০৭:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫
বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যুৎ রপ্তানি চুক্তির নবায়ন প্রক্রিয়া শুরু ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্য থেকে আধুনিক অর্থনীতিতে—ডিজিটাল মিশরের উত্থান ইউফোরিয়া’ সিজন ৩—জ্যাকব এলর্ডির ইঙ্গিতে ফের উচ্ছ্বাস” প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩১২) স্ট্রেঞ্জার থিংস’-এর শেষ অধ্যায়—নেটফ্লিক্সের মহাকাব্যিক সিরিজের অন্তরালের গল্প ‘হোয়েন দে বার্নড দ্য বাটারফ্লাই’—নারী গোপন সমাজের ইতিহাস ও আগুনের শক্তি নিয়ে ওয়েন–ই লির নতুন উপন্যাস মেগান লাউ—দর্শনশাস্ত্রের শিক্ষার্থী থেকে ‘হাউস অব ড্যান্সিং ওয়াটার’-এর আকাশচারী নায়িকা সুদানের জ্বালানি পুনর্গঠনে রাশিয়া—যুদ্ধোত্তর পুনরুদ্ধারে মস্কো প্রধান অংশীদার হতে পারে আফগানিস্তানে মাদকবিরোধী কঠোর অভিযান—আসক্তি, ধর্মীয় উপদেশ ও পুনর্বাসনের নতুন বাস্তবতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৪৩)

পশ্চিমা শিক্ষার্থীদের থিসিস ও প্রবন্ধ লিখে দেয়া কেনিয়ার তরুণদের অদৃশ্য শিল্প

কেনিয়ার কয়েক হাজার তরুণ প্রতিদিন লিখছেন প্রবন্ধ, থিসিস ও গবেষণাপত্র—যা জমা পড়ছে পশ্চিমা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের নামে। তাদের ঘাম আর মেধা বাঁচাচ্ছে ধনী দেশের শিক্ষার্থীদের সময়, অথচ স্বীকৃতি বা সম্মান মিলছে না। শিক্ষা ও অর্থনীতির বৈষম্যই টিকিয়ে রেখেছে এই গোপন শিল্পকে।

অদৃশ্য এক বৈশ্বিক ব্যবসা

পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী আছেন যারা নিজেরা প্রবন্ধ, গবেষণা বা থিসিস লেখেন না। তারা কাজ দেন একদল “ঘোস্টরাইটার”-কে। সবচেয়ে বড় ঘাঁটি কেনিয়া। অনুমান করা হয়, প্রায় ৪০ হাজার উচ্চশিক্ষিত কেনিয়ান তরুণ-তরুণী এই অদৃশ্য শিল্পে কাজ করছেন।

তাদের কাজের ধরন গোপন। ক্লায়েন্টরা সাধারণত ইন্টারনেটভিত্তিক প্ল্যাটফর্মে যোগাযোগ করে। একজন ছাত্রের অনুরোধে কোনো প্রবন্ধ তৈরি হলে, সেটি শিক্ষার্থী নিজের নামে জমা দেয়। ফলে একাডেমিক সনদ অর্জন হয় অন্যের শ্রম দিয়ে, অথচ লেখকের নাম থাকে অজানা।

কেনিয়ার প্রেক্ষাপট : শিক্ষিত কিন্তু বেকার

কেনিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী পাশ করলেও সবার জন্য চাকরি নেই। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে যুব বেকারত্বের হার ৩৫ শতাংশের কাছাকাছি। বিশেষত শহরাঞ্চলে শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে হতাশা প্রবল।

Patricia Kingori sits in an armchair and speaks into a phone

অনেকেই বাধ্য হয়ে বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ খুঁজছেন। এ সময় ইন্টারনেটভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং কিংবা একাডেমিক ঘোস্টরাইটিং হয়ে উঠেছে সবচেয়ে কার্যকর আয়ের উৎস। কেনিয়ার শক্তিশালী ইংরেজি দক্ষতাই তাদের এ শিল্পে এগিয়ে দিয়েছে।

গবেষকের দৃষ্টি : সমস্যার গভীরতা

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক প্যাট্রিসিয়া কিংরি দীর্ঘ গবেষণার পর বিষয়টি সামনে আনেন। তাঁর নির্মিত চ্যানেল ফোরের প্রামাণ্যচিত্র The Shadow Scholars সাড়া তোলে।

কিংরির মতে, এটি কেবল প্রতারণা নয়; বরং শিক্ষা ব্যবস্থার বৈষম্য ও শ্রমের অবমূল্যায়নের প্রতিফলন। পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অর্থ দিয়ে সহজে সনদ অর্জন করছে, অথচ কেনিয়ার লেখকরা সারাজীবন ছায়ায় থেকে যাচ্ছেন।

