নতুন নিয়মে আতঙ্ক
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে ঘোষণা করেছেন, দক্ষ বিদেশি কর্মীদের জন্য এইচ-১বি ভিসার আবেদন করতে এখন থেকে ১ লাখ ডলার ফি দিতে হবে। এ সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরই প্রযুক্তি খাতে ছোট কোম্পানি ও স্টার্টআপগুলো বিপাকে পড়ে যায়।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজার অভিষেক সিংহ, যিনি গত সাত বছর ধরে এইচ-১বি ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করছেন, প্রথমে ভেবেছিলেন তাকে হয়তো দেশ ছাড়তে হবে। কারণ তার স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান এত বিপুল ফি পরিশোধে সক্ষম নয়। যদিও পরে হোয়াইট হাউস জানায়, আপাতত এই ফি কেবল নতুন আবেদনকারীদের জন্য প্রযোজ্য।
তবুও এই ঘোষণা ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। বিশেষ করে ছোট প্রতিষ্ঠান ও নতুন উদ্ভাবন-নির্ভর স্টার্টআপগুলো মনে করছে, এতে ব্যবসার গতি ও প্রযুক্তি উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।
বড় কোম্পানির সুবিধা, ছোটদের বিপদ
এইচ-১বি ভিসা সাধারণত বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যুক্ত। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে অ্যামাজন সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে। তাদের জন্য অনুমোদিত ভিসার সংখ্যা ছিল ১০ হাজারেরও বেশি। মাইক্রোসফট, মেটা, অ্যাপল এবং গুগল প্রত্যেকেই চার হাজারের বেশি ভিসা পেয়েছে।
তবে বড় কোম্পানির বাইরেও বহু স্টার্টআপ ও ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এই ভিসার ওপর নির্ভরশীল। তাদের জন্য একেকটি ভিসার বিপরীতে ১ লাখ ডলার ফি মানে কার্যত নিয়োগ বন্ধ হয়ে যাওয়া।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন স্ক্রেন্টনি বলেন, “যদি কোনো স্টার্টআপ নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে এবং সীমিত পুঁজি থাকে, এই ফি তাদের জন্য মৃত্যুঘণ্টা হয়ে দাঁড়াবে।”
স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতেও প্রভাব
শুধু প্রযুক্তি নয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতও এই ভিসার ওপর নির্ভর করে। সিয়াটলভিত্তিক বিহেভিয়ারাল হেলথ সংস্থা ‘রাইদার’-এর নির্বাহী কারেন ব্র্যাডি বলেন, “আমরা ১ লাখ ডলার কোনোভাবেই বহন করতে পারব না। ভবিষ্যতে তাই আর এইচ-১বি ভিসায় কাউকে নিয়োগ দেওয়া হবে না।”
রাইদারে বর্তমানে দুইজন চীনা থেরাপিস্ট কাজ করছেন, যাদের ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক দক্ষতা প্রতিষ্ঠানটির বহু রোগীকে সাহায্য করছে। ব্র্যাডির মতে, স্থানীয় কর্মীদের দিয়ে তাদের বিকল্প পাওয়া সম্ভব নয়।
অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব
বেরেনবার্গ ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ আতাকান বাকিসকান একটি প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস ২% থেকে কমিয়ে ১.৫% করেছেন। তার মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। শ্রমবাজার সংকুচিত হবে এবং উৎপাদনশীলতা কমবে।
সমর্থন ও সমালোচনা
ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভিসা ব্যবস্থার অপব্যবহার রোধ করতেই এই নতুন ফি। তিনি আরও জানিয়েছেন, শিগগিরই ভিসা নীতির বড় সংস্কার আসছে, যেখানে উচ্চ বেতনের কর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
নেটফ্লিক্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিড হেস্টিংস এই সিদ্ধান্তকে “চমৎকার সমাধান” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সমর্থকদের মতে, অ্যামাজন বা মাইক্রোসফটের মতো জায়ান্ট কোম্পানির জন্য ১ লাখ ডলার বড় বিষয় নয়।
তবে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড্যান ওয়াং বলেন, এসব নীতি আসলে কোম্পানিগুলোকে বিদেশে নিয়োগে বাধ্য করে, ফলে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে আমেরিকান কর্মীরা কোনো বাড়তি সুবিধা পান না।
কোম্পানির দৃষ্টি বিদেশমুখী
অভিবাসন আইনজীবী এলিস ফিয়ালকভস্কি জানান, অনেক বড় প্রতিষ্ঠান এখন কানাডা, যুক্তরাজ্য বা অন্য দেশে নিয়োগের পরিকল্পনা করছে। তার মতে, এই সিদ্ধান্ত কার্যত কোম্পানিগুলোকে কাজ বিদেশে সরিয়ে নিতে উৎসাহিত করছে।
অভিষেক সিংহ-ও ভাবছেন ভারত বা অন্য কোনো দেশে চাকরি খোঁজার কথা। তার আশঙ্কা, প্রশাসন ধীরে ধীরে অভিবাসন-বিরোধী নীতি আরও কঠোর করে তুলবে।
তিনি বলেন, “এখন এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতে যেকোনো কিছু হতে পারে। যদি আমাদের বের হয়ে যেতে বাধ্য করা হয়, তবে সেটিই একমাত্র পথ হয়ে থাকবে।”