যা নীতি বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকি
যদি বাংলাদেশে পিআর চালু হয়, তাহলে—
• বড় দলগুলো তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে পড়তে পারে।
• ছোট দলগুলো আসন ভাগাভাগির মাধ্যমে বেশি প্রভাব খাটাতে পারবে।
• দুর্বল বা অস্থিতিশীল সরকার হলে দীর্ঘমেয়াদে নীতিগত স্থবিরতা দেখা দেবে।
সালাহউদ্দিন আহমদের মতে, বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ব্যবস্থা হলো সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন। পিআর চালু হলে এটি দেশের রাজনৈতিক কাঠামোকে দুর্বল করে তুলতে পারে এবং স্থায়ীভাবে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাও দেখায়—যেসব দেশে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নেই, সেখানে পিআর ব্যবস্থা সরকারকে ভঙ্গুর করে দেয়।
সহজভাবে বলা যায়, বাংলাদেশের জন্য এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো সংবিধানের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে স্থিতিশীল গণতন্ত্র নিশ্চিত করা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