পশ্চিমা শিক্ষার্থীদের নির্ভরশীলতা

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২৫ শতাংশ এবং ব্রিটেনের প্রায় ১১ শতাংশ শিক্ষার্থী অন্তত একবার এই ধরনের সেবা নিয়েছে। যদিও এটি স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে করা জরিপ, তাই প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

Four men, one in a graduation cap and gown, walk along a street

একজন ব্রিটিশ শিক্ষার্থী গোপনে বলেন, “আমার পড়াশোনার চাপ সামলানো কঠিন হয়ে উঠেছিল। অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেখে কেনিয়ার এক লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এক সপ্তাহের মধ্যে ৫ হাজার শব্দের প্রবন্ধ তৈরি করে দিল।”

এমন অভিজ্ঞতা অনেকের। কেউ এটিকে সুবিধা হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ একে নৈতিক সংকট হিসেবে স্বীকার করেছেন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগেও টিকে থাকা

এখন ChatGPT বা অনুরূপ এআই টুল সহজলভ্য। তবুও কেনিয়ান লেখকদের গুরুত্ব কমেনি। কারণ, তারা দাবি করেন, তাদের লেখা “এআই-প্রুফ”—অর্থাৎ মৌলিক ও মানবসুলভ।

একজন লেখক জানান, “আমরা জমা দেওয়ার আগে সফটওয়্যারে নিজেই লেখা পরীক্ষা করি। ফলে প্লেজারিজম বা এআই-সনাক্তকরণের ঝুঁকি থাকে না।”

মূল্যের তারতম্যও রয়েছে। একটি ছোট প্রবন্ধের জন্য গড়ে ২০ পাউন্ড, মাস্টার্স থিসিসের জন্য ২০০–৫০০ পাউন্ড, আর পিএইচডি থিসিসের জন্য ১০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত খরচ পড়ে। বিশেষ করে চিকিৎসা ও বিজ্ঞানের গবেষণায় মূল্য আরও বেশি।

আইনি উদ্যোগ : সীমিত প্রভাব

Call to vet YouTube ads like regular TV to stop scams

২০২২ সালে ব্রিটেনে আইন করে এসব প্রতারণামূলক সেবার বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হয়। গুগল ও ইউটিউব কিছু বিজ্ঞাপন বন্ধ করলেও পুরোপুরি রোধ করা যায়নি। বিজ্ঞাপনগুলো প্রায়ই “স্টাডি হেল্প” বা “অ্যাকাডেমিক সাপোর্ট” নামে ছদ্মবেশে প্রচারিত হয়।

কিছু বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেছে, যেমন ওপেন-বুক পরীক্ষা বা মৌখিক পরীক্ষা। আবার সফটওয়্যার ব্যবহার শুরু করেছে। তবুও কার্যকর নজরদারি না থাকায় প্রতারণা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।

কেনিয়ান তরুণদের অভিজ্ঞতা

নাইরোবির ২৯ বছর বয়সী মার্সি, একজন সিঙ্গেল মাদার, প্রতিদিন প্রায় ৮–১০ হাজার শব্দ লিখেন। তিনি বলেন, “আমার ছেলে স্কুলে যায় এই আয়ের টাকায়। কিন্তু এই কাজের কারণে আমার দিন-রাত এক হয়ে যায়।”

আরেক তরুণ জোসেফ বলেন, “আমি মাসে প্রায় ১,২০০ পাউন্ড আয় করি। যা আমার দেশে একজন চিকিৎসকের সমান। কিন্তু আমি জানি, বিদেশের শিক্ষার্থী আমার লেখা দিয়ে ডিগ্রি নিচ্ছে, অথচ আমার কাছে সে সুযোগ নেই।”

এই অভিজ্ঞতাই দেখায়, আয় থাকলেও সম্মান ও ন্যায্যতা অনুপস্থিত।

A young woman sits at a table in a library at the end of two rows of books

বৈশ্বিক উচ্চশিক্ষা বাজারের দ্বন্দ্ব

বিশ্বায়নের ফলে শিক্ষা বাজারও বাণিজ্যিক হয়ে উঠেছে। ধনী দেশের শিক্ষার্থীরা অর্থ খরচ করে সময় বাঁচাচ্ছেন, আর দরিদ্র দেশের তরুণরা শ্রম দিচ্ছেন অস্বীকৃতভাবে।

এ এক ধরনের জ্ঞানভিত্তিক বৈষম্য। পুঁজির আধিপত্য শিক্ষার ক্ষেত্রেও সুযোগের ব্যবধান বাড়াচ্ছে। কেনিয়ার লেখকরা বৈশ্বিক জ্ঞান উৎপাদনে অবদান রাখলেও স্বীকৃতি পাচ্ছেন না।

ভবিষ্যৎ : সমাধান নাকি গভীরতর সংকট?

অধ্যাপক কিংরির মতে, যদি বৈশ্বিক শিক্ষা ব্যবস্থা সমতা নিশ্চিত করতে না পারে, তবে এ ধরনের অদৃশ্য শিল্প আরও বিস্তার লাভ করবে। একদিকে শিক্ষার্থীদের শেখার আগ্রহ কমবে, অন্যদিকে শ্রমজীবী লেখকরা থেকে যাবেন অচেনা ছায়ায়।

শেষ পর্যন্ত প্রশ্ন থেকে যায়—শিক্ষা কি কেবল ধনী দেশের শিক্ষার্থীদের বিশেষাধিকার হয়ে দাঁড়াবে, নাকি সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে?

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যুৎ রপ্তানি চুক্তির নবায়ন প্রক্রিয়া শুরু ভারতের

পশ্চিমা শিক্ষার্থীদের থিসিস ও প্রবন্ধ লিখে দেয়া কেনিয়ার তরুণদের অদৃশ্য শিল্প

০৬:২৫:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কেনিয়ার কয়েক হাজার তরুণ প্রতিদিন লিখছেন প্রবন্ধ, থিসিস ও গবেষণাপত্র—যা জমা পড়ছে পশ্চিমা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের নামে। তাদের ঘাম আর মেধা বাঁচাচ্ছে ধনী দেশের শিক্ষার্থীদের সময়, অথচ স্বীকৃতি বা সম্মান মিলছে না। শিক্ষা ও অর্থনীতির বৈষম্যই টিকিয়ে রেখেছে এই গোপন শিল্পকে।

অদৃশ্য এক বৈশ্বিক ব্যবসা

পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী আছেন যারা নিজেরা প্রবন্ধ, গবেষণা বা থিসিস লেখেন না। তারা কাজ দেন একদল “ঘোস্টরাইটার”-কে। সবচেয়ে বড় ঘাঁটি কেনিয়া। অনুমান করা হয়, প্রায় ৪০ হাজার উচ্চশিক্ষিত কেনিয়ান তরুণ-তরুণী এই অদৃশ্য শিল্পে কাজ করছেন।

তাদের কাজের ধরন গোপন। ক্লায়েন্টরা সাধারণত ইন্টারনেটভিত্তিক প্ল্যাটফর্মে যোগাযোগ করে। একজন ছাত্রের অনুরোধে কোনো প্রবন্ধ তৈরি হলে, সেটি শিক্ষার্থী নিজের নামে জমা দেয়। ফলে একাডেমিক সনদ অর্জন হয় অন্যের শ্রম দিয়ে, অথচ লেখকের নাম থাকে অজানা।

কেনিয়ার প্রেক্ষাপট : শিক্ষিত কিন্তু বেকার

কেনিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী পাশ করলেও সবার জন্য চাকরি নেই। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে যুব বেকারত্বের হার ৩৫ শতাংশের কাছাকাছি। বিশেষত শহরাঞ্চলে শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে হতাশা প্রবল।

Patricia Kingori sits in an armchair and speaks into a phone

অনেকেই বাধ্য হয়ে বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ খুঁজছেন। এ সময় ইন্টারনেটভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং কিংবা একাডেমিক ঘোস্টরাইটিং হয়ে উঠেছে সবচেয়ে কার্যকর আয়ের উৎস। কেনিয়ার শক্তিশালী ইংরেজি দক্ষতাই তাদের এ শিল্পে এগিয়ে দিয়েছে।

গবেষকের দৃষ্টি : সমস্যার গভীরতা

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক প্যাট্রিসিয়া কিংরি দীর্ঘ গবেষণার পর বিষয়টি সামনে আনেন। তাঁর নির্মিত চ্যানেল ফোরের প্রামাণ্যচিত্র The Shadow Scholars সাড়া তোলে।

কিংরির মতে, এটি কেবল প্রতারণা নয়; বরং শিক্ষা ব্যবস্থার বৈষম্য ও শ্রমের অবমূল্যায়নের প্রতিফলন। পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অর্থ দিয়ে সহজে সনদ অর্জন করছে, অথচ কেনিয়ার লেখকরা সারাজীবন ছায়ায় থেকে যাচ্ছেন।

পশ্চিমা শিক্ষার্থীদের নির্ভরশীলতা

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২৫ শতাংশ এবং ব্রিটেনের প্রায় ১১ শতাংশ শিক্ষার্থী অন্তত একবার এই ধরনের সেবা নিয়েছে। যদিও এটি স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে করা জরিপ, তাই প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

Four men, one in a graduation cap and gown, walk along a street

একজন ব্রিটিশ শিক্ষার্থী গোপনে বলেন, “আমার পড়াশোনার চাপ সামলানো কঠিন হয়ে উঠেছিল। অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেখে কেনিয়ার এক লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এক সপ্তাহের মধ্যে ৫ হাজার শব্দের প্রবন্ধ তৈরি করে দিল।”

এমন অভিজ্ঞতা অনেকের। কেউ এটিকে সুবিধা হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ একে নৈতিক সংকট হিসেবে স্বীকার করেছেন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগেও টিকে থাকা

এখন ChatGPT বা অনুরূপ এআই টুল সহজলভ্য। তবুও কেনিয়ান লেখকদের গুরুত্ব কমেনি। কারণ, তারা দাবি করেন, তাদের লেখা “এআই-প্রুফ”—অর্থাৎ মৌলিক ও মানবসুলভ।

একজন লেখক জানান, “আমরা জমা দেওয়ার আগে সফটওয়্যারে নিজেই লেখা পরীক্ষা করি। ফলে প্লেজারিজম বা এআই-সনাক্তকরণের ঝুঁকি থাকে না।”

মূল্যের তারতম্যও রয়েছে। একটি ছোট প্রবন্ধের জন্য গড়ে ২০ পাউন্ড, মাস্টার্স থিসিসের জন্য ২০০–৫০০ পাউন্ড, আর পিএইচডি থিসিসের জন্য ১০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত খরচ পড়ে। বিশেষ করে চিকিৎসা ও বিজ্ঞানের গবেষণায় মূল্য আরও বেশি।

আইনি উদ্যোগ : সীমিত প্রভাব

Call to vet YouTube ads like regular TV to stop scams

২০২২ সালে ব্রিটেনে আইন করে এসব প্রতারণামূলক সেবার বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হয়। গুগল ও ইউটিউব কিছু বিজ্ঞাপন বন্ধ করলেও পুরোপুরি রোধ করা যায়নি। বিজ্ঞাপনগুলো প্রায়ই “স্টাডি হেল্প” বা “অ্যাকাডেমিক সাপোর্ট” নামে ছদ্মবেশে প্রচারিত হয়।

কিছু বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেছে, যেমন ওপেন-বুক পরীক্ষা বা মৌখিক পরীক্ষা। আবার সফটওয়্যার ব্যবহার শুরু করেছে। তবুও কার্যকর নজরদারি না থাকায় প্রতারণা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।

কেনিয়ান তরুণদের অভিজ্ঞতা

নাইরোবির ২৯ বছর বয়সী মার্সি, একজন সিঙ্গেল মাদার, প্রতিদিন প্রায় ৮–১০ হাজার শব্দ লিখেন। তিনি বলেন, “আমার ছেলে স্কুলে যায় এই আয়ের টাকায়। কিন্তু এই কাজের কারণে আমার দিন-রাত এক হয়ে যায়।”

আরেক তরুণ জোসেফ বলেন, “আমি মাসে প্রায় ১,২০০ পাউন্ড আয় করি। যা আমার দেশে একজন চিকিৎসকের সমান। কিন্তু আমি জানি, বিদেশের শিক্ষার্থী আমার লেখা দিয়ে ডিগ্রি নিচ্ছে, অথচ আমার কাছে সে সুযোগ নেই।”

এই অভিজ্ঞতাই দেখায়, আয় থাকলেও সম্মান ও ন্যায্যতা অনুপস্থিত।

A young woman sits at a table in a library at the end of two rows of books

বৈশ্বিক উচ্চশিক্ষা বাজারের দ্বন্দ্ব

বিশ্বায়নের ফলে শিক্ষা বাজারও বাণিজ্যিক হয়ে উঠেছে। ধনী দেশের শিক্ষার্থীরা অর্থ খরচ করে সময় বাঁচাচ্ছেন, আর দরিদ্র দেশের তরুণরা শ্রম দিচ্ছেন অস্বীকৃতভাবে।

এ এক ধরনের জ্ঞানভিত্তিক বৈষম্য। পুঁজির আধিপত্য শিক্ষার ক্ষেত্রেও সুযোগের ব্যবধান বাড়াচ্ছে। কেনিয়ার লেখকরা বৈশ্বিক জ্ঞান উৎপাদনে অবদান রাখলেও স্বীকৃতি পাচ্ছেন না।

ভবিষ্যৎ : সমাধান নাকি গভীরতর সংকট?

অধ্যাপক কিংরির মতে, যদি বৈশ্বিক শিক্ষা ব্যবস্থা সমতা নিশ্চিত করতে না পারে, তবে এ ধরনের অদৃশ্য শিল্প আরও বিস্তার লাভ করবে। একদিকে শিক্ষার্থীদের শেখার আগ্রহ কমবে, অন্যদিকে শ্রমজীবী লেখকরা থেকে যাবেন অচেনা ছায়ায়।

শেষ পর্যন্ত প্রশ্ন থেকে যায়—শিক্ষা কি কেবল ধনী দেশের শিক্ষার্থীদের বিশেষাধিকার হয়ে দাঁড়াবে, নাকি সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে?